এইভাবেই গাড়ি সাজিয়ে মেয়েকে বাড়ি নিয়ে গেলেন লাভপুরের নাসিরুল ইসলাম (বাঁ দিকে)। —নিজস্ব চিত্র।
আজও এমন অনেক পরিবার আছে, যেখানে মেয়ে জন্মালে মাকে খোঁটা শুনতে হয়। সদ্যোজাত কন্যাসন্তানকে হাসপাতালে ফেলে পালানোর ঘটনাও ঘটে। কন্যাসন্তান বিক্রি করে দেওয়ার অভিযোগ প্রায়ই শোনা যায়। লাভপুরের নাসিরুল ইসলাম কিন্তু অন্য রকম ভেবেছিলেন। তাই তো গাড়ি সাজিয়ে সদ্যোজাত মেয়েকে বরণ করে বাড়ি নিয়ে গেলেন তিনি।
লাভপুর ষষ্ঠীনগরের বাসিন্দা বাসিন্দা নাসিরুল পেশায় বেসরকারি সংস্থার কর্মী। বছর পঁচিশের ওই যুবকের সঙ্গে বছরখানেক আগে সাঁইথিয়ার বড়সিজা গ্রামের সাবিয়া খাতুনের বিয়ে হয়। তিন ডিসেম্বর সাঁইথিয়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালে তিনি এক কন্যাসন্তানের জন্ম দেন। মঙ্গলবার ফুল, বেলুন দিয়ে মাতৃযান প্রকল্পের অ্যাম্বুল্যান্স সাজিয়ে স্বাস্থ্যকর্মীদের মিষ্টিমুখ করিয়ে মেয়েকে বাড়ি নিয়ে যান নাসিরুল।
তিন ভাইয়ের ছোট নাসিরুল। বড় দাদা কবিরুলের দুই ছেলে এক মেয়ে। ছোট দাদার এক ছেলে এক মেয়ে। তার পরেও ঘরে মেয়ে আসায় খুশির অন্ত নেই পরিবারে। নাসিরুলের বাবা শেখ আব্দুল মুজিদ অবসরপ্রাপ্ত পঞ্চায়েত কর্মী। মা লুৎফরন্নেসা গৃহবধূ। তাঁরা বলেন, ‘‘ছেলে হোক আর মেয়েই হোক সব আল্লার দান। যাঁরা সেই দানের বাছবিচার করেন তাঁরা আসলে আল্লার অমর্যাদা করেন।’’
ওই যুবকের কাণ্ডকারখানায় বিস্মিত অ্যাম্বুল্যান্স-কর্মী বিশ্বজিৎ বাউড়ি এবং গোপীনাথ দও। তাঁরা বলেন, ‘‘আমরা বহু মা এবং সদ্যোজাতকে বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে এসেছি। কিন্তু এর আগে কাউকে এত খুশি মনে গাড়ি সাজিয়ে কন্যা সন্তানকে বরণ করে নিয়ে যেতে দেখিনি।’’ এর মধ্যেই সদ্যোজাতের নামকরণ করে ফেলা হয়েছে। নাম দেওয়া হয়েছে হেযা মেহের। যার অর্থ, সুন্দর এবং দয়ালু।
কী বলছেন ওই দম্পতি ? তাঁরা বলেছেন, ‘‘ছেলে-মেয়ে যাই হোক, আমরা চেয়েছিলাম যে আসছে সে যেন সুস্থ এবং স্বাভাবিক অবস্থায় আসে। সেই প্রত্যাশা পূরণ হয়েছে। আবার কী চাই?’’ নাসিরুলের সংযোজন, ‘‘মেয়েরা হল মা লক্ষ্মী। লক্ষ্মীকে বরণ করে ঘরে নিয়ে এসেছি। মেয়েরা সব দিকে এগিয়ে চলেছে। সরকার তাদের জন্য এত কিছু করছে। তার পরেও মেয়েদের অবহেলা করাটা অন্যায়।’’
যুবকের শ্বশুর মোস্তফা আহমেদ শেখ এবং শাশুড়ি নাজমা খাতুন বলেন, ‘‘মেয়ের প্রথম সন্তান মেয়ে হয়েছে বলে আমরা একটু সংশয়ে ছিলাম। মেয়ের শ্বশুরবাড়ির লোকেরা সেই সংশয় দূর করে দিয়েছেন।’’ লাভপুর সত্যনারায়ণ শিক্ষা নিকেতন উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা তথা সমাজকর্মী মনীষা বন্দ্যোপাধ্যায়, মারিয়ম খাতুনরা বলেন, ‘‘ওই যুবক এবং তাঁর পরিবারকে অভিনন্দন। তাঁদের মানসিকতা অনুসরণযোগ্য।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy