Advertisement
১৯ নভেম্বর ২০২৪

অলিগলিতেও এখন মনসা পুজো পুরুলিয়ায়

রাস্তাঘাটে ভিড় নেই। হোটেলের ঝাঁপ বন্ধ। সকাল সকালে বিকিকিনি শেষ করে বাড়ি ফিরে গিয়েছেন সব্জি বিক্রেতারাও। বৃহস্পতিবার মনসা পুজোর দিন পুরুলিয়ার বিভিন্ন এলাকার ছবিটা ছিল এ রকমই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
মানবাজার শেষ আপডেট: ১৯ অগস্ট ২০১৬ ০২:০২
Share: Save:

রাস্তাঘাটে ভিড় নেই। হোটেলের ঝাঁপ বন্ধ। সকাল সকালে বিকিকিনি শেষ করে বাড়ি ফিরে গিয়েছেন সব্জি বিক্রেতারাও। বৃহস্পতিবার মনসা পুজোর দিন পুরুলিয়ার বিভিন্ন এলাকার ছবিটা ছিল এ রকমই।

পুরুলিয়ার বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা জানান, মনসাপুজোর চল দিন দিন বেড়ে চলেছে। অলিতে গলিতেও শুরু হয়েছে পুজো। জেলায় মোট কত মনসাপুজো হয় সেই হিসাব পুলিশের কাছে নেই। জেলার ডেপুটি পুলিশ সুপার (ডিআইবি) প্রভাকর ভট্টাচার্য জানান, দুর্গাপুজো বা কালীপুজোর ক্ষেত্রে যেমন থানা ভিত্তিক নথিভুক্তিকরণ হয়, মনসাপুজোর ক্ষেত্রে তা হয় না। জেলা পুলিশের এক কর্তার দাবি, আপাতত জেলায় পুজোর সংখ্যাটা মোটেও হাজারের কম নয়। তবে তার মধ্যে অধিকাংশই পারিবারিক পুজো।

মনসাপুজোর এ হেন জনপ্রিয়তার কারণ কী? জেলার জেলার লোকগবেষক সুভাষ রায় জানান, মনসা লৌকিক দেবী। গ্রামাঞ্চলেই তাঁর পুজোর প্রচলন বেশি। জল, জমি, জঙ্গলে নিয়ে যাঁদের দিন কাটে, সাপের ভয় যাঁদের কাজের অঙ্গ— সেই সমস্ত খেটে খাওয়া মানুষজনই এই পুজো করেন। সাবেক মানভূম জেলাই হোক বা আজকের পুরুলিয়া, এই অঞ্চলে মূলত বাস করে আসছেন কৃষিজীবী মানুষজন। আজকাল অনেকে চাকরি বা ব্যবসা করলেও সেই সংখ্যাটা তুলনায় অনেক কম। জেলার ইতিহাস গবেষক প্রদীপ মণ্ডল বলেন, ‘‘আগে দুর্গাপুজো হত জমিদার বাড়িতে বা উচ্চবিত্ত বনেদি পরিবারে। গ্রামের অনের গরিব মানুষই দুর্গাপুজোকে এখনও বড়লোকদের পুজো মনে করেন। তাঁদের জীবনযাপনের অনেক কাছাকাছি মনসাপুজো। তাই দুর্গাপুজোয় হইহই করে ঠাকুর দেখতে বেরোলেও মনসাপুজোতেই অনেক পরিবারে ছোটদের গায়ে নতুন জামা ওঠে। ভালমন্দ খাওয়াদাওয়া হয়।’’

পুরুলিয়ার মাঙ্গুড়িয়া বস্তি চাটানিপাড়ার বাসিন্দা সুনীল সহিস জানান, তাঁদের পারিবারিক মনসাপুজো দেড়শো বছরের পুরনো। সুনীলবাবু বলেন, ‘‘আমাদের পারিবারিক ভাবে প্রতিমা গড়া হয়। তা ছাড়াও অনেকের মানত থাকে। তাঁরাও প্রতিমা নিয়ে আসেন।’’ তিনি জানান, বুধবার দুপুর পর্যন্ত এ রকম ৭৩টি প্রতিমা এসেছে। কুলদাপ্রসাদ লেনের পুজোটি পুরুলিয়ার অন্যতম প্রাচীন বারোয়ারি মনসা পুজো। উদ্যোক্তারা জানান, এ বছর কুমোরটুলির মৃৎশিল্পী প্রতিমা গড়েছেন। পোকাবাঁধ পাড়া সর্ষে বাড়ির পুজো শতবর্ষ ছাড়িয়েছে। সেই পুজোর অন্যতম উদ্যোক্তা আনন্দ বাউরি বলেন, আমরা নিজেরাই চাঁদা তুলে পুজো করি। বাইরের কারও থেকে টাকা নেওয়া হয় না। মানবাজারের ধীবর সমিতি বা মুচাইকুলি মনসা পুজো সমিতির কর্মকর্তারাও বাইরের কারও থেকে চাঁদা না নিয়েই পুজো করা হয় বলে জানিয়েছেন। এই সমস্ত পুজোর মধ্যেই প্রতিমা, প্যান্ডেল, এবং বিসর্জনের বাদ্যিতে একে অপরকে টেক্কা দেওয়ার লড়াই চলে।

শহরে কর্মসূত্রে থাকেন যাঁরা, পুজোর টানে তাঁদের অনেকেই ছুটি নিয়ে গ্রামে চলে গিয়েছিলেন। পুরুলিয়া শহরের হোটেলেরই ঝাঁপ বন্ধ ছিল। মালিকেরা জানান, রান্নাবান্না বা সাফাইয়ের অধিকাংশ কর্মীই ছুটি নিয়ে চলে গিয়েছেন। মানবাজারের একটি হোটেল এবং লজের মালিক নিতাই রায় বলেন, ‘‘গুটিকতক কর্মী নিয়ে কোনওক্রমে হোটেল চালু রেখেছি।’’ মানবাজারের দৈনিক সব্জি বাজারও বসেছিল নামমাত্র। রাস্তায় হাতে গোনা কয়েকটি বাসের দেখা মিললেও তাতে যাত্রী ছিল না। জেলা বাস মালিক সমিতির সদস্য মানবাজারের মনোজ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বেশিরভাগ চালক এবং কর্মী ছুটি নিয়েছেন। কলকাতাগামী ডে এবং নাইট সার্ভিসের বাসগুলি চালানোই দায় হবে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Manasa puja
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy