Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪
উদ্যোগ কৃষি দফতরের

পাটবীজের সন্ধান রাজনগরে

পাটচাষের মানচিত্রে দ্রুত ঠাঁই পেতে চলেছে এই জেলাও। তবে তন্তু বা আঁশ পেতে নয়, উন্নতমানের পাটবীজের সন্ধান দিতে রাজ্যের অন্যতম আদর্শ ঠিকানা হতে চলেছে রাজনগর ব্লক।

হরিপুরের জমিতে পাটের বীজ। —নিজস্ব চিত্র

হরিপুরের জমিতে পাটের বীজ। —নিজস্ব চিত্র

দয়াল সেনগুপ্ত
শেষ আপডেট: ০৭ নভেম্বর ২০১৬ ০০:৪৯
Share: Save:

পাটচাষের মানচিত্রে দ্রুত ঠাঁই পেতে চলেছে এই জেলাও।

তবে তন্তু বা আঁশ পেতে নয়, উন্নতমানের পাটবীজের সন্ধান দিতে রাজ্যের অন্যতম আদর্শ ঠিকানা হতে চলেছে রাজনগর ব্লক। পরীক্ষামূলক চাষে সফল হওয়ার পরে এমনটাই দাবি জেলা কৃষি দফতরের।

জেলার দুই সহ-কৃষি অধিকর্তা (সিড সার্টিফিকেশন) সুখেন্দুবিকাশ সাহা এবং প্রসেনজিৎ দে-র বক্তব্য, ‘‘শংসিত পাট বীজ উৎপাদনের জন্য রাজনগর ব্লকের দু’টি মৌজা এবং জেলার কিছু সরকারি কৃষি খামার মিলিয়ে মোট তিন হেক্টর জমি চিহ্নিত করা হয়েছিল। রাজনগর ব্লকে দু’ হেক্টর জমি থেকে যে মানের পাটবীজ পাওয়া যাবে বলে আশা করা হচ্ছে, তা এলাকার কৃষি অর্থনীতিতে ভিন্ন মাত্রা যোগ করতে চলেছে।’’

দফতর সূত্রের খবর, গত সেপ্টেম্বরে রাজনগরের হরিপুর ও কূশকর্ণিকা নদী ঘেঁষা দু’টি মৌজা ও ইচ্ছুক চাষিদের চিহ্নিত করে পাট লাগানো হয়েছিল। প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে চাষিদের ‘বিডার সিড’ (অর্থাৎ পরিবর্ধক বীজ) বিলি করা হয়। আশাতীত ফসল হয়েছে বলে দফতরের কর্তাদের দাবি। নভেম্বরের শেষ থেকে ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহের মধ্যেই ফসল তোলা হবে। ওই দুই আধিকারিক জানাচ্ছেন, পাটবীজ পেতে এ রাজ্যের চাষিদের মূলত দক্ষিণ ভারতের কেরল, অন্ধ্রপ্রদেশ, তামিলনাড়ুর উপর নির্ভর করতে হয়। কারণ, যে যে এলাকায় পাট চাষ হয়, সেখানকার জলবায়ু ও ভৌগোলিক অবস্থান তন্তু বা আঁশ পাওয়ার জন্য আদর্শ হলেও বীজ উৎপাদনের জন্য মোটেও আদর্শ নয়। বাইরে থেকে বীজ আনতে হয় বলে খরচও তুলনামূলক ভাবে বেশি পড়ে।

রাজনগরকেই বাছা হল কেন?

কীভাবে এ রাজ্যেও পাটবীজ উৎপাদিত হতে পারে, তা নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা চলছে। সঠিক মানের পাটবীজ পাওয়ার প্রথম শর্তই এমন এমন জমি বাছা, যেখানে বৃষ্টির জল দাঁড়ায় না। সেই শর্ত মেনে ইতিমধ্যেই বাঁকুড়া ও পুরুলিয়া জেলায় পাটবীজ উৎপাদনের জন্য পরীক্ষামূলক চাষ শুরু হয়েছে। বীরভূমের রাজনগরে এমন জমির পরিমাণ প্রচুর। যেখানে বর্ষায় ধান চাষই হয়নি। অনাবাদী হয়ে পড়ে থাকে। তেমন জমিতে পাটবীজের মতো সংশিত বীজ যেমন পাওয়া যাবে, তেমনই এলাকার চাষিরা লাভের মুখ দেখবেন। সেই কারণেই রাজনগরের কথা ভাবা হয়েছিল, জানাচ্ছে কৃষি দফতর।

হরিপুরের দুই চাষি রামকুমার মাজি এবং রামপদ মিস্ত্রি। দু’জনেই কমবেশি সাড়ে তিন বিঘা করে মোট এক হেক্টর জমিতে এ বার পাট লাগিয়েছেন। উচ্ছ্বসিত হয়ে তাঁরা বলছেন, ‘‘এই প্রথম পাট চাষ করলাম। বছরের এই সময়টায় জমি সত্যিই পড়ে থাকত। সেখানে যে পরিমাণ ফসল হয়েছে, তাতে এক হেক্টর জমি থেকে প্রায় দেড় কুইন্ট্যাল পাটবীজ মিলবে। যার বাজারদর ১৫০০ টাকা প্রতি কিলোগ্রাম।’’

চাষিরা জানাচ্ছেন, বীজ কৃষি দফতর দিয়েছিল। জমি তৈরি, সার দেওয়া— সব মিলে হেক্টর প্রতি আট হাজার টাকা খরচ হয়েছিল। ফুল আসার সময় একটি সেচ দিতে পারলে এবং ক্ষতিকারক পোকার আক্রমণ সামলে দিতে পারলে সফল না হওয়ার কারণ নেই বলেই মত চাষি এবং কৃষি বিশেষজ্ঞদের।

জেলা সিড সার্টিফিকেশন সূত্রের খবর, উৎপাদিত বীজ বিক্রি নিয়েও ভাবতে হবে না চাষিদের। কারণ যখনই সংশিত বীজের জন্য উৎপাদন হয়, তখন সেটা হয় রাজ্য বীজ সার্টিফিকেশন অনুমোদিত কোনও এজেন্সির তত্ত্বাবধানে। রাজনগরেরর হরিপুরে চাষ হয়েছে বর্ধমানের ‘সর্বমঙ্গলা’ নামে একটি এমনই সমবায় মারফত। সঙ্গে মিলবে প্রতি কিলোগ্রাম উৎপাদিত বীজের পরিমাণ অনুযায়ী ভর্তুকিও।

অন্য বিষয়গুলি:

Jute harvest seed Rajnagar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE