Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Magh Mela

কোণঠাসা কুটিরশিল্প প্রাণ পায় মাঘমেলায়

বীরভূম জেলার বিভিন্ন স্থানে ১ মাঘ মেলা বসে। ওই সব মেলা সাধারণত ব্রহ্মদৈত্যের মেলা হিসাবে পরিচিত।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

অর্ঘ্য ঘোষ 
ময়ূরেশ্বর শেষ আপডেট: ১৬ জানুয়ারি ২০২০ ০০:৩৬
Share: Save:

ক্রমবর্ধমান প্লাস্টিক সভ্যতার দাপটে বিক্রিবাটা কমে গিয়েছে গ্রামীণ কুটির শিল্পের। এর ফলে বিপন্ন হয়ে পড়েছেন অধিকাংশ কুটিরশিল্পী। মাঘমেলার উপরে ভরসা করেই কোনও রকমে নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছেন ওই সব কুটিরশিল্পী। কারণ, ওই মাঘমেলাতেই কিছুটা বিক্রিবাটা আজও হয়। তাই বছরভর এই মেলার দিকে তাকিয়ে থাকেন তাঁরা।

বীরভূম জেলার বিভিন্ন স্থানে ১ মাঘ মেলা বসে। ওই সব মেলা সাধারণত ব্রহ্মদৈত্যের মেলা হিসাবে পরিচিত। ওই মেলা মূলত এক দিনের। তবে কোথাও একাধিক দিনও মেলা চলে। আজ, বৃহস্পতিবার সেই মাঘমেলা। তাই ব্যস্ততা তুঙ্গে উঠেছে কুটিরশিল্পীদের। কোথাও চলছে শেষ মুহূর্তের কাজ। কোথাও বা চলছে শিল্প সামগ্রী বাঁধাছাদার প্রস্তুতি। কার্যত ঘুম নেই কুটির শিল্পীদের। তাঁরাই আক্ষেপের সঙ্গে জানালেন, এক সময় কুমোর, কামার, ছুতোর, বিত্তার প্রভৃতি সম্প্রদায়ের জীবিকা ছিল নিজেদের তৈরি শিল্পকর্ম। ওই সব শিল্পসামগ্রী বিক্রি করে ভাত-কাপড়ের সংস্থান হত। কিন্তু, প্লাস্টিক এবং যন্ত্র সভ্যতার দাপটে হারিয়ে গিয়েছে দৈনন্দিন বিক্রিবাটা। অনেকই বাপ-ঠাকুদার পেশা থেকে ছিটকে চলে গিয়েছেন অন্য পেশায়।

কিন্তু, পৌষের শুরুতে তাঁদেরই অনেকে ফেরেন পুরনো পেশায়। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত তৈরি করেন নানা শিল্প সামগ্রী। পয়লা মাঘ বিভিন্ন জায়গার ব্রহ্মদৈত্যের মেলায় পসরা সাজিয়ে বসেন। শিল্পসামগ্রী বিক্রি করে বাড়তি দু’পয়সা লাভের মুখ দেখতে পান কুটির শিল্পীরা।

ময়ূরেশ্বরের ঢেকা, শিবগ্রাম, সাঁইথিয়ার ভ্রমরকোল, রক্ষাকালীতলা, লাভপুরের লায়েকপুর, নানুরের থুপসড়া-সহ বিভিন্ন জায়গায় এক দিনের ব্রহ্মদৈত্যের মেলা বসে। ওই সব মেলায় বিক্রিবাটার জন্য আজও বেশ খানিকটা আগে থেকেই শিল্পসামগ্রী তৈরি করতে শুরু করেন কুটিরশিল্পীরা। ঢেকা পঞ্চায়েতের লোকপাড়া, বটনগর-সহ বেশ কয়েকটি গ্রামে দলুই তথা

বিত্তার সম্প্রদায়ের বাস। এক সময় ওই পাড়ার বাসিন্দাদের বাঁশের ঝুড়ি-কুলো সহ বিভিন্ন সামগ্রী তৈরি ছিল একমাত্র জীবিকা। চাহিদা কমে যাওয়ায় পরিবারের মহিলারা টুকটাক কাজ করলেও বেশির ভাগ পুরুষই চলে গিয়েছেন অন্য পেশায়। কিন্তু মাঘমেলায় বিক্রির জন্য মাস খানেক আগে থেকে ওই সব পুরুষও ফিরেছেন পারিবারিক পেশায়।

বুধবার লোকপাড়া দলুই পাড়ায় গিয়ে দেখা গেল মেলায় নিয়ে যাওয়ার জন্য শিল্পসামগ্রী বাঁধাছাদা করছেন। উত্তম দলুই, সুশান্ত দলুইরা বললেন, ‘‘বিক্রিবাটা কমে যাওয়ায় ঝুড়ি বোনা বর্তমানে সহায়ক পেশা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে, এক দিনের মেলায় এখনও মোটামুটি বিক্রিবাটা হয় বলেই মাস খানেক আগে থেকে শিল্প সামগ্রী তৈরি করে রাখি। লাভ যাই হোক না কেন, ধারাবাহিকতার কারণে শিল্পসামগ্রী নিয়ে মেলায় যাওয়াটা অভ্যাসে দাঁড়িয়ে গিয়েছে।’’

শুধু কুটিরশিল্পীরা নন, মার খাচ্ছেন অন্য ব্যবসায়ীরাও। মল্লারপুরের মুরলীডাঙালে ব্রহ্মদৈত্য মেলা বসে পাঁচ দিনের। সাঁইথিয়ার রক্ষাকালী তলায় মেলা তিন দিনের। মুরলীডাঙালের শ্যামাপ্রসাদ মণ্ডল, সাঁইথিয়ার রানা বৈদ্যরা বলেন, ‘‘আগে যাত্রা, ম্যাজিক, আলকাপ, ঝুমুর নিয়ে মেলার কটা দিন এলাকা জমজমাট হয়ে থাকত। এখন আর সেই জমাটি ভাবটা নেই। কুটিরশিল্পীদের মতো হারিয়ে গিয়েছে ওই সব বিনোদনও।’’

তবু এটা সত্যি যে, আজও প্রয়োজন ফুরোয়নি মেলার। কিছু কিছু সামগ্রীর জন্য আজও গুরুত্ব হারায়নি প্রাচীন মাঘমেলা। ময়ূরেশ্বরের বীরনগরীর তামাল মণ্ডল, আমোদপুরের সজল চট্টোপাধ্যায়দের কথায়, ‘‘যন্ত্র সভ্যতার যুগেও হাতা, খুন্তি, ঝুড়ি, কুলোর মতো কিছু সামগ্রীর উপযুক্ত বিকল্প নেই। তাই সারা বছরের প্রয়োজনের জন্য ওই সব সামগ্রী কেনার জন্য মেলায় যেতেই হয়।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy