Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪

চার দিনেই ভাতার কাগজ নিয়ে বাড়িতে বিডিও

শনিবার জিলিংটাঁড় গ্রামে সুমিতা মুর্মুর সঙ্গে দেখা হয়েছিল জেলাশাসকের। অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের বাইরে ছায়ায় খাটিয়া পেতে বসেছিলেন বৃদ্ধা। শরীরে অপুষ্টির ছাপ। সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারেন না। হাঁটতে হলে লাঠির জোর লাগে।

বৃদ্ধার কাছে বিডিও। নিজস্ব চিত্র

বৃদ্ধার কাছে বিডিও। নিজস্ব চিত্র

প্রশান্ত পাল
বাঘমুণ্ডি শেষ আপডেট: ২০ জুন ২০১৯ ০০:৫১
Share: Save:

অযোধ্যা পাহাড়ের জিলিংটাঁড় গ্রামে বৃদ্ধা সুমিতা মুর্মুর দিনগুলি হঠাৎ ঘটনাবহুল হয়ে উঠেছে। গত শনিবার হঠাৎ গাড়ি নিয়ে এক দল লোক এসেছিলেন তাঁর বাড়িতে। শুনেছিলেন, তাঁরা সহ প্রশাসনের বড় বড় কর্তা। বুধবার আবার বাড়িতে হাজির বিডিও। একটা কাগজ নিয়ে। এ বার থেকে মাসোহারা টাকা
পাবেন সুমিতা।

যে সমস্ত সুযোগসুবিধা মানুষের হকের পাওনা, লাল ফিতের ফাঁস ছাড়িয়ে দোরগোড়ায় সে সব পৌঁছে দিতে উদ্যোগী হয়েছেন পুরুলিয়ার জেলাশাসক রাহুল মজুমদার। প্রতিটি ব্লকের দায়িত্ব দিয়েছেন জেলার এক এক জন আধিকারিককে। এ বার থেকে তাঁরা নিয়মিত ব্লকে যাবেন। প্রশাসনের কর্তাদের সঙ্গে সমন্বয় রেখে প্রকল্প ধরে ধরে বিভিন্ন কাজের তদারক করবেন। শুক্রবার নিজে তিনি গিয়েছিলেন বাঘমুণ্ডিতে। বৈঠক করে রাতে থেকেছেন ব্লক অফিসে। সকালে বিভিন্ন গ্রামে ঘুরে দেখেছেন, বিভিন্ন প্রকল্পের সুযোগে কতটা সুবিধা হচ্ছে সাধারণ মানুষের বেঁচে থাকায়।

শনিবার জিলিংটাঁড় গ্রামে সুমিতা মুর্মুর সঙ্গে দেখা হয়েছিল জেলাশাসকের। অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের বাইরে ছায়ায় খাটিয়া পেতে বসেছিলেন বৃদ্ধা। শরীরে অপুষ্টির ছাপ। সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারেন না। হাঁটতে হলে লাঠির জোর লাগে। অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র পরিদর্শন সেরে বেরিয়ে বৃদ্ধাকে প্রশ্ন করেছিলেন, ‘‘বার্ধক্য ভাতা পান?’’ দেখা যায়, বার্ধক্য ভাতা কী, সেই ব্যাপারেই বিশেষ ওয়াকিবহাল নন তিনি। পড়শিরা জানান, বৃদ্ধার এক ছেলে রয়েছে। আর প্রতিবন্ধী এক মেয়ে। হতদরিদ্র পরিবার। কোনও ভাতার জন্য আবেদনই করেননি।

গাড়ি বেরিয়ে যায়। কী খেয়েছেন সকাল থেকে? জানতে চাওয়ায় বৃদ্ধা বলেন, ‘‘ভাতের মাড়। আর কি খাব?’’ জানা যায়, সেটাই মোটের উপর নিত্যদিনের জলখাবার তাঁর। সেই ঘটনার চার দিন পরে, বুধবার জিলিংটাঁড় গ্রামে গিয়েছিলেন বিডিও (বাঘমুণ্ডি) উৎপল দাস মুহুরী। আদিবাসী ভাতার অনুমোদনপত্র তুলে দেন তাঁর হাতে। বৃদ্ধা অবশ্য এ দিনও নির্বিকার ছিলেন। বিডিও বুঝিয়ে বলেন, এ বার ব্যাঙ্কে তাঁর নামে খাতা খোলা হবে। তাতে মাসে মাসে টাকা আসবে। বলেন, ‘‘এই কাগজটা ভাল করে রাখবেন।’’ সে কথা পড়শিরা আরও খোলসা করে বোঝান বৃদ্ধাকে। এত ক্ষণে হাসি ফোটে মুখে।

জেলাশাসক বলেন, ‘‘সে দিন পাহাড়ে গিয়ে ওই বৃদ্ধার সঙ্গে দেখা হয়েছিল। তিনি কোনও ভাতা পেতেন না। স্পেশ্যাল কেস হিসেবে তাঁর আবেদন রাজ্যে পাঠানো হয়েছিল।’’ তিনি জানান, অনুমোদন মিলেছে। এ বার থেকে প্রতি মাসে হাজার টাকা করে তফসিলি উপজাতি ভাতা পাবেন বৃদ্ধা। সুমিতা মুর্মুর মতো জেলার অনেক বৃদ্ধাই এখন প্রশাসনের এ হেন সক্রিয়তায় আশার আলো দেখছেন।

অন্য বিষয়গুলি:

Purulia DM Baghmundi
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy