Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪

আয় বেড়েছে আমার কুটিরের

তথ্যও বলছে, দিন যত এগিয়েছে আমার কুটিরের জৌলুস বেড়েছে। চর্মশিল্পের পাশাপাশি বাটিক-বুটিকের সমাহারে পূর্ণ আমার কুটিরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হয়ে উঠেছে ইতিহাস-সমৃদ্ধ সংগ্রহশালাও। যেখানে মূলত স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রেক্ষাপটে কিছু পুরনো আলোকচিত্র রয়েছে।

কারখানা: বল্লভপুরে। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী

কারখানা: বল্লভপুরে। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী

দেবস্মিতা চট্টোপাধ্যায়
শান্তিনিকেতন শেষ আপডেট: ১৪ জুলাই ২০১৮ ০৮:০০
Share: Save:

গত দু’বছরে বিক্রিবাটা বেড়েছে প্রায় দু’কোটি টাকা। আর ফি বছরে আয় বাড়ছে ২০ থেকে ২৫ শতাংশ হারে।

রাজ্যের বিভিন্ন স্থান থেকে শান্তিনিকেতনে পর্যটক হিসেবে আসেন, এমন মানুষের কাছে ‘আমার কুটির’ পরিচিত নাম। এক সময়ের জঙ্গলে-ভর্তি বল্লভপুরে ধীরে ধীরে লোকচক্ষুর আড়ালে তৈরি হয়েছিল এই কুটির। ক্রমে চর্মশিল্পের জন্য বিখ্যাত হয়ে বর্তমানে ‘আমার কুটির সোসাইটি ফর রুরাল ডেভলপমেন্ট’ রাজ্যের কুটিরশিল্প ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত হয়।

এমন প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক আয় বাড়ার ঘটনাকে তাৎপর্যপূর্ণ হিসেবেই দেখছেন অনেকে। এর চেয়ারম্যান অমিয় ঘোষ এবং ম্যানেজার তুফান সিংহ জানালেন, ২০১৫-১৬ অর্থবর্ষে বিক্রি হয়েছিল ৪.০৬ কোটি টাকার। পরের দুই অর্থবর্ষে যথাক্রমে ৫.৪৯ কোটি এবং ৬.০৩ কোটি টাকার বিক্রি হয়েছে। উৎকর্ষতা বজায় রেখেই এই সাফল্য— দাবি প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের।

তথ্যও বলছে, দিন যত এগিয়েছে আমার কুটিরের জৌলুস বেড়েছে। চর্মশিল্পের পাশাপাশি বাটিক-বুটিকের সমাহারে পূর্ণ আমার কুটিরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হয়ে উঠেছে ইতিহাস-সমৃদ্ধ সংগ্রহশালাও। যেখানে মূলত স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রেক্ষাপটে কিছু পুরনো আলোকচিত্র রয়েছে। শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় থেকে সুভাষচন্দ্র বসুর আমার কুটির পরিদর্শনের সচিত্র বর্ণনা ওই সংগ্রহশালায় রাখা হয়েছে। স্বাধীনতা সংগ্রামী সুষেণ মুখোপাধ্যায়ের উদ্যোগে গড়ে উঠেছিল এই কুটির। জেল থেকে মুক্তি পাওয়ার পরে আর এক স্বাধীনতা সংগ্রামী পান্নালাল দাশগুপ্তও এখানে থেকেই সমাজসেবার নানা কাজ চালিয়েছেন। তাঁর উদ্যোগেই তৈরি হয় ‘আমার কুটির সোসাইটি ফর রুরাল ডেভলপমেন্ট’।

সোসাইটির বর্তমান প্রশাসক বৈদ্যনাথ মুখোপাধ্যায় জানান, স্বাধীনতার আগে এই এলাকায় বেশ কয়েক’টি গ্রামে নৈশ স্কুল, লাঠি ও তির-ধনুক চালানোর প্রশিক্ষণ দেওয়া হত। এখনও সেই সাধারণ মানুষ, গ্রামবাসী নিয়েই কাজ করে চলেছে কুটির। ১৯৭৮ সালে শুরু হয় চাষাবাদ, পোল্ট্রি ও সুতিবস্ত্রের কাজ। পরে বিশ্বভারতীর শিল্পসদন থেকে পাস করা প্রথম ব্যাচের পড়ুয়ারা চর্মশিল্পের কাজ শুরু করেন। ১৯৯৫ সালে মিনিস্ট্রি অফ টেক্সটাইলের ক্র্যাফট ডেভলপমেন্ট সেন্টার হওয়ার পরে প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু হয়। আর ফিরে তাকাতে হয়নি সোসাইটিকে।

বর্তমানে ১০ কিলোমিটারের মধ্যে যে গ্রামগুলি রয়েছে, সেখানকার বেশির ভাগ স্বনির্ভর গোষ্ঠী আমার কুটিরের সঙ্গে যুক্ত। বছরের বিভিন্ন সময় তাঁদের প্রশিক্ষিত করা হয়। প্রায় ১০০ জন কর্মী এবং ৪০০ জন শিল্পী বছরভর উৎপাদন করে চলেছেন। ছুটি মাত্র একটা দিন, সুষেণ
মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যুদিন (২২ জ্যৈষ্ঠ)। প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান অমিয় ঘোষ এবং ম্যানেজার তুফান সিংহ জানালেন, বর্তমানে পর্যটক সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় বিক্রি বেড়েছে। প্রতি বছর ২০-২৫% করে বার্ষিক আয় বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্ষাকালে বৃক্ষরোপণের পাশাপাশি অন্যতম আকর্ষণ ‘মীনমঙ্গল’ উৎসব হয়। এই উৎসবে আমার কুটিরের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া শাল নদীতে মাছের চারা ফেলা হয়। মাছ চাষ করে কিছুটা আয় হয় গ্রামবাসীর।

পর্যটকদের আগে খাওয়ার অসুবিধা হতো। তাঁদের কথা মাথায় রেখে সম্প্রতি তৈরি হয়েছে ‘আমার কুটির হেঁশেল ঘর’। পর্যটক ছাড়াও এনআইডি, এনইএফটি, সিইপিটি থেকে বাটিক ও চর্মশিল্পের কাজ শিখতে আসছেন পড়ুয়ারা। তাতেও প্রসিদ্ধি বাড়ছে সোসাইটির। এই মুহূর্তে সেখা ধরে রাখাই একমাত্র লক্ষ্য বলে জানান আধিকারিকরা।

অন্য বিষয়গুলি:

Profit Self-help group
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE