Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

খনি গড়তে জঙ্গল ধ্বংসের প্রতিবাদ 

সম্প্রতি খয়রাশোল ব্লকের গঙ্গারামচক মৌজায় পশ্চিমবঙ্গ বিদ্যুৎ উন্নয়ন নিগম খোলামুখ কয়লাখনি তৈরির জন্য ১০১ হেক্টর বনভূমি সাফাইয়ের কাজে হাত দিয়েছিল। প্রায় ৮০ শতাংশ গাছ কাটা হয়েও গিয়েছিল।

বার্তা: গ্রামবাসীর সঙ্গে কথা প্রতিনিধিদের। শনিবার। নিজস্ব চিত্র

বার্তা: গ্রামবাসীর সঙ্গে কথা প্রতিনিধিদের। শনিবার। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
খয়রাশোল শেষ আপডেট: ০৪ অগস্ট ২০১৯ ০২:৪২
Share: Save:

প্রাকৃতিক বনাঞ্চল ধ্বংস করে, আদিবাসীদের বিপন্ন করে কয়লাখনি নয়। খয়রাশোলের আদিবাসীদের এই আন্দোলনে আগেই সমর্থন জানিয়েছিল আদিবাসীদের দুটি সংগঠন, আদিবাসী গাঁওতা ও বীর বানচাও কমিটি। এবার সেই আন্দোলনের পাশে থাকার বার্তা দিল সেভ ডেমোক্রেসি ফোরাম।

শনিবার দুপুরে কলকাতা থেকে খয়রাশোলের দেবগঞ্জ ও বাস্তবপুর গ্রামে পৌঁছোন ফোরামের তিন প্রতিনিধি। সঙ্গে ছিলেন গাঁওতা নেতা সুনীল সরেন, মঙ্গল মারডিরা। ফোরামের সম্পাদক চঞ্চল চক্রবর্তী বলেন, ‘‘উন্নয়নের নামে গাছ কেটে আদিবাসী উচ্ছেদ চলবে না। কোপ নয় তাঁদের জীবন জীবিকায়। যৌথভাবে আন্দোলনে থাকবে আদিবাসী গাঁওতা ও আমাদের সংগঠন। এবার থেকে গাছে হাত পড়লে প্রতিরোধ হবে। খয়রাশোলের এই জ্বলন্ত ইস্যু নিয়ে সমাবেশ হবে কলকাতায়।’’

সম্প্রতি খয়রাশোল ব্লকের গঙ্গারামচক মৌজায় পশ্চিমবঙ্গ বিদ্যুৎ উন্নয়ন নিগম খোলামুখ কয়লাখনি তৈরির জন্য ১০১ হেক্টর বনভূমি সাফাইয়ের কাজে হাত দিয়েছিল। প্রায় ৮০ শতাংশ গাছ কাটা হয়েও গিয়েছিল। তখনই সমস্যার সূত্রপাত। কয়লাখনির জন্য বিস্তীর্ণ বনভূমি ধ্বংস করা হচ্ছে। এতে আঁচ পড়বে তাঁদের জীবন জীবিকায়- এই আশঙ্কা প্রকাশ করে জুলাইয়ের দ্বিতীয় সপ্তাহে বিডিওর কাছে একটি প্রতিবাদপত্র দেন। প্রস্তাবিত খনি এলাকা সংলগ্ন বাস্তবপুর, সগড়ভাঙ্গা, বেলডাঙা, ভাদুলিয়া গঙ্গারামচক, দেবগঞ্জ এলাকার আদিবাসীরা। বিশাল জমায়েত করে একই দাবিতে ২৫ জুলাই খয়রাশোলের বিডিওকে স্মারকলিপি দিয়েছিলেন আদিবাসীদের দুটি সংগঠনের সদস্যরা। সেই তালিকায় এবার সেভ ডেমোক্রেসি যুক্ত হওয়ায় কয়লা খনি গড়তে গিয়ে গাছ কাটার বিরুদ্ধে আন্দোলন জোরালো হল বলে মনে করছেন স্থানীয় মানুষ।

বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, নিয়ম মেনে ১০১ হেক্টর জায়গা নিজেদের নামে নিয়ে সেখানে জঙ্গল কাটাচ্ছিল নিগম। তা নিয়েই আপত্তি তোলেন এলাকার আদিবাসীরা। তাঁদের অভিযোগ, ‘‘ব্যক্তিগত জমি অধিগ্রহণ করতে হচ্ছে না বলে পিডিসিএল বেমালুম প্রস্তাবিত কয়লাখিনি ঘেঁষে থাকা লোকজনের কথা ভুলে যাচ্ছে। সেটা হতে দেব না।’’ তারপরেই গাছ কাটা বন্ধ করতে হয়েছে পিডিসিএলকে। এ দিন সেভ ডেমোক্রেসির সদস্যরা এলাকার বাস্তবপুর ও দেবগঞ্জ গ্রাম দুটির বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলেন।

খয়রাশোলের বিডিও সঞ্জয় দাস-সহ প্রশাসনের কর্তারা জানিয়েছিলেন, প্রস্তাবিত খনি এলাকা সংলগ্ন বাস্তবপুর, সগড়ভাঙ্গা, বেলডাঙা, ভাদুলিয়া গঙ্গারামচক, দেবগঞ্জ এলাকায় বসবাসকারী আদিবাসীদের উচ্ছেদ হতে হবে না। কিন্তু আদিবাসীদের দাবি, যে ভাবে জঙ্গল কেটে কয়লাখনি তৈরির কাজ চলছে তাতে ঘুরিয়ে তাঁদের উচ্ছেদের পরিকল্পনাই করা হয়েছে। কারণ জঙ্গল না থাকলে জীবিকা কী ভাবে হবে। তাছাড়া খনির গা ঘেঁষে থাকা বসতি তো বিপজ্জনক হবে। দু’দিন বাদে খনিতে বিস্ফোরণের জেরে ঘর ভাঙতে পারে, প্রাণহানি হতে পারে। তখন ভিটে থেকে উচ্ছেদ হতেই হবে। তাই আলোচনার ভিত্তিতে সহমতে না আসা পর্যন্ত জঙ্গল কটা চলবে না। খনির জন্য জঙ্গল ধ্বংস ছাড়াও, জীবিকা সুরক্ষিত রাখা, এলাকায় পানীয় জলের সঙ্কট, রাস্তা-ঘাটের উন্নতি, জাহের থান সংস্কার-সহ আদিবাসীদের সঙ্গে বঞ্চনার নানা দাবিও জানান তাঁরা।

প্রশাসনের কর্তারা জানান, কয়লাখনি নিয়ে সমস্যার কথা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। সেভ ডেমোক্রেসি ফোরামের সদস্যদের দাবি, স্বাধীনতার পর থেকেই উন্নয়নের নামে আদিবাসীদের উচ্ছেদ ও তাঁদের জীবন জীবিকায় কোপ পড়ছে। বিদ্যুৎ প্রয়োজন, বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য জন্য কয়লা লাগবে কিন্তু সেটা আদিবাসী পরিবারগুলিকে বিপাকে ফেলে নয়। জোর করে কাজ হলে, এখানেও চিপকো আন্দোলন হবে।

অন্য বিষয়গুলি:

Forest Coal Mine Deforestation
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy