Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪
জেলায় নজির গড়ল সিউড়ি

সম্প্রীতির বার্তা নিয়ে ইদেও থিম

ধর্মীয় সহিষ্ণুতা অক্ষুণ্ণ রাখতে গত মহরমে অস্ত্র-ছাড়া মিছিল করে নজির গড়েছিল সিউড়ি। ইদেও সেই সুর ধরে রাখল জেলা সদরের নিউ জেনারেশন ক্লাব।

ধর্ম-সমন্বয়। নিজস্ব চিত্র

ধর্ম-সমন্বয়। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
সিউড়ি শেষ আপডেট: ১৭ জুন ২০১৮ ০১:২০
Share: Save:

ইদেও থিম। তাতে আবার সম্প্রীতির ছোঁওয়া।

ধর্মীয় সহিষ্ণুতা অক্ষুণ্ণ রাখতে গত মহরমে অস্ত্র-ছাড়া মিছিল করে নজির গড়েছিল সিউড়ি। ইদেও সেই সুর ধরে রাখল জেলা সদরের নিউ জেনারেশন ক্লাব।

দুর্গাপুজো তো বটেই, থিমে সেজেছে কালী-লক্ষ্মী থেকে সরস্বতীর মণ্ডপ। ঝকঝকে আলোয় মসজিদ, মহল্লা সাজানোর রেওয়াজ থাকলেও ইদে থিমের প্রচলন ছিল না। ব্যতিক্রম এ বার। সিউড়ি ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সোনাতোড় পাড়ার ওই ক্লাবের থিম— বিবিধের মাঝে মিলনের বার্তা।

এক মাস কৃচ্ছসাধনের পরে আসে খুশির ইদ। তার জোয়ারে ভেসে ইদের আগের দিন থেকে গোটা সানোতোড় পাড়া রঙিন আলোয় আলোকিত হয়ে উঠেছে। নিউ জেনারেশন ক্লাব এমনতিই প্রতি বছর নানা অনুষ্ঠান করে থাকে। সেই উৎসবের মধ্যেই সম্প্রীতির বার্তা দিতে চেয়েছে ক্লাবটি।
ক্লাবের সামনে গেলেই মানুষ দেখতে পাবেন হলুদ ও লাল রং দিয়ে তৈরি একটি তোরণ। তার উপরে কালো রেখায় ফুটে উঠেছে হিন্দু-মুসলিম-শিখ –খ্রিস্টান চার ধর্মের মানুষ পাশাপাশি। তোরণ জুড়ে দুই সম্প্রদায়ের মানুষ একে অপরকে আলিঙ্গন করে ইদের শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন।

‘‘সর্বধর্ম সমন্বয়ের বার্তা দিতেই এমন উদ্যোগ’’— বলছেন ক্লাব সম্পাদক মিমো খান। ক্লাবের সদস্যদের মত, বর্তমানে এক সম্প্রদায়ের মানুষ অপর সম্প্রদায়ের কাছে এলেই কোথাও অস্বস্তি, অস্থিরতার পরিবেশ তৈরি হচ্ছে। ধর্ম নিয়ে অসহিষ্ণুতার বিষ ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে সুকৌশলে। আমরা প্রতিবারই ক্লাবের মাঠ সাজাই। এক সদস্যের কথায়, ‘‘এ বার মনে হল আরও ভাল করে সাজানো হবে মাঠ। কিন্তু, বার্তা থাকুক সহিষ্ণুতার পক্ষে, সম্প্রীতির পক্ষে।’’

সেই ইচ্ছেকে বাস্তবায়িত করেছেন শান্তিনিকেতন কলাভবেনের তিন ছাত্র। যাঁরা ক্লাবের কিছু সদস্যের বন্ধুও। যাঁরা সম্প্রীতির বার্তা দেওয়ার পাশাপাশি গোলাপি, হলুদ সুতোর গোলকে আলো ভরে রাতের আকাশকে আরও মোহমোহী করে তুলেছেন। কলাভবনের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র সুদীপ দাস বলেন, ‘‘ওঁরা যা চেয়েছিলেন, সেটাই আমরা ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছি।’’

ইদের খুশিতে সেজেছে সিউড়ির অন্য মহল্লাও। কেউ কেউ বলছেন, ‘‘এখন ধর্মীয় আচার, রেওয়াজে জৌলুস আনতে চাইছে মানুষ। সব কিছুতেই প্রদর্শনী ও উপস্থাপনায় গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। ফলে ধর্মীয় উৎসবেও থিমের প্রবণতা বাড়ছে।’’ তবে এলাকার সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ বলছেন, ‘‘খারাপ কী, এমন চলতে থাকলে পুজোয় যেমন মণ্ডপে মণ্ডপে ভিড় জমে, ঢল নামে মানুষের। সেটাই অদূর ভবিষ্যতেও হতে চলেছে।’’

এলাকার কাউন্সিলর কাজী ফরজুদ্দিন বলছেন, ‘‘ধর্মের আগে আমরা সকলে মানুষ।’’ ওই কাউন্সিলর মনে করাচ্ছেন, গত মহরম থেকেই সম্প্রীতি অক্ষুণ্ণ রাখার সুর বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। অস্ত্র ছাড়াই মিছিল হবে মহরমে, এটা মেনে নিয়েছিল সব ক’টি মহরম কমিটি। বলছেন, ‘‘মহরম কমিটি, জন প্রতিনিধি, ইমাম থেকে প্রশাসন সকলের মিলিত চেষ্টায় সেটা আমরা সেটা করে দেখিয়েছি। পবিত্র ইদে কেন সেই বার্তা থাকবে না?’’ স্থানীয় ক্লাব সেই চেষ্টাই করেছে। আগামী দিনেও এই চেষ্টা বজায় থাকবে বলে জানিয়ে রাখছেন ক্লাব কর্তৃপক্ষ।

আজ, রবিবার ইদ মিলনী উৎসবে যোগ দেবেন সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষে। সেখানে পরস্পর পরস্পরকে সম্মান জানাবেন, সম্প্রীতির পক্ষে বক্তব্য রাখবেন।

অন্য বিষয়গুলি:

Communal Harmony Eid Hindu Muslim Theme
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE