বৈঠক: জেলা পরিষদের অডিটোরিয়ামে। নিজস্ব চিত্র
গত বছর ১২ সেপ্টেম্বর শপথ নিয়েছিলেন পুরুলিয়া জেলা পরিষদের সভাধিপতি। এ বছর ১২ সেপ্টেম্বর, বৃহস্পতিবার গঠিত হল জেলা পরিষদের স্থায়ী সমিতি। জেলা পরিষদে তৃণমূলের সদস্য রয়েছেন ২৮ জন। ঘুরিয়ে ফিরে তাঁরাই ন’টি স্থায়ী সমিতির ৪৫ জন সদস্যের দায়িত্ব সামলাবেন। অতিরিক্ত জেলাশাসক (জেলা পরিষদ) দীনেশচন্দ্র মণ্ডল জানান, ভোটাভুটি হয়নি। বিরোধী সদস্যেরা থাকলেও, শাসকদলের পাল্টা ‘প্যানেল’ আসেনি।
বছর খানেক ধরে ঝুলে থাকা স্থায়ী সমিতি নিয়ে গত এক মাসে তৃণমূলের অন্দরে বিস্তর জলঘোলা হয়েছে। সব থেকে বেশি টানাটানি হয়েছে পূর্তকার্য ও পরিবহণ স্থায়ী সমিতির কর্মাধ্যক্ষের পদ নিয়ে। স্থায়ী সমিতির সদস্য সংখ্যা পাঁচ জন। পূর্তকার্যে কর্মাধ্যক্ষ পদেরই দাবিদার ছিলেন আট জন। জল গড়াতে গড়াতে অগস্টের শেষে পৌঁছেছিল তৃণমূলের দুই জেলা পর্যবেক্ষক মলয় ঘটক ও শুভেন্দু অধিকারী পর্যন্ত। তাঁরা নির্দেশ দিয়েছিলেন, জেলা থেকে নাম পাঠাতে। শেষ পর্যন্ত শান্তিরামবাবু দাবি করেছেন, জেলা থেকে কোনও নাম পাঠানো হয়নি। রাজ্য থেকেই এসেছে। আর সেই তালিকায় এ দিন দেখা গিয়েছে, কর্মাধ্যক্ষ পদের আট জন দাবিদারের মধ্যে তিন জনের নাম রয়েছে পূর্তকার্য স্থায়ী সমিতিতে।
ভোটাভুটির কোনও সম্ভাবনা না থাকলেও, তৃণমূলের তরফে সমস্ত সদস্যদেরই বুধবার থেকে পুরুলিয়া শহরের একটি হোটেলে রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। বৃহস্পতিবার সেই হোটেল থেকে সবাই জেলা অফিসে পৌঁছন। সেখান থেকে জেলা পরিষদের অডিটোরিয়ামে। বেশ বড় একটি খাম নিয়ে জেলা পরিষদে হাজির হন পর্যবেক্ষকের প্রতিনিধি। তুলে দেন শান্তিরাম মাহাতোর হাতে। প্রেক্ষাগৃহে উপস্থিত বিধায়ক স্বপন বেলথরিয়া, শক্তিপদ মাহাতো, উমাপদ বাউড়ি, সহ-সভাধপতি প্রতিমা সোরেন ও বিভিন্ন পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতিরা এক-একটি স্থায়ী সমিতির জন্য পাঁচ জন করে সদস্যের নাম প্রস্তাব করেন। উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলাশাসক (উন্নয়ন) ইন্দ্রনীল মুখোপাধ্যায়।
পূর্তকার্য স্থায়ী সমিতির হাত দিয়ে বিভিন্ন নির্মাণ ও রাস্তাঘাট তৈরির জন্য অনেক খরচ হয়। এ বার ওই সমিতিতে রয়েছেন হুড়ার সৌমেন বেলথরিয়া, পুরুলিয়া ২ ব্লকের হলধর মাহাতো, পুরুলিয়া ১ ব্লকের মীরা বাউড়ি, বাঘমুণ্ডির নমিতা সিংহ মুড়া এবং সাঁতুড়ির নির্মল রাউত। হলধরবাবুর অনুগামীরা বলছেন, গতবার জেলা পরিষদের দলনেতা ছিলেন সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনিই পূর্তকার্যের কর্মাধ্যক্ষ হয়েছিলেন। সেই সূত্রে এ বার হলধরবাবুর ভাগ্যে শিকে ছেঁড়ার আশা দেখছেন তাঁরা। আবার জেলা পরিষদের সভাধিপতির দৌড়ে সৌমেন বেলথরিয়ার নাম শোনা গিয়েছিল। তিনিও পদ পেতে পারেন বলে আশা সৌমেনের অনুগামীদের। ‘বাউড়ি সমাজের’ মন জয় করতে মীরাদেবীকে পদ দেওয়া হয় কি না, সেই জল্পনাও রয়েছে দলের অন্দরে।
খাদ্য স্থায়ী সমিতিতে রয়েছেন শান্তিরামবাবুর ভাইপো জয়পুর থেকে জিতে আসা মেঘদূত মাহাতো। রয়েছেন রঘুনাথপুর ২ থেকে বিজেপির টিকিটে জিতে পরে তৃণমূলে আসা লিপিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, পুরুলিয়া ১ ব্লকের নিবেদিতা মাহাতো, নিতুড়িয়ার সরিতা তুরি এবং পাড়ার মনোজ সাহাবাবু। ওই স্থায়ী সমিতির কর্মাধ্যক্ষ কে হন, তা নিয়েও চলছে নানা জল্পনা।
সভাধিপতি সবাইকে নিয়ে চলার কথা বললেও আদপে তা হচ্ছে না বলে এ দিকে অভিযোগ করছেন বিরোধী দলের সদস্যেরা। জেলা পরিষদে বিরোধী দলনেতা বিজেপির অজিত বাউড়ি বলেন, ‘‘স্থায়ী সমিতি গঠন হল। দেখলাম, বিরোধী দল হিসেবে আমাদের কোনও ভূমিকা ছিল না। মানুষ আমদের নির্বাচিত করেছেন, তাই দায়বদ্ধতা থেকে আমরা এসেছি। জনগণের কল্যাণে কাজ না হলে আমরা বিরোধিতা করব।’’ কংগ্রেসের সদস্য রাজীব সাহু বলছেন, ‘‘আমরা বিরোধীদেরও স্থায়ী সমিতিতে রাখার কথা বলেছিলাম। সেটা হল না। আশা করি, উন্নয়নের ব্যাপারে পক্ষপাত করা হবে না।’’
সভাধিপতি সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য বিরোধীদের অভিযোগ উড়িয়ে বলছেন, ‘‘কে বলেছে বিরোধীদের গুরুত্ব নেই? পঞ্চায়েত আইনে যা লেখা রয়েছে, সেই মোতাবেক বিরোধীরা জেলা পরিষদ পরিচালনার কাজকর্মে নিশ্চয় সুযোগ পাবেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy