Advertisement
০৪ নভেম্বর ২০২৪

পারিবারিক বিবাদ, রাগে শিশুর গায়ে অ্যাসিড ছুঁড়ল প্রতিবেশী

এক শিশুর গায়ে অ্যাসিড ছোড়ার অভিযোগ উঠল পড়শিদের বিরুদ্ধে। বাঁকুড়ার জয়পুরের ছত্রয়াড়া গ্রামের এক বছর ১০ মাসের ওই শিশু অঙ্কুশ পাত্রকে গুরুতর জখম অবস্থায় মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বিষ্ণুপুর জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

আক্রান্ত: বিষ্ণুপুর হাসপাতালে অঙ্কুশ পাত্র। ছবি: শুভ মিত্র।

আক্রান্ত: বিষ্ণুপুর হাসপাতালে অঙ্কুশ পাত্র। ছবি: শুভ মিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
জয়পুর শেষ আপডেট: ১৬ মার্চ ২০১৭ ০০:৩১
Share: Save:

এক শিশুর গায়ে অ্যাসিড ছোড়ার অভিযোগ উঠল পড়শিদের বিরুদ্ধে। বাঁকুড়ার জয়পুরের ছত্রয়াড়া গ্রামের এক বছর ১০ মাসের ওই শিশু অঙ্কুশ পাত্রকে গুরুতর জখম অবস্থায় মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বিষ্ণুপুর জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তার মুখের বাঁদিক ও দুই পায়ের কিছুটা পুড়ে গিয়েছে। বিষ্ণুপুর হাসপাতালের সুপার পৃথ্বীশ আকুলি বলেন, ‘‘শিশুটির শরীরের ১০ শতাংশ অ্যাসিডে পুড়েছে। মনে হচ্ছে, লঘুমাত্রার কোনও অ্যাসিডে সে চোট পেয়েছে।’’

মঙ্গলবার বিকেলে প্রতিবেশীর বাড়িতে খেলতে গিয়ে ওই শিশু জখম হয়। পারিবারিক বিবাদের জেরেই ওই শিশুর উপরে অ্যাসিড ছোড়া হয়েছে বলে অভিযোগ তুলে দুই পরিবারে অশান্তি পাকায়। দু’পক্ষের মধ্যে মারপিটে শিশুটির দাদু ও ঠাকুমা-সহ মোট তিনজন আহত হন। তাঁরাও বিষ্ণুপুর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। রাতে অঙ্কুশের বাবা বাচ্চু পাত্র থানায় পড়শি দুই ভাই ও ভাইদের স্ত্রীদের বিরুদ্ধে তাঁর ছেলের গায়ে অ্যাসিড ছোড়ার অভিযোগ দায়ের করেন।

এসডিপিও (বিষ্ণুপুর) লাল্টু হালদার বলেন, ‘‘গোটা মহকুমা জুড়ে অ্যাসিড বিক্রির উপর নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। যেখানে-সেখানে লাইসেন্স ছাড়া অ্যাসিড বিক্রি করা অপরাধ। তবে এক্ষেত্রে প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে, ঘরোয়া ব্যবহারের কার্বোলিক অ্যাসিডে ওই শিশু আহত হয়েছে। দু’পক্ষের অভিযোগ আমরা খতিয়ে দেখছি। প্রয়োজনে কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’’ যদিও পুলিশ ওই ঘটনায় বুধবার পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করেনি।

বুধবার বিষ্ণুপুর হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে গিয়ে দেখা গেল, অ্যাসিডে পোড়া দাগ নিয়ে ছোট্ট অঙ্কুশ নাগাড়ে কেঁদে চলেছে। মা আদরি পাত্র ছেলেকে সামলানোর চেষ্টা করছেন। অঙ্কুশের বাবা মিষ্টির দোকানের কর্মী বাচ্চুবাবু অভিযোগ, ‘‘আমার মেয়ে মিষ্টু অঙ্কুশকে নিয়ে পাশে জেঠতুতো ভাই বিকাশ পাত্র ও সুভাষ পাত্রের বাড়িতে খেলতে গিয়েছিল। হঠাৎ অঙ্কুশ কাঁদতে কাঁদতে ছুটে আসে। মিষ্টুর কাছে জানতে পারি, বিকাশের স্ত্রী শিবানি অঙ্কুশের গায়ে অ্যাসিড ছুড়ে দিয়েছে।’’ উত্তেজিত হয়ে ওই বাড়িতে ছুটে যান অঙ্কুশের দাদু নবকুমার পাত্র ও ঠাকুমা মঞ্জু পাত্র।

বাচ্চুবাবুর অভিযোগ, ‘‘ওঁরা গিয়ে বিকাশের স্ত্রীকে বলেছিল, কী মাখালি নাতির গায়ে, ওরকম পোড়া দাগ হয়ে গেল? জ্বালায় যন্ত্রণায় ছটপট করছে ওই টুকু বাচ্চা? তখন বিকাশের স্ত্রী শিবানি ও সুভাষের স্ত্রী মনসা বাঁশ ও রড নিয়ে তাঁদের বেধড়ক মারধর করে।’’ তাঁরা অঙ্কুশকে নিয়ে প্রথমে জয়পুর গ্রামীণ হাসপাতালে যান। চিকিৎসক আহত শিশুকে বিষ্ণুপুর হাসপাতালে স্থানান্তর করে দেন।

মহিলা বিভাগে মাথায় চোট নিয়ে ভর্তি থাকা মঞ্জু পাত্র এবং পুরুষ বিভাগে মাথায় সেলাই নিয়ে ভর্তি থাকা নবকুমার পাত্র অভিযোগ করেন, ‘‘আমাদের পারিবারিক বিবাদ আছে ঠিকই। তবু ওই টুকু বাচ্চার উপর কী করে এ রকম নির্মম প্রতিশোধ নিল? প্রতিবাদ করতে গিয়ে আমারাও বেধড়ক মার খেলাম!’’

অন্যতম অভিযুক্ত বিকাশ পাত্রও ওই হাসপাতালে মাথায় আঘাত নিয়ে ভর্তি। তিনি জানান, ন’মাস আগে চাষের জমিতে সাবমার্সিবল পাম্প বসানো নিয়ে দুই পরিবারে ঝামেলা হয়। তাঁর দাবি, ‘‘জমিতে সাপ মারার জন্য একটা শিশিতে কার্বোলিক অ্যাসিড ভরে ঘরের কোণে ঝুড়িতে রেখে দিয়েছিলাম। বাচ্চুর ছেলে তেল ভেবে ওই অ্যাসিড মাথায় মেখে ফেলায় বিপত্তি হয়। কিন্তু মিথ্যা অভিযোগ তুলে নবকুমার ও বাচ্চু বাঁশ দিয়ে আমার মাথায় মেরে পাঁচ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয়। জয়পুর থানায় অভিযোগ করেছি।’’

অঙ্কুশের বাবার পাল্টা দাবি, ‘‘তেল ভেবে ও যদি অ্যাসিড মাথায় মাখতে যায়, তাহলে ওর দু’হাতের চেটো অক্ষত থাকল কী করে?’’

অন্য বিষয়গুলি:

Neighbour Acid Attack Family broil
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE