Advertisement
২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪

পুলিশকে গুলি, লুঠ দুষ্কৃতীকে

গরুর গাড়ি না যন্ত্রচালিত ভ্যান রিকশা— কয়লা পাচার করা হবে কীসে?অবৈধ কয়লা পাচারের সঙ্গে যুক্ত দুই সমাজবিরোধী গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘাত বেধেছিল তা নিয়েই। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে এক দুষ্কৃতীকে ধরলে আক্রান্ত হল পুলিশ।

নিজজ্ব সংবাদদাতা
কাঁকরতলা শেষ আপডেট: ০২ এপ্রিল ২০১৭ ০০:৫৩
Share: Save:

গরুর গাড়ি না যন্ত্রচালিত ভ্যান রিকশা— কয়লা পাচার করা হবে কীসে?

অবৈধ কয়লা পাচারের সঙ্গে যুক্ত দুই সমাজবিরোধী গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘাত বেধেছিল তা নিয়েই। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে এক দুষ্কৃতীকে ধরলে আক্রান্ত হল পুলিশ। বোমা ও গুলি চালিয়ে তাকে ছাড়িয়ে নিয়ে চলে গেল সঙ্গীরা। তাতেই গুলিবিদ্ধ হলেন এক পুলিশ কর্মী।

শুক্রবার রাত ১১টা নাগাদ ঘটনাটি ঘটেছে বীরভূমের কাঁকরতলা থানার বড়রা গ্রামে। অরূপ মান্না নামে আহত রাজ্য সশস্ত্র বাহিনীর ওই বর্তমানে দুর্গাপুরে একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসক। হাসপাতালের মেডিক্যাল অফিসার সন্তোষ ষড়ঙ্গি বলেন, ‘‘আহতের ডান উরুতে দু’টি ফুটো রয়েছে। গুলি ফুঁড়ে বেরিয়ে গিয়েছে। অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। অবস্থা এখন স্থিতিশীল।’’

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, অবৈধ কয়লা পাচারের পীঠস্থান খযরাশোল ব্লকের এই কাঁকরতলা অঞ্চল। এই থানা এলাকায় বেশ কিছু অবৈধ খাদান তো রয়েইছে। এ ছাড়াও অজয় পেরিয়ে বর্ধমানের চুরুলিয়া ও ‘দেশেরমোহান’ অবৈধ খাদান থেকে এবং লাগোয়া ঝাড়খণ্ড থেকে প্রচুর পরিমাণে পাচার হওয়া কয়লা এসে জড়ো করা হয় এলাকার বড়কোলা ঘাটে। তার পর তা ছড়িয়ে পড়ে নানা প্রান্তে। এবং পুলিশ-প্রশাসনের একাংশের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদতেই গোটা প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হয় বলে দীর্ঘ দিনের অভিযোগ।

এই অবৈধ কয়লা পাচারের নিয়ন্ত্রণ থাকে কাঁকরতলার সমাজবিরোধীদের হাতেই। বিশেষ ভাবে তৈরি মোষ বা গরুর গাড়িতে করে কয়লা পাচার হয়ে থাকে। অনেক কম পরিশ্রমে এবং দ্রুততার সঙ্গে পাচার সম্ভব বলে বর্তমানে যন্ত্রচালিত ভ্যান রিকশাও ব্যবহৃত হচ্ছে। দিনে প্রায় শ’খানেক এমন মোটরচালিত ভ্যান রিকশায় কয়লা পাচার চলছিল। সংঘাতের শুরু এখানেই। মূলত হাজার খানেকেরও বেশি গরুর গাড়ির ভবিষ্যৎ নষ্ট হচ্ছে, এই আপত্তি জানিয়ে পাচার চক্রের এক গোষ্ঠীর সঙ্গে আর এক গোষ্ঠীর উত্তাপ বাড়ছিল। শুক্রবার রাতে তা-ই চরমে ওঠে বলে অভিযোগ।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, কার হাতে থাকবে কয়লা পাচারের নিয়ন্ত্রণের রাশ, তা নিয়ে সংঘর্ষ বোমাবাজি, খুন লেগেই আছে এলাকায়। মাসকয়েক আগে খিলাফৎ-হত্যাকাণ্ডের পরে কয়লা কারবারের রাশ আসে সমাজবিরোধী কালো শেখ ওরফে আজফারের হাতে। পাচারে যুক্ত এক কয়লা কারবারির কথায়, ‘‘ঠিকই চলছিল সব কিছু। কিন্তু মাঝে কালোর গোষ্ঠী থেকে বেশ কিছু লোক বেরিয়ে গিয়ে বিরোধী গোষ্ঠী গড়ে তোলায় সমস্যা বাড়ে। কালোর বিরোধী পক্ষ চাইছিল যন্ত্রচালিত ভ্যান রিকশাতেই চলুক কয়লা।’’ এ নিয়েই ঘটনার রাতে বড়রা গ্রামে গোলমাল বাধে।

পুলিশ সূত্রের খবর, ঘটনার রাতে বড়রা গ্রামে কালো গোষ্ঠীর লোকেরা বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর এক সদস্যের বাড়ির সামনে বোমা ফাটায়। দুই গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষ বাধতে বসেছে, সেই খবর যায় পুলিশের কাছে। কাঁকরতলার ওসি পার্থসারথি মুখোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে জনা ১০-১২-র পুলিশ বাহিনী রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ বড়রায় যায়। ঘটনাস্থল থেকে কালোকে ধরে পুলিশ। তাকে ভ্যানে তোলার সময়ই পুলিশের উপরে চড়াও হয় কালোর অনুগামীরা। দেদার বোমা পড়ে, গুলি চলে। পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর হয়। তখনই গুলিবিদ্ধ হন ওই পুলিশকর্মী। শেষমেশ কালোকে ছাড়িয়ে নিয়ে যেতে সক্ষম হয় তার অনুগামীরা।

শনিবার সকালে ঘটনার তদন্তে এলাকায় যান জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গ্রামীণ) সুবিমল রায়। বর্তমানে এলাকায় বিশাল পুলিশ বাহিনী মোতায়েন রয়েছে। ফেরার কালো শেখ এবং তার সঙ্গীদের খোঁজ করছে পুলিশ।

বীরভূমের পুলিশ সুপার নীলকান্ত সুধীরকুমার বলেন, ‘‘ওই এলাকার কিছু সমাজবিরোধী কয়লা চুরি করে পয়সা রোজগার করে। তাদেরই দু’পক্ষের মধ্যে সংঘাত বাধার খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে বোমাবাজি হয়, গুলি চলে। তাতেই এক পুলিশ কর্মী গুলিবিদ্ধ হন।’’ তাঁর দাবি, কাঁকরতলা এলাকায় কোনও কয়লা পাচার হয় না। তাঁর আরও দাবি, ‘‘দিন কয়েক আগেই কয়লা চুরি করে বিক্রি করা রুখে দিয়েছিল পুলিশ। সেই আক্রোশ থেকেও হামলা হয়ে থাকতে পারে।’’ ঘটনায় কয়েক জনকে আটক করেছে পুলিশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Police Miscreants
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE