উৎসব: মেলা প্রাঙ্গণের আখড়ায় ভিড়। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী
মেলার দিকে এগোচ্ছে হাজার হাজার মানুষ। মেলা প্রাঙ্গণে শয়ে শয়ে দোকান। তার গায়ে গায়ে আখড়া। চার দিকে হইচই। পুলিশ, প্রশাসনের ব্যস্ততা।
অজয় নদে মকরস্নানের কয়েক ঘণ্টা আগে সোমবার বিকেলে জয়দেব মেলায় চেনা সেই ছবি-ই।
প্রশাসনের হিসেবে, মঙ্গলবার মকর সংক্রান্তিতে কয়েক লক্ষ মানুষ অজয়ের ঘাটে স্নান করবেন। প্রচলিত রয়েছে, কবি জয়দেব বর্ধমানের কাটোয়ায় নিয়মিত গঙ্গাস্নানে যেতেন। জয়দেব থেকে এত পথ যেতে কষ্ট হত তাঁর। কবি এক দিন স্বপ্নে দেখেন, মা গঙ্গা তাঁকে বলছেন— ‘এ বার থেকে তোকে এত পথ হেঁটে আসতে হবে না। আমিই উজানে অজয় নদে আসব। তা বোঝা যাবে যখন মকর সংক্রান্তিতে জয়দেব সংলগ্ন অজয়ের কদমখণ্ডির ঘাটে একটি ফুল ভেসে আসবে।’ কথিত রয়েছে, সেই ফুল ভেসে এসেছিল ওই ঘাটে-ই। মকর সংক্রান্তিতে অজয়ের ঘাটে স্নান করলে গঙ্গাস্নানের পূণ্য অর্জন হয় বলে বিশ্বাস। তার জেরেই রাজ্যে ও দেশের নানা প্রান্ত থেকে পূণ্যস্নানের জন্য এ দিন আসেন মানুষ। শুধু মকরস্নান ও রাধাবিনোদ মন্দিরে পুজো দেওয়া এবং মেলায় ঘোরা নয়, জয়দেব কেঁদুলির মেলায় উপরি পাওনা, বিনা খরচে আখড়ায় থাকা-খাওয়া, কীর্তন ও বাউলের সুরে মজে থাকা। এত সংখ্যক মানুষের সমাগমে কোনও অনভিপ্রেত ঘটনা যাতে না ঘটে, মেলা যাতে সুষ্টু ভাবে সম্পন্ন হয়— প্রশাসনিক ব্যস্ততা সেই কারণে।
প্রশাসনিক সূত্রে খবর, আগে মেলার প্রবেশপথের দু’ধারে মেলা বসত বলে এত মানুষের উপস্থিতিতে কার্যত দমবন্ধ পরিস্থিতি তৈরি হত। সঙ্গে ভয় ছিল, অগ্নিকাণ্ড ঘটলে তা মোকাবিলায় দমকলের গাড়ি যাতায়াতের উপযুক্ত পথ না থাকা। মেলায় অতিরিক্ত ভিড় সামলাতে, অগ্নিসংযোগ ও পদপৃষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থেকে বাঁচতে বছর দুয়েক ধরে প্রশাসনের তৎপরতায় মেলা পুরোপুরি সরে গিয়েছে অজয়ের চরে।
‘নির্মল বীরভূম’ তকমা পাওয়ায় এ বারে জয়দেব মেলার চত্বর পরিছন্ন রাখতে আরও বেশি তৎপর প্রশাসন, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলি। ‘‘প্রচুর অস্থায়ী শৌচাগার ও ডাস্টবিন রাখা হয়েছে মেলা প্রাঙ্গণে। রয়েছে পানীয় জলের ব্যবস্থা’’— এমনই জানান মেলা কমিটির সম্পাদক তথা বোলপুরের মহকুমাশাসক অভ্র অধিকারী। তিনি আরও জানান, প্রচুর পুলিশকর্মী, পুলিশ বুথ, সিসিটিভি ক্যামেরা, দুর্যোগ মোকাবিলা দল, গাইড ম্যাপ মিলিয়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থাও ঢেলে সাজা হয়েছে।
পুলিশ সুপার শ্যাম সিংহ জানান, ‘‘জেলা ও জেলার বাইরে থেকে মোট ২ হাজার পুলিশকর্মী মেলায় মোতায়েন থাকছেন। ১৬টি এলাকায় সিসিটিভি ক্যামেরা থাকবে। ১২টি পুলিশ বুথ থাকবে। থাকবেন জেলা ও জেলার বাইরে থেকে আসা ডেপুটি পুলিশ সুপার ও ইনস্টেক্টর পদমর্যাদার আধিকারিকেরা। মেলায় যাতায়াতের পথে ১১টি ‘ড্রপ-গেট’ থাকছে। যাতে যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করা যায়। থাকবে দু’টি মেডিক্যাল দল। পুলিশের একটি প্রশিক্ষিত দল কোনও অগ্নিকাণ্ডের ক্ষেত্রে দমকলকে সাহায্য করার জন্যে মেলায় মোতায়েন করা হয়েছে।
মেলার ভিড়ে মহিলাদের সঙ্গে অশালীন আচরণের অভিযোগ উঠলে কী ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে? এসপি বলেন, ‘‘কয়েক জন মহিলা ও পুরুষ পুলিশকর্মী সাদা পোশাকে মেলায় ঘুরবেন। চুরি, ছিনতাই ও মহিলাদের সঙ্গে অভব্য আচরণ যাতে না হয়, সে দিকে তাঁরা নজর রাখবেন।’’ তিনি আরও জানান, কেউ মেলায় হারিয়ে গেলে তাঁদের পরিচিতের কাছে ফিরিয়ে দিতে দু’টি শিবির থাকবে।
পুরুলিয়ার প্রীতিবালা কর, কালীদাসী পোরেল, বাঁকুড়ার সুব্রত শীল বলছেন— ‘‘প্রতি বছরই আসি। এ বারের ব্যবস্থা আরও ভাল।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy