দুর্ঘটনার পরে। রবিবারের নিজস্ব চিত্র।
বাস ও বালি বোঝাই ডাম্পারের মুখোমুখি সংঘর্ষে মারা গেলেন এক বাস যাত্রী। আরও ৪০ জন যাত্রী গুরুতর জখম। রবিবার দুপুরে দুর্ঘটনাটি ঘটে মানবাজার-বান্দোয়ান রাস্তায়, মানবাজার ১ ব্লক অফিসের সামনে। দুর্ঘটনার পরে উত্তেজিত জনতা বালিভর্তি কিছু গাড়িতে অল্প ভাঙচুর চালায়। পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়। আহত যাত্রীদের হাতে, মাথায়, বুকে চোট রয়েছে। তাঁদের মধ্যে আট জনকে পুরুলিয়া সদর হাসপাতাল ও বাঁকুড়া মেডিক্যালে স্থানান্তরিত করা হয়েছে বলে জানান মানবাজারের বিএমওএইচ কালীপদ সরেন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, এ দিন দুপুরে দুর্গাপুর থেকে ছেড়ে একটি বেসরকারি বাস বান্দোয়ান যাচ্ছিল। মানবাজার থেকে একটি বালিভর্তি ডাম্পারও বান্দোয়ানের দিকে যাচ্ছিল। মানবাজার ১ ব্লক অফিসের মোড়ে একটি বিপজ্জনক বাঁক রয়েছে। এ দিন দুপুর ১২টা নাদাজ ওই বাঁকেই বাস ও ডাম্পারের মুখোমুখি ধাক্কা লাগে। পুলিশ জানায়, ঘটনাস্থলেই মারা যান চিত্তরঞ্জন মণ্ডল (৬৭) এক বৃদ্ধ বাসযাত্রী। তাঁর বাড়ি বোরো থানার আঁকরো গ্রামে। এ দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, বাস ও ডাম্পারটি সংঘর্ষের অভিঘাতে পরস্পরের গায়ে লেপটে রয়েছে। ডাম্পারের চালক, ঝাড়খণ্ডের জারিডি থানার কাশীপুর গ্রামের বাসিন্দা মদন যাদব আর্তনাদ করছেন। স্টিয়ারিং ও গিয়ারের রড তাঁর পেটে বসে গেছে। বেরোতে পারছেন না। একটি ডাম্পার এনে একটি গাড়ির পিছনে ধাক্কা মেরে দুর্ঘটনাগ্রস্ত বাস ও ডাম্পারের মধ্যে লেগে থাকা জট ছাড়ানো হল। ঘণ্টা দেড়েকের চেষ্টায় এলাকার বাসিন্দারা ও পুলিশ শাবল দিয়ে চাড় মেরে ডাম্পারের সামনের অংশ ভেঙে চালককে উদ্ধার করেন। বাসের ভিতরে সিটগুলি দুমড়ে মুচড়ে গিয়েছে। কাঁচের টুকরো ছড়িয়ে রয়েছে। চিত্তরঞ্জনবাবু বসেছিলেন বাসের চালকের পিছনে। ধাক্কার চোটে চালকের আসনই তাঁকে পিষে দেয়। এলাকাবাসীর সহযোগিতায় পুলিশ বিস্তর মেহনতের পরে তাঁর দেহ উদ্ধার করে। পাথরমহড়া গ্রামের বাসিন্দা, পেশায় শিক্ষক তাপস প্রামাণিক বলেন, ‘‘হঠাৎ বিকট আওয়াজ পেয়ে বাইরে বেরিয়ে দেখি কিছুটা দূরে বাস ও ডাম্পারের মুখোমুখি ধাক্কা লেগেছে। গাড়ির ভিতর থেকে যাত্রীদের ‘বাঁচাও বাঁচাও’ চিৎকার শোনা যাচ্ছে। এলাকার সবাই মিলে আহত যাত্রীদের টেনে বার করি।’’
এ দিকে, দুর্ঘটনায় যাত্রী মৃত্যুর জেরে ক্ষুব্ধ বাসিন্দারা পিছনে থাকা চারটি বালি গাড়ির কাচ ইট-পাথর মেরে ভেঙে দেন। পিছনের ডালা খোলার চেষ্টা করায় রাস্তায় বালি ছড়িয়ে পড়ে। মানবাজারের নামপাড়ার বাসিন্দা অনাথবন্ধু মুখোপাধ্যায়, প্রণব বন্দ্যোপাধ্যায়দের ক্ষোভ, ‘‘বাজারের রাস্তায় দিনের বেলাতেও বালিবোঝাই গাড়ি চলায় যানজট বাড়ছে। দুর্ঘটনাও বাড়ছে।’’ বিক্ষোভ সামাল দিতে মানবাজার থানার পাশাপাশি পুঞ্চা, কেন্দা, বোরো থানার পুলিশ বাহিনী মোতায়েন হয়। দুর্ঘটনার জেরে বাস ও ডাম্পার এমন ভাবে রাস্তা জুড়ে ছিল যে অন্য গাড়ি পারাপার করা সম্ভব ছিলনা। বান্দোয়ানগামী ওই গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় বেলা সাড়ে তিনটা অবধি বড় গাড়ি যাতায়াত করতে পারেনি। বিকেলের দিকে জেসিবি মেশিনের সাহায্যে দু’টি গাড়ি সরানো হয়। ঘটনার সরজমিনে আসেন পুরুলিয়ার ডেপুটি সুপার (ডি অ্যান্ড টি) কুন্তল বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিশের ধারণা, দু’টি গাড়িরই গতি বেশি ছিল। বাঁকের মুখে নিয়ন্ত্রণ রাখতে না পেরে সরাসরি সংঘর্ষ হয়েছে।
হাসপাতালে ভর্তি বাসের যাত্রী, পুঞ্চা থানার ছোট সাগেন গ্রামের তরুণী রুমা সিং বলেন, ‘‘আমি বাসের মাঝামাঝি জায়গায় বসে ছিলাম। হঠাৎ বিকট শব্দ। আর কিছু মনে ছিল না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy