Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
Bishnupur Hospital

ব্লাড ব্যাঙ্ক তালাবন্ধ, শোরগোল

শনিবার বিষ্ণুপুর হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত সুপার তড়িৎকান্তি পাল জানান, অভিযোগ পেয়ে ব্লাডব্যাঙ্কের মেডিক্যাল অফিসার রামপ্রসাদ মণ্ডলকে শো-কজ় করা হয়েছে।

দরজায় তালা। রক্ত দিচ্ছেন সুশান্ত। নিজস্ব চিত্র ও সোশ্যাল মিডিয়া

দরজায় তালা। রক্ত দিচ্ছেন সুশান্ত। নিজস্ব চিত্র ও সোশ্যাল মিডিয়া

নিজস্ব সংবাদদাতা
বিষ্ণুপুর শেষ আপডেট: ১২ জানুয়ারি ২০২০ ০৪:৩৬
Share: Save:

রক্তদাতা নিয়ে হাসপাতালে পৌঁছে দেখা গেল, ব্লাডব্যাঙ্কে তালা ঝুলছে। কর্মীরা এলেন প্রায় পৌনে ১০টা নাগাদ। এমনই অভিযোগ উঠল শুক্রবার রাতে, বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুর হাসপাতালে। এই ঘটনার জেরে সামনে এসেছে অন্য বেশ কিছু অভিযোগও। শনিবার বিষ্ণুপুর হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত সুপার তড়িৎকান্তি পাল জানান, অভিযোগ পেয়ে ব্লাডব্যাঙ্কের মেডিক্যাল অফিসার রামপ্রসাদ মণ্ডলকে শো-কজ় করা হয়েছে।

ঘটনার সূত্রপাত শুক্রবার সন্ধ্যায়। বিষ্ণুপুর সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন সোনামুখীর এক রোগিণী। তাঁর জন্য বি নেগেটিভ গ্রুপের রক্তের দরকার পড়েছিল। সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ রিকুইজ়িশন স্লিপ নিয়ে পরিজনেরা হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্কে যান। তাঁদের রক্তদাতা জোগাড় করে আনতে বলা হয়। এমন ক্ষেত্রে ওই ‘স্লিপ’ ফেরত দিয়ে দেওয়ার কথা থাকলেও ব্লাড ব্যাঙ্কের কর্মীরা তা রেখে দেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

রোগিণীর পরিজনেরা যোগাযোগ করেন রক্তদানের সঙ্গে যুক্ত একটি সংস্থার সঙ্গে। তাঁদের সদস্য সুশান্ত মালের সঙ্গে রক্তের গ্রুপ মিলে যায়। সুশান্ত হাসপাতালে আসেন পৌনে ৮টা নাগাদ। সংস্থার সদস্য দিল খান, প্রসেনজিৎ দত্তদের অভিযোগ, তখন তালা ঝুলছিল ব্লাড ব্যাঙ্কে। বাইরে কর্তব্যরত কর্মীর ফোন নম্বর লেখা ছিল। ডায়াল করে দেখা যায়, সেই নম্বর ভুল। জরুরি বিভাগ, অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপারের অফিস— নানা জায়গায় ঘুরেও কোনও দিশা মেলেনি।

ওই সংস্থার লোকজনের দাবি, রাত পৌনে ১০টা নাগাদ হাসপাতালের গাড়িতে চড়ে বাইরে থেকে ব্লাড ব্যাঙ্কের লোকজন ফেরেন। তার পরেই শোরগোল পড়ে। তালা খুলতে গেলে তাঁদের বাধা দেওয়া হয়। অবশেষে, রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ রক্ত সংগ্রহ করা হয়।

পুরো ঘটনার ‘লাইভ ভিডিয়ো’ (ভিডিয়োর সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার) ফেসবুকে প্রচার শুরু করে দেন সংস্থার কিছু সদস্য। তা ‘ভাইরাল’ হয়ে যায়। হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত সুপার তড়িৎকান্তি পাল জানান, বিষ্ণুপুর ব্লাড ব্যাঙ্কে তিন জন মেডিক্যাল অফিসার ও সাত জন টেকনিশিয়ান রয়েছেন। তাঁরা কেউ শুক্রবার রাতের ঘটনা প্রসঙ্গে মুখ খুলতে চাননি। ব্লাড ব্যাঙ্কের যে মেডিক্যাল অফিসারকে শো-কজ় করা হয়েছে, সেই রামপ্রসাদ মণ্ডলের মোবাইল ফোন শনিবার বন্ধ ছিল। জবাব মেলেনি মেসেজেরও। তড়িৎকান্তিবাবু বলেন, ‘‘যিনি টেবিলে থাকবেন তাঁর নাম ও মোবাইল নম্বর ব্লাড ব্যাঙ্কের দেওয়ালে স্পষ্ট করে লিখতে হবে। জরুরি বিভাগেও জানিয়ে রাখতে হবে। হাসপাতালের গাড়ির চালকের কাছেও নম্বরটা থাকবে। যা হয়েছে, ঠিক হয়নি।’’

ব্লাড ব্যাঙ্ক নিয়ে আগেও অভিযোগ উঠেছে বিষ্ণুপুরে। বছরখানেক আগে জেলাশাসক হাসপাতাল পরিদর্শনে এসে ব্লাড ব্যাঙ্কের ‘রোস্টার’-এ অনিয়ম দেখে ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন। নির্দেশ দিয়েছিলেন নিয়ম মেনে চলার জন্য। কিন্তু তাতে কোনও কাজ হয়নি বলেই এই ঘটনার পরে মনে করছেন শহরের কিছু বাসিন্দা। মহকুমাশাসক (বিষ্ণুপুর) মানস মণ্ডল বলেন, “নিয়ম অনুযায়ী স্বাস্থ্য পরিসেবা না দেওয়া হলে সেই দায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখছি।’’

দিনরাত খোলা থাকার কথা। কিন্তু সকাল ১০টার আগে বা বিকেল ৪টের পরে প্রায়ই বিষ্ণুপুর ব্লাড ব্যাঙ্কে কাউকে পাওয়া যায় না বলে অভিযোগ করেছেন কিছু রোগীর পরিজন। হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত সুপার জানান, এই ঘটনার পরে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, এক জন মেডিক্যাল অফিসার ব্লাড ব্যাঙ্কে থাকবেন সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত। দিনে-রাতে দুই দফায় টেকনিশিয়ানরা হাজির থাকবেন সর্বক্ষণ।

এ দিকে, ব্লাড ব্যাঙ্কের বাইরের বোর্ডে যে ফোন নম্বর লেখা রয়েছে, সেটিতেও যোগাযোগ করা যায় না বলে অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি মেনে নিয়েছেন সুপার। তিনি জানান, বোর্ড বদলে ফেলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE