হাজিরা: বাঁকুড়া আদালতে উদয়ন। ছবি: অভিজিৎ সিংহ।
ঠিক পাঁচ মাস আগে ভোপাল শহরের একটি বাড়ি থেকে মিলেছিল তাঁর প্রায় ‘মমি’ হয়ে যাওয়া মৃতদেহ। বাঁকুড়ার তরুণী আকাঙ্ক্ষা শর্মার সেই পরিণতি জেনে আঁতকে উঠেছিল গোটা দেশ। ওই ঘটনার পাঁচ মাসের মাথায় সেই হত্যাকাণ্ডের চার্জ গঠন হল বাঁকুড়া আদালতে। মঙ্গলবার বাঁকুড়ার দ্রুত নিষ্পত্তি আদালতের বিচারক সুরেশ বিশ্বকর্মার এজলাসে এই মামলার চার্জ গঠন হয়। আকাঙ্ক্ষাকে খুনে অভিযুক্ত ভোপালের সাকেতনগরের বাসিন্দা উদয়ন দাসের বিরুদ্ধে খুন (৩০২), প্রমাণ লোপাট (২০১), অপহরণ (৩৬৫) এবং অসৎ উদ্দেশ্যে অপহরণ করে লুকিয়ে রাখার (৩৬৮) মতো বিভিন্ন ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।
সরকার পক্ষের আইনজীবী অরুণ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “চার্জ গঠন হওয়ার পরেই মামলার বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়। তদন্তের ভিত্তিতে পুলিশের হাতে যে-সব তথ্যপ্রমাণ উঠে এসেছে, তার ভিত্তিতেই অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ধারা দেওয়া হয়েছে।’’ এ দিন আদালত কক্ষে উদয়ন অবশ্য নিজেকে ‘নির্দোষ’ বলেই দাবি করেছে। উদয়নের আইনজীবী অরূপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, “কেবল ধারা দিলেই কেউ দোষী হয়ে যায় না। তা প্রমাণ করাটাই বড় ব্যাপার!’’
চলতি বছর ২ ফেব্রুয়ারি সাকেতনগরে উদয়নের বাড়ির ভিতরে সিমেন্টের বেদি খুঁড়ে আকাঙ্ক্ষার প্রায় ‘মমি’ হয়ে যাওয়া দেহ উদ্ধার করেছিল পুলিশ। উদয়নকে গ্রেফতার করে পুলিশি জেরার পরে বেরিয়ে আসতে থাকে একের পর এক সাংঘাতিক তথ্য! জানা যায়, ২০১৬ সালের জুন মাসে আমেরিকায় চাকরি করতে যাওয়ার নাম করে বাঁকুড়ার রবীন্দ্র সরণির বাড়ি থেকে দিল্লির উদ্দেশে রওনা হয়েছিলেন ২৮ বছরের আকাঙ্ক্ষা। বন্ধু তথা প্রেমিক উদয়নই তাঁর চাকরির ব্যবস্থা করে দিয়েছে বলে বাড়িতে তিনি জানিয়েছিলেন। তাঁর বাবা শিবেন্দ্র কুমার শর্মা একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের বাঁকুড়া শাখার ম্যানেজার। বাড়ি থেকে বের হওয়ার কিছু দিন পর থেকেই আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে কথাবার্তা বন্ধ হয়ে যায় শর্মা পরিবারের। আকাঙ্ক্ষার ফোন থেকে মাঝেমাঝে কেবল হোয়্যাটস অ্যাপে মেসেজ পেতেন বাড়ির লোকজন। তাঁর ফোনে ফোন করলেও কেটে দেওয়া হতো। বিষয়টি নিয়ে রীতিমতো ধন্দে পড়ে যায় শর্মা পরিবার। একটা সময় হোয়্যাটস অ্যাপের মেসেজ আসাও কার্যত বন্ধ হয়ে যায়। ডিসেম্বরে গোটা ঘটনাটি পুলিশকে জানিয়ে মেয়ের নামে নিখোঁজ ডায়েরি করেন শিবেন্দ্রবাবু।
আকাঙ্ক্ষার ফোনের টাওয়ার লোকেশন ট্র্যাক করে পুলিশ ভোপালের সাকেতনগরের হদিশ পায়। শিবেন্দ্রবাবুরা জানতেন বন্ধু উদয়ন ওই এলাকার বাসিন্দা। গত ১ ফেব্রুয়ারিতে বাঁকুড়া পুলিশ সাকেতনগরে পাড়ি দেয়। পর দিন উদয়নের বাড়ি থেকে মেলে আকাঙ্ক্ষার দেহ। জিজ্ঞাসাবাদের মুখে নিজের বাবা, মাকেও বছর সাতেক আগে খুন করে ছত্তীসগঢ়ের রায়পুরের বাড়ির উঠোনে দেহ পুঁতে রাখার কথা স্বীকার করে উদয়ন। রায়পুর পুলিশ উদয়নকে নিয়ে গিয়ে তার দেখানো জায়গাতেই মাটি খুঁড়ে দু’টি দেহ উদ্ধার করে। এক সঙ্গে তিনটি খুনের ঘটনা প্রকাশ্যে চলে আসায় শোরগোল পড়ে যায়।
উদয়নের বিরুদ্ধে বাঁকুড়ায় আকাঙ্ক্ষা এবং রায়পুরে নিজের বাবা-মাকে খুনের মামলা রুজু হয়। আকাঙ্ক্ষা-খুনে ৩০ এপ্রিল বাঁকুড়া আদালতে চার্জশিট জমা দেয় বাঁকুড়া পুলিশ। এ দিন অবশ্য আদালতে উপস্থিত ছিলেন না নিহত তরুণীর পরিবারের লোকজন। তাঁদের পক্ষ থেকে বাঁকুড়ার আইনজীবী অজিত আকুলি বলেন, “দোষী ব্যক্তি চরম শাস্তি পাক, এটাই কেবল চাইছেন আকাঙ্ক্ষার বাবা-মা।’’ উদয়ন অবশ্য এজলাসে আগাগোড়াই ছিল ভাবলেশহীন। বিচারকের সামনে নিজেকে নির্দোষ দাবি করার পরে আদালত থেকে বেরনোর পথে সাংবাদিকদের উদয়ন বলে, “ভবিষ্যতে যা হবে, দেখা যাবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy