ফাইল চিত্র।
চাকরি পেয়েছেন কোন সালে? ২০১১ সাল থেকে প্রাথমিকে নিয়োগপত্র পাওয়া শিক্ষকদের সম্পর্কে ইডি তথ্য তলব করায় নিকটজনদের কাছে এই প্রশ্নের মুখে পড়তে হচ্ছে অনেককে। যা বয়ে আনছে একরাশ অস্বস্তি।
শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় আদালতের নির্দেশে বাঁকুড়া জেলায় ১১ জন প্রাথমিক স্কুল শিক্ষকের চাকরি গিয়েছে। ২০১৪ সালের টেট উত্তীর্ণ হয়ে প্রাথমিকে নিযুক্ত এক শিক্ষকের ক্ষোভ “সমাজ যেন আমাদের অপরাধী বলে ধরে নিয়েছে। ব্যাঙ্ক ঋণ নিতে গিয়েছিলাম। ম্যানেজার চাকরিতে নিয়োগের সাল জেনে ঋণ দিতে চাইছেন না। বন্ধুবান্ধব-প্রতিবেশীরা কথায় কথায় বিদ্রুপ করছেন!’’
কিছু দিন আগে ওন্দার এক প্রাথমিক স্কুল শিক্ষকের মান যাচাই করতে ক্লাসরুমে ব্ল্যাকবোর্ডে তাঁকে অঙ্ক কষান স্থানীয় গ্রামবাসী।
বাঁকুড়ার মগরা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মুকেশ পাত্র, ইঁদপুরের জোড়দা নিউ মডেল স্কুলের প্রধান শিক্ষক চঞ্চল নাথ বলেন, “শিক্ষকদের পক্ষে খুবই অস্বস্তিকর পরিবেশ তৈরি হয়েছে। সর্বত্রই শিক্ষকদের মান যাচাইয়ের একটা চেষ্টা করছেন একশ্রেণির মানুষ। ইদানীং শিক্ষকদের নিয়ে রসিকতা যেন ‘সংস্কৃতি’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। নতুন প্রজন্মের শিক্ষকেরা মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত। এটা দেখে আমাদের ভাল লাগছে না।”
সমস্যা যে বেড়েছে, তা মানছেন ডান, বাম সমস্ত পক্ষের শিক্ষকেরাই। পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির বাঁকুড়া জেলা সভাপতি গৌতম দাসের মতে, “বাম আমলের শেষ দিকে শিক্ষকদের ফাঁকিবাজ বলে বিদ্রুপ করা হত। শিক্ষকদের আয় নিয়েও অনেকে প্রশ্ন তুলতেন। আর এখন নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তের জেরে শিক্ষকদের আরও তাচ্ছিল্যের শিকার হতে হচ্ছে। তাঁদের মানসিক ভাবে শক্ত হতে বলছি। ভাল কাজের মাধ্যমে নিজেদের প্রমাণ করতে হবে। এই পরিস্থিতি বেশিদিন স্থায়ী হবে না।’’
বামপন্থী শিক্ষক সংগঠন এবিটিএ-র জেলা সম্পাদক অস্মিতা দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘নতুন প্রজন্মের শিক্ষকেরা নিজেদের চাকরি নিয়ে ঘোর অনিশ্চয়তায় ভুগছেন। তার উপরে সামাজিক ক্ষেত্রে বিভিন্ন ভাবে প্রশ্নের মুখে পড়ায় আত্মবিশ্বাস বজায় রেখে কাজ করাটাই তাঁদের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্বচ্ছ্ব ভাবে নিয়োগ হলে এমন পরিস্থিতি হত না। রাজ্য সরকারকেই শিক্ষকদের মর্যাদা ফিরিয়ে দিতে পদক্ষেপ করতে হবে।”
বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে হতাশা প্রকাশ করছেন জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত তথা রাজ্যের শিক্ষারত্ন সম্মানপ্রাপ্ত রাইপুরের শিক্ষক জগবন্ধু মাহাতো বলেন, “শিক্ষকেরা জাতির মেরুদণ্ড। তাঁদের সম্মান-মর্যাদা নষ্ট হওয়াটা গোটা সমাজের জন্যই অশুভ ইঙ্গিত। সাধারণ মানুষেরও এই বিষয়টি ভেবে দেখা দরকার। দুর্নীতি মামলার তদন্ত চলছে। তা বলে সমস্ত শিক্ষকদেরই কাঠগড়ায় তোলা উচিত নয়।”
যদিও শিক্ষকদের প্রতি সম্মান পুরোপুরি নষ্ট হয়ে পড়ছে, তেমনটা মানতে নারাজ অবসরপ্রাপ্ত ও প্রবীণ শিক্ষকদের অনেকেই। (চলবে)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy