মগ্ন: শুকদেব মিত্র। নিজস্ব চিত্র
পেটের তাগিদে কখনও তাঁকে ধরতে হয়েছে লাঙলের মুঠি। কখনও বা হাতে তুলতে হয়েছে দাঁড়িপাল্লা। কিন্তু তার ফাঁকে ফাঁকেই সাহিত্যচর্চা করে গিয়েছেন শুকদেব মিত্র। সে কয়েক দশক আগের কথা। লাঙল টানতে না হলেও, এখনও সাহিত্যপ্রেমেই মজে আশির্ধ্ব বৃদ্ধ। ডাক পেলেই হাজির হন সাহিত্যসভায়।
ময়ূরেশ্বরের কলেশ্বর গ্রামে মধ্যবিত্ত চাষি পরিবারের সন্তান শুকদেববাবু। স্কুল-জীবন থেকেই লেখালেখির অভ্যাস। স্কুলের ম্যাগাজিন থেকে শুরু। তার পরে শিশুসাথী, সায়র, জল-সারেঙ, অনিকেত, দিদিভাই, পূর্বাভাস, বীরভূমি সহ জেলা ও রাজ্যের বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে তাঁর রচনা। রয়েছে বাউলগান, লোকসঙ্গীত নিয়ে লেখা। ছোটদের ছড়ার বইও। তাঁর গবেষণাধর্মী লেখা ‘কলেশ্বর কলেশনাথ’ অনেক গবেষণার রসদ জুগিয়েছে। আকাশবাণীর পল্লি-বেতারকেন্দ্রের অনুষ্ঠানে পড়া হয়েছে তাঁর লেখা বীরভূমের দেব-দেবী বিষয়ক রচনা।
এক সময়ে বিঘা ১২ জমির উপর নির্ভর করেই পাঁচ ছেলেমেয়ের লেখাপড়ার পাশাপাশি ৮ জনের সংসার টেনেছেন শুকদেববাবু। জমিতে লাঙল চালাতে চালাতে ছন্দ মিলিয়েছেন, সুর ভেজেছেন। তার পরে রাতে লন্ঠনের আলোয় লিখেছেন সে সব সুর-ছন্দ। কখনও নিজেদের ধানচালের আড়তে দাঁড়িপাল্লা হাতে ওজনও করতে হয়েছে। কিন্তু হাজার বাধায় লেখা ছাড়েননি।
ডাক পেলেই হেঁটে বা সাইকেলে গিয়েছেন ১০-১৫ কিলোমিটার দূরের সাহিত্যসভাতেও। অনেক জায়গায় টিফিন জোটেনি। বাড়ি থেকে নেওয়া মুড়ি খেয়েই কবিতা-গল্প পড়ে এসেছেন সে সব সভায়।
৮১ বছর বয়সেও অভ্যাস বদলায়নি। এখনও সাহিত্যসভার আমন্ত্রণ পেলে একই ভাবে ঝোলা কাঁধে বেরিয়ে পড়েন তিনি। এখন অবশ্য তাঁকে আর লাঙলের মুঠি ধরতে হয় না। দুই মেয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। বড় ছেলে শিক্ষকতা করেন। অন্য দুই ছেলে ব্যবসা ও চাষ দেখাশোনা করেন।
ধুতি-পাঞ্জাবি, কাঁধে ঝোলা এটাই তাঁর ‘ড্রেস-কোড’। জেলার শিল্পী, সাহিত্যিক ও সাংবাদিক মহলে তিনি পরিচিত নাম। ‘রানার’ সাহিত্য পত্রিকার সম্পাদক তথা নাট্যকর্মী বিজয় দাস ও সাপ্তাহিক ‘নয়া প্রজন্ম’ পত্রিকার সম্পাদক কাঞ্চন সরকারের কথায়— ‘‘শুকদেবদা অন্য রকম মানুষ। সহজ-সরল, অনাঢ়ম্বর জীবন তাঁকে অন্যদের থেকে আলাদা ভাবে চিনিয়ে দেয়। তার গবেষণাধর্মী সৃষ্টি সাহিত্য জগতকে সমৃদ্ধ করেছে। জেলার বহু অবহেলিত বিষয় তাঁর কলমে উঠে এসেছে। কিন্তু তিনি নিজে প্রচারের আড়ালেই থেকে গিয়েছেন।’’
এ নিয়ে অবশ্য কোনও আক্ষেপ নেই শুকদেববাবুর। তাঁর কথায়, ‘‘ভালবেসে কলম ধরেছিলাম। সেই সুবাদেই মানুষের ভালবাসা পেয়েছি। এর বেশি কিছু চাই না।’’ একই বক্তব্য স্ত্রী রেবাদেবীরও। তিনি বলেন, ‘‘অভাবের দিনে ওর সাহিত্য-প্রেম দেখে রেগে যেতাম। এখন বুঝেছি সাহিত্য ওঁর ভালবাসার জায়গা।’’
শুকদেববাবুকে বিভিন্ন সময়ে সংবর্ধনা দিয়েছে বীরভূম সাহিত্য পরিষদ, নেতাজি সংস্কৃতি মঞ্চ, পূর্বাভাস সাহিত্য গোষ্ঠী, দিদিভাই সাহিত্য গোষ্ঠী সহ অন্যেরা। নেতাজি সংস্কৃতি মঞ্চের হিমাদ্রীশেখর দে, বীরভূম সাহিত্য পরিষদের সম্পাদক নবকুমার চক্রবর্তী জানান, শুকদেববাবুর সাহিত্যনুরাগ অন্যদের প্রেরণা জোগায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy