শোকার্ত: বোমায় নিহত হয়েছেন ভাই লাল্টু। কান্নায় ভেঙে পড়েছেন প্রধান মহুবুল শেখ। ছবি: সব্যসাচী ইসলাম
বোমার আঘাতে জোড়া মৃত্যুর ঘটনা নাড়িয়ে দিয়েছে মাড়গ্রামকে।
বেশ ক’বছর শান্ত ছিল এলাকা। রাজনৈতিক বিরোধী থাকলেও বড় কোনও অশান্তি বাধেনি। মাস দেড়েক আগে, গত ১৮ ডিসেম্বর মাড়গ্রাম হাইস্কুলের অভিভাবক প্রতিনিধি নির্বাচনের ছ’টি আসনেই তৃণমূল, বিজেপি এবং কংগ্রেস-সিপিএম সমর্থিত প্রার্থীরা লড়াই করেছিলেন। নির্বাচন ঘিরে উত্তেজনা থাকলেও গণ্ডগোল হয়নি। নির্বিঘ্নেই ভোট হয়েছে। তৃণমূল প্রার্থীরা ৬টি আসনেই জয়ী হয়েছিল। কিন্তু, শনিবার রাতে ‘সামান্য ঘটনায়’ যা ঘটল, তাতে অবাক এখানকার সাধারণ মানুষ। এই পরিস্থিতিতে আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনে আবারও মাড়গ্রামের পরিস্থিতি খারাপের দিকে এগোতে পারে বলে বহু মানুষের আশঙ্কা। তৃণমূলের মাড়গ্রাম ১ অঞ্চল সভাপতি মেহেদি হাসান বলছেন, ‘‘এলাকার শান্ত পরিবেশকে কয়েক জন মিলে অশান্ত করে দিল!’’
শনিবার রাতে স্থানীয় ধূলফেলা মোড়ের কাছে হাসপাতালপাড়ায় হামলা হয় পঞ্চায়েত প্রধান মহুবুল শেখের ভাই লাল্টু শেখ ও তৃণমূল কর্মী নিউটন শেখের উপরে। শনিবার নিউটন এবং রবিবার লাল্টু মারা যান। রবিবার সকালে গিয়ে দেখা যায়, গ্রামে চাপা উত্তেজনা রয়েছে।গ্রামবাসীদের অনেকেই দীর্ঘদিন পরে গ্রামের শান্ত পরিবেশের আবার অশান্তির ছায়া দেখছেন। তাঁদের একাংশ জানালেন, বছর দুয়েক আগেও মাড়গ্রামের গুদামপাড়ায় বোমা ছুড়ে প্রাণে মারার চেষ্টা করা হয়েছিল লাল্টু ও নিউটনকে। ওই ঘটনায় লাল্টুর দাদা, মাড়গ্রাম ১ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান মহুবুল আলি অল্প আঘাত পান। লাল্টু এবং নিউটন বেঁচে যান। এ যাত্রা অবশ্য বাঁচলেন না।
কিন্তু, কেন এই হামলা ও খুন?
জেলা পুলিশের এক আধিকারিক জানান, শনিবার সন্ধ্যায় মহুবুল আলি ওরফে ভুট্টু অনুগামী হারুন, লেবেলদের সঙ্গে ভুট্টু বিরোধী সুজাউদ্দিন শেখ ও তাঁর অনুগামী আইনাল, সামশুরদের সঙ্গে মধ্যে কোনও বিষয় নিয়ে কথা কাটাকাটি ও গালিগালাজ হয়। উভয়পক্ষই পরস্পরকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেয়। সেই ঘটনার মীমাংসা করতে ভুট্টু অনুগামী নিউটন এবং লাল্টু আইনালের কাছে যাচ্ছিলেন। অভিযোগ, আইনালের বাড়ির সামনের রাস্তায় নিউটন ও লাল্টুর উপরে বোমা মারা হয়।
প্রধান মহুবুলের দাবি, ‘‘আমি লাল্টু ও নিউটনকে রবিবার সকালে ফয়সালা করা হবে জানিয়ে শনিবার রাতে ওদের ওখানে যেতে অনেক বার মানা করেছিলাম। ওরা মানা শোনেনি। তার পরেই ওরা বোমা মেরে দু’জনকে খুন করল।’’ তাঁর দাবি, তাঁর ভাই লাল্টু বোমার আঘাতে জখম হওয়ার পরেও রাস্তায় ফেলে লাঠি দিয়ে মারধর করা হয়। লাল্টুর এক আত্মীয়ও এ দিন এসএসকেএম হাসপাতাল চত্বরে দাবি করেন, ‘‘নিউটন আর লাল্টু অনেকদিন ধরেই নিশানায় ছিল। সুযোগ পেয়ে ওদের উপর বোমা ফেলে দিল। রাজনীতির কারণেই হয়েছে।”
এ দিন নিহত নিউটনের বাড়িতে যান মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ, হাঁসনের বিধায়ক অশোক চট্টোপাধ্যায়, রামপুরহাট ২ ব্লক তৃণমূলের সভাপতি সুকুমার মুখোপাধ্যায়, দলের রামপুরহাট মহকুমা পর্যবেক্ষক ত্রিদিব ভট্টাচার্য। নিউটনের স্ত্রী ফেরদৌসি বিবির সঙ্গে কথা বলেন তাঁরা। ফেরদৌসির দাবি, ‘‘আমার স্বামীর হত্যাকারী জহির, আইনাল, সুজাউদ্দিনেরা। ওদের কঠোর সাজা চাই।’’
হাঁসন বিধানসভার অধীন মাড়গ্রাম দীর্ঘদিন কংগ্রেসের শক্ত ঘাঁটি বলে চিহ্নিত। বর্তমানে তৃণমূলের আধিপত্য বৃদ্ধি পেলেও সেই এলাকায় দু’জন তৃণমূল কর্মীকে বোমা মারার ঘটনায় কংগ্রেসের বিরুদ্ধেই মূলত অভিযোগ উঠেছে। মূল অভিযুক্ত হিসাবে নাম উঠে আসছে স্থানীয় কংগ্রেস কর্মী সুজাউদ্দিনের। ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে মাড়গ্রাম ১ পঞ্চায়েত-সহ রামপুরহাট ২ পঞ্চায়েত সমিতির অধীন ৯টি অঞ্চলের কোনও আসনেই বিরোধীরা কেউ মনোনয়ন জমা দিতে পারেনিন। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় তৃণমূল প্রার্থীরা জয়ী হয়। মাড়গ্রাম ১ পঞ্চায়েত প্রধান হয় মহুবুল আলি ওরফে ভুট্টুকে।
ভুট্টুর আগে ওই অঞ্চলের প্রধান ছিলেন সুজাউদ্দিন। ভুট্টু প্রধান হওয়ার পরেই তাঁর সঙ্গে সুজাউদ্দিনের বিরোধ বাধে বলে এলাকা সূত্রে জানা যাচ্ছে। লোকসভা নির্বাচনের আগে সুজাউদ্দিন বিজেপি-তে যোগ দেন। লোকসভা এবং গত বিধানসভা নির্বাচনে সুজাউদ্দিন বিজেপির হয়ে ভোট করেন।
এর পরে মাড়গ্রাম হাইস্কুলের অভিভাবক প্রতিনিধি নির্বাচনের আগে সুজাউদ্দিন তাঁর বেশ কিছু অনুগামীকে ফের কংগ্রেসে যোগ দেন। তারপরেই মাড়গ্রামে সুজাউদ্দিন-সহ জোটের প্রভাব কিছুটা বাড়তে থাকে। এলাকায় প্রভাব বজায় রাখা নিয়ে তৃণমূলের লোকজনের সঙ্গে বিরোধও বাড়ে বলে অভিযোগ।
সেই বিরোধেই প্রাণ গেল লাল্টু ও নিউটনের বলে দাবি মাড়গ্রামের বাসিন্দাদের একাংশের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy