Advertisement
০৪ নভেম্বর ২০২৪
ভাইয়ের হাতের বিস্কুট খেয়ে মগডাল থেকে নামলেন বিষ্ণুপুরের যুবক

ওরে সুভাষ নেমে আয়, তোর বিয়ে দেব, হাঁক মায়ের

রাত থেকে গাছের মগডালে ঠায় বসে রয়েছে ছেলে। আর নীচ হাঁক পাড়ছেন মা— ‘‘ওরে সুভাষ ফিরে আয়’’। কিন্তু যাঁকে ডাকা, তাঁর কোনও ভাবান্তর নেই।সোমবার রাত ১১টায় বিষ্ণুপুরের বিশ্বাস পাড়ার বছর আঠাশের যুবক সুভাষ মণ্ডল ঘর থেকে ঊর্ধ্বশ্বাসে বেরিয়ে পাশের আশ্রমের একটি নিমগাছে তরতরিয়ে উঠে পড়েন।

ডালে: বিষ্ণুপুরের বিশ্বাসপাড়ায় গাছ থেকে যুবককে নামানোর চেষ্টা চলছে। মঙ্গলবার তোলা নিজস্ব চিত্র।

ডালে: বিষ্ণুপুরের বিশ্বাসপাড়ায় গাছ থেকে যুবককে নামানোর চেষ্টা চলছে। মঙ্গলবার তোলা নিজস্ব চিত্র।

শুভ্র মিত্র
বিষ্ণুপুর শেষ আপডেট: ০৫ এপ্রিল ২০১৭ ০০:৪৪
Share: Save:

রাত থেকে গাছের মগডালে ঠায় বসে রয়েছে ছেলে। আর নীচ হাঁক পাড়ছেন মা— ‘‘ওরে সুভাষ ফিরে আয়’’। কিন্তু যাঁকে ডাকা, তাঁর কোনও ভাবান্তর নেই। সোমবার রাত ১১টায় বিষ্ণুপুরের বিশ্বাস পাড়ার বছর আঠাশের যুবক সুভাষ মণ্ডল ঘর থেকে ঊর্ধ্বশ্বাসে বেরিয়ে পাশের আশ্রমের একটি নিমগাছে তরতরিয়ে উঠে পড়েন। সারা রাত তো বটেই, মঙ্গলবার বেলাতেও তাঁকে নামাতে রীতিমতো কালঘাম ছোটার অবস্থা হয় সবার।

খবর পেয়ে মঙ্গলবার সকালে বিষ্ণুপুরের বিশ্বাস পাড়ায় ভোলে ভাণ্ডারী আশ্রমে বহু লোক জড়ো হয়ে ছিলেন। সেই ভিড়ের মধ্যে থেকে সুভাষের মা মালতি মণ্ডল ছেলেকে বাবা-বাছা করে নামানোর চেষ্টা চালাচ্ছেন চিৎকার করে। দুই দাদা বিশ্বনাথ মণ্ডল, সাগর মণ্ডলও কম চেষ্টা করছিলেন না। কিন্তু সুভাষের সে সবে কোনও ভ্রূক্ষেপ নেই। মাঝে মধ্যেই গাছের এক ডাল থেকে অন্য ডালে পা মেলে বসছেন। ডাল নড়ে উঠতেই নীচ থেকে জনতার চিৎকার উঠছে— ‘‘এই রে, গেল বোঝহয়।’’

তাঁকে নামাতে প্রলোভনও কম দেওয়া হয়নি। মা হাঁকলেন, ‘‘সুভাষ এ বার তোর বিয়ে দেব। নেমে আয় বাবা।’’ বন্ধুরা নেশার জিনিসের প্রলোভন দিতে থাকল। কিন্তু কিছুতেই মন গলানো যায় না সুভাষের।

কৌতূহল চাপতে না পেরে বকুলতলা মোড়ে দাড়ি কাটা ছেড়ে একগাল সাবান মাখা মুখে চলে এসেছিলেন মনোরঞ্জন সেন, শাঁখারিবাজারের দোকান ছেড়ে হাজির সৌরভ দে হাজির মেয়েকে নিয়ে। পুজোপাঠ ছেড়ে ধুতি পরে ঘটি হাতে পুরোহিত সঞ্জীব চক্রবর্তীও হাজির।

আরও পড়ুন:ভাড়া ঘরে বিএমডব্লিউ, জালে পলাশ

আশ্রমের মালিক বাউল বাগদি বলেন, ‘‘ছেলেটা সারা রাত গাছে। আর আমরাও সারা রাত নীচে। হঠাৎ যদি ছেলেটা ঘুমিয়ে পড়ে গাছ থেকে পড়ে যায়, সেই আতঙ্কে কাঁটা হয়ে ছিলাম।’’ পড়শি তাপু বিশ্বাস, শম্ভু দে, প্রশান্ত লায়েকরা বলেন, ‘‘সারা রাত না খেয়ে রয়েছে ছেলেটা। একে খিদে তার উপরে এই চড়া রোদ, ও মাথা ঘুরে পড়ে গেলে তো বিপদ বেড়ে যাবে।’’

বিষ্ণুপুরের উপপুরপ্রধান বুদ্ধদেব মুখোপাধ্যায় ও পাশের ওয়ার্ডের কাউন্সিলর দিবেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় এসে ততক্ষণে দমকল কর্মীদের ডেকে এনেছেন। দমকল কর্মীরা পাশের একটি বাড়ির ছাদে উঠে সুভাষের কাছে যাওয়ার চেষ্টা করেন। ফল হয় উল্টো। সুভাষ গাছের আরও উপরে উঠে যান। বেগতিক দেখে দমকল কর্মীরাও সুভাষকে বোঝানোর চেষ্টা চালান। কিন্তু চিঁড়ে ভেজেনি। জনতা বলতে থাকেন, গাছের নীচে জাল পাতা দরকার।

সে সবের অবশ্য প্রয়োজন হয়নি। বেলা প্রায় ১২টার দিকে ছোট ভাই চায়ের দোকানদার পচু মণ্ডল এক প্যাকেট বিস্কুট নিয়ে গাছে উঠে পড়েন। ভাইয়ের হাত থেকে বিস্কুট চিবোতে চিবোতে দু’জনের কী যেন কথা হয়। তারপরেই নেমে আসেন সুভাষ।

শেষমেশে সুভাষ ঘরে ফেরায় হাঁফ ছাড়লেন সবাই।

অন্য বিষয়গুলি:

Tree Branches Mentally Disabled
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE