মঞ্চে: পুরস্কার নিচ্ছেন সমবায়ের প্রতিনিধিরা। নিজস্ব চিত্র
সেরার শিরোপা এল পুরুলিয়ার জয়পুর ব্লকের জয়পুর সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতির ঘরে। এলাকার সমস্ত স্তরের মানুষকে বহুমুখী পরিষেবা দেওয়ার জন্য ‘প্রাথমিক সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতি’ বিভাগে সেটিকে শ্রেষ্ঠ বলে ঘোষণা করেছে রাজ্য সমবায় দফতর। সম্প্রতি কলকাতার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে রাজ্য সমবায় দফতর একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল। সেই মঞ্চে পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়েছে সমবায়ের প্রতিনিধিদের হাতে।
জয়পুর সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতির পথ চলা শুরু ১৯৭৬ সালের ডিসেম্বরে। প্রাথমিক ভাবে লক্ষ্য ছিল, কৃষিজীবী মানুষজনের আর্থিক অবস্থার উন্নয়ন। তার জন্য সবার আগে টাকাটাই দরকার। আসবে কোথা থেকে?
সমিতির ম্যানেজার সুধীর হাজরা বলেন, ‘‘তখন তো আর আজকের মত সাড়ে তিন হাজার সদস্য নেই। সংখ্যাটা বড়জোর শ’খানেক।’’ তিনি জানান, জয়পুরের একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক চাষিদের ঋণ দিত। সমিতি ঋণ গ্রহীতার হয়ে গ্যারেন্টার থাকতে শুরু করল। ঋণ মেটালে সমিতির খাতায় শতকরা ২ টাকা করে জমা পড়ত। আর শোধ না করলে পুরো দায়টাই সমিতির।
বেশ কয়েক বছর চলেছিল এমনটা। একটু একটু করে পুঁজি জমে। জমা হয় অভিজ্ঞতাও। ১৯৯৮ সালে সমিতির নিজের ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থা চালু হয়। যুক্ত হয় পুরুলিয়া কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্কের সঙ্গে। সুধীরবাবু বলেন, ‘‘সেই সময়ে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলি যা সুদ দিত, আমরাও তাই দিতাম। কিন্তু তার পরেও ভরসা অর্জন করতে সময় লেগেছে।’’
এখন সময় চলে এসেছে কুড়ি বছর পার করে। এলাকার চাষিগের মধ্যে ওই ব্যাঙ্ক সম্পর্কে একটা বিশ্বাসযোগ্যতা গড়ে উঠেছে বলে জানাচ্ছেন সুধীরবাবু। তিনি বলেন, ‘‘ব্যাঙ্কের মূলধন আজ ১৫ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গিয়েছে। আমানতকারীর সংখ্যাও ছাড়িয়েছে ১৬ হাজার। জয়পুরের প্রায় ৯০ শতাংশ ঋণ এখন আমাদের ব্যাঙ্কেরই আওতায়।’’ এখন শিক্ষকদের মাইনে হয় এই ব্যাঙ্ক থেকে। বার্ধক্য ভাতা আসে এই ব্যাঙ্ক মারফত। বিধবা ভাতার টাকা আসে।
সমবায় সূত্রে জানা যাচ্ছে, ২০০৯ সালে শুরু হয়েছিল এলাকার মহিলাদের নিয়ে স্বনির্ভর দল গড়ে তোলার কাজ। সাড়াও মেলে। প্রশিক্ষণ, বিপণনের বন্দোবস্ত— ধাপে ধাপে হয় সবই। সুধীরবাবু জানান, প্রথমে শতাধিক মহিলা মহিলা ছিলেন। এখন সমিতির আওতায় থাকা স্বনির্ভর দলের সদস্য সংখ্যা আড়াই হাজার ছাড়িয়েছে। তাঁরা পোশাক সেলাই করেন। তৈরি করেন স্যানিটারি ন্যাপকিন, গুঁড়ো মশলা, খেলনা, স্কুলব্যাগ আরও হরেক কিছু। তিনি বলেন, ‘‘জয়পুরে আমাদের শপিং মলও তৈরি হয়েছে। জেলা শহরে রয়েছে বিপণন কেন্দ্র। স্বনির্ভর দলের মেয়েরাই সেটি চালাচ্ছেন।’’
আগামীর জন্য রয়েছে বেশ কিছু কাজ। জয়পুরে সমিতির তত্ত্বাবধানে গড়ে ওঠার কথা ১০ হাজার টনের গুদাম। সুধীরবাবু জানান, রাজ্য সরকার সেই জন্য ১০ কোটি ৪৪ লক্ষ ৩৩ হাজার টাকা দিয়েছে। জয়পুরে একটি আধুনিক চালকলও গড়ে তোলার ইচ্ছে রয়েছে তাঁদের।
জেলার সমবায়গুলির নিবন্ধক পিয়ালি সাহা বলেন, ‘‘এই সমবায় রাজ্যে সেরার স্বীকৃতি পেয়েছে। বিশেষ কয়েকটি ক্ষেত্রে অন্যদের তুলনায় তাঁরা অনেকটাই এগিয়ে।’’ তিনি জানাচ্ছেন, স্বনির্ভর দলের সদস্যদের বিমার আওতায় আনা, সদস্যদের সন্তান পরীক্ষায় ভাল ফল করলে সংবর্ধনা দেওয়া, জলপানি দেওয়া— এমন বিভিন্ন কিছুও করে সমবায়টি। পুরুলিয়ার জেলাশাসক অলকেশপ্রসাদ রায় বলেন, ‘‘গ্রামীণ অর্থনীতির ক্ষেত্রে খুবই ভাল কাজ করছেন ওঁরা।’’ রাজ্য সমবায় দফতরের অতিরিক্ত মুখ্যসচিব এম ভি রাও বলেন, ‘‘এই সমবায় রাজ্যের মধ্যে খুবই গুরুত্বপূর্ণ কাজ করছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy