ডাক: বিষ্ণুপুরের পথে। ছবি: শুভ্র মিত্র
‘দেওয়ালিতে প্রদীপ ধরো, শব্দবাজি বন্ধ করো’ এই স্লোগানকে ফেস্টুনে রেখে, শব্দ দূষণের ক্ষতিকারক দিক তুলে ধরে বিষ্ণুপুরের পথে নামলেন নতুন তরুণ-তরুণীরা। সোমবার শহর জুড়ে পুলিশের আয়োজিত পদযাত্রায় পুলিশ কর্মী ও সিভিক ভলান্টিয়ারদের সঙ্গে তাঁরা পা মেলালেন।
‘বিষ্ণুপুর প্রয়াস’ নামের ওই সংগঠনের সদস্য পরিমল দেবী উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী শ্রেষ্ঠা দত্ত, শিবদাস উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী সোমাশ্রী নন্দী, সদ্য কলেজ পাঠ শেষ করা অনির্বাণ মুখোপাধ্যায়েরা বলেন, ‘‘আমাদের শহর আমাদের গর্ব। শব্দবাজির দূষণ আমরা চাই না। আমরা চাই অন্যেরাও আমাদের সঙ্গে এগিয়ে এসে শহরের পরিবেশ রক্ষা করুন।’’ ওই সংগঠন ইতিপূর্বে উত্তরবঙ্গের বন্যাপীড়িত মানুষদের জন্য টাকা সংগ্রহ করে খাবার, ওষুধ, পোশাক, শিশুদের খাবার নিয়ে গিয়েছিল।
তাই ফি বছর দীপাবলিতে শব্দবাজির তাণ্ডবে অলিগলি কাঁপতে থাকা বিষ্ণুপুর শহরকে বাঁচাতে এ বার তাঁরা পথে নেমে পড়েছেন। সংগঠনের সম্পাদক প্রসেনজিৎ কাপড়ি জানান, রবিবার রাতে তাঁরা জানতে পারেন, বিষ্ণুপুর শহরে শব্দবাজির বিরুদ্ধে সচেতনতার পদযাত্রা করতে চলে পুলিশ। তখনই তাঁরা সবাই মিলে ঠিক করেন, শহরের স্বার্থে তাঁরাও প্রশাসনের সঙ্গে পথে নামবেন। তাঁর কথায়, ‘‘আমাদের সংগঠনে স্কুল পড়ুয়া থেকে কলেজ পড়ুয়া, সদ্য চাকরি পাওয়া অনেকে রয়েছে। যে কয়েকজনকে এ দিন পেয়েছি, সবাই মিলে পদযাত্রাই সামিল হই। লোকজনের কাছে শব্দবাজি ফাটানোর বদলে আলো দিয়ে বাড়ি সাজিয়ে দীপাবলির আনন্দ নিতে অনুরোধ জানাই।’’
সকাল আটটায় বিষ্ণুপুর থানা থেকে শুরু হয় পদযাত্রা। একদম সামনে ছিল ট্যাবলো, পরে সামাজিক বার্তা নিয়ে নানা ফেস্টুন। রবীন্দ্র স্ট্যাচু মোড়ে এসে পথ চলতি মানুষকে বোঝানো হয়, শব্দবাজির কুফল সম্পর্কে। সচেতনতার প্রচারপত্র বিলি করা হয়। পথচলতি মানুষজনের মধ্যে অনেকেই আগ্রহ ভরে তাঁদের কথা শোনেন।
বিষ্ণুপুরের বাসিন্দা বর্তমানে কলকাতা আশুতোষ কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্র দর্পণ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘প্রত্যেকের বাড়িতেই বয়স্ক লোকজন রয়েছেন। বাড়ির কাছে বিকট শব্দে বাজি ফাটলে তাঁদের খুবই কষ্ট হয়। তাঁদের কথা ভেবে সবাই শব্দবাজি ফাটানো বন্ধ করতে পারলে, তার থেকে দীপাবলির বড় উপহার আর কিছু হতে পারে না।’’ স্কুল পড়ুয়া শ্রেষ্ঠা বলে, ‘‘আমাদের অনেকের বাড়িতে গৃহপালিত পোষ্য থাকে। গাছেও কম পাখি থাকে না। কিন্তু পশু-পাখির শ্রবণ ক্ষমতা অনেক বেশি থাকায় শব্দ বাজিতে ওদের খুব কষ্ট হয়। সবাই মিলে শব্দ বাজি থেকে বিরত থাকলে, ওদের কষ্ট পেতে হবে না।’’
মানুষেরও ক্ষতিরও বেশ সম্ভাবনা রয়েছে। বিষ্ণুপুর জেলা হাসপাতালের নাক-কান-গলার চিকিৎসক পার্থ রায় বলেন, ‘‘আমাদের সাধারণত শ্রবন ক্ষমতা থাকে ৬০ থেকে ৯০ ডেসিবেল। তার উপরে শব্দ হলে কানের নার্ভ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। অনেক সময় অতিরিক্ত শব্দে কানের পর্দা ছিঁড়ে যেতে পারে। শব্দবাজি থেকে এ রকম ক্ষতির সম্ভাবনা একশো শতাংশ রয়েছে। সুতরাং সবারই শব্দবাজি ব্যবহার বন্ধ করা উচিত।’’
বিষ্ণুপুর থানার আইসি আস্তিক মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমরা গোড়া থেকেই সতর্ক। শনিবার মহকুমার বাজি ব্যবসায়ীদের বৈঠকে বলে দেওয়া হয়েছে নিষিদ্ধ বাজি পেলে আইনানুগ ব্যাবস্থা নেওয়া হবে কড়া হাতে।’’ তিনি জানান, শহরের নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা স্বেচ্ছায় নাগরিকদের সচেতনতায় পা মেলানোয় প্রশাসনের কাজ সহজ হয়ে গেল। সমাজের সকল স্তরে এই সচেতনতার বার্তা পৌঁছে গেলে, দীপাবলি সবার কাছে যথার্থ আনন্দের হয়ে উঠবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy