মহম্মদবাজারের সভায় অমিত শাহ। ছবি: তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়
শুরুটা করেছিলেন রবীন্দ্রনাথের কবিতার লাইন, ‘চিত্ত যেথা ভয় শূন্য, উচ্চ যেথা শির...’ দিয়ে। তার পরে তৃণমূল সরকারের ‘ব্যর্থতা’ তুলে ধরতে অমিত শাহ ছুঁয়ে গেলেন চিটফান্ড, সিন্ডিকেট, অনুপ্রবেশ, পুলওয়ামা-সহ নানা প্রসঙ্গ। মঞ্চ থেকে তুলে ধরলেন মোদী সরকারের সাফল্যের খতিয়ান।
কিন্তু, বীরভূমে দাঁড়িয়ে তৃণমূলের বিরুদ্ধে ২১ মিনিট ১৭ সেকেন্ডের বক্তৃতায় যে ঝাঁঝ দলের সর্বভারতীয় সভাপতির বক্তৃতা থেকে আশা করেছিলেন বিজেপি-র কর্মী-সমর্থকেরা, সেটা মিলল না মহম্মদবাজারের গণপুরের নির্বাচনী সভা থেকে। সভা শেষে কর্মীদের দু’এক জন তো আড়ালে বলেই ফেললেন, ‘‘অমিতজি তৃণমূলকে আক্রমণ করেছেন ঠিকই। কিন্তু অনুব্রত মণ্ডলের জেলা বীরভূমে শাসকদলের যে ‘সন্ত্রাস’, তার বিরুদ্ধে ভয় শূন্য হয়ে ফেরার মতো রসদ মিলল কই!’’ বিজেপির জেলা নেতারা অবশ্য দাবি করেছেন, খুব ভাল বলেছেন অমিত। সভায় ভিড়ও হয়েছিল আশানুরূপ।
সিউড়িতে উপযুক্ত মাঠ না পেয়ে সোমবার অমিত শাহের নির্বাচনী সভা সরিয়ে বিজেপির শক্ত ঘাঁটি গণপুরে করার পর থেকেই উৎসাহ বেড়ে গিয়েছিল দলে। শুধু মহম্মদবাজার নয়, মযূরেশ্বর, মল্লারপুর ও রামপুরহাট— বিজেপি-র কিছুটা প্রভাব থাকা এই সব এলাকা থেকে সভাস্থলের দূরত্ব কম হওয়ায় খুশি হয়েছিলেন কর্মী-সমর্থকেরা। এ দিন সকাল থেকেই সভাস্থলে ভিড় জমান তাঁরা। ছিলেন বীরভূম ও বোলপুর কেন্দ্রের দুই বিজেপি প্রার্থী দুধকুমার মণ্ডল, রামপ্রসাদ দাস, জেলা সভাপতি রামকৃষ্ণ রায়-সহ সব জেলা নেতারা। বিজেপির দাবি, ভিড় হয়েছিল হাজার পঁচিশেক লোকের। পুলিশের হিসাবে যা, ১০ থেকে ১২ হাজার।
সোমবার বিকেল ৩টে নদিয়া থেকে অমিত শাহের চপার গণপুরের মাটি ছুঁতেই ঠায় অপেক্ষায় থাকা ভিড়ে উৎসাহ বেড়ে যায়। কৈলাস বিজয়বর্গীয়ের মিনিট দু’য়েকের বক্তব্য ও বরণ-পর্ব চুকতেই মাইক হাতে নেন শাহ। রবীন্দ্রনাথ, মা তারা ও বামাক্ষ্যাপাকে প্রণাম করে বক্তব্যের শুরুতেই আক্রমণের নিশানা করেন রাজ্যের তৃণমূল সরকারকে। রবীন্দ্রনাথের কবিতার চারটে লাইনের ব্যাখ্যা করে অমিত বলেন, মমতা সরকারকে উৎখাত করতে পারলে, তবেই ভয় মুক্ত বাংলা সম্ভব। সেই সঙ্কল্প নিয়েছে বিজেপি। এ দিনের জনসভায় উপস্থিত ভিড়ের
উদ্দেশে বলেন, ‘‘আমি সারা দেশে ২৫০টি লোকসভা এলাকায় গিয়েছি। পূর্ব-পশ্চিম-উত্তর-দক্ষিণ যেখানেই দিয়েছি, সেখানেই আওয়াজ শুনেছি নরেন্দ্র মোদীকে ফের একবার প্রধানমন্ত্রী এবং বিজেপির সরকারকে ক্ষমতায় দেখতে চান দেশের মানুষ। আপনারা কী চান?’’
কেন মোদী সরকার ক্ষমতায় ফিরবে, তার ব্যাখ্যাও নিজের মতো করে দিয়েছেন মোদীর সেনাপতি। দেশের গরিব মানুষ, আদিবাসীদের জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী কী কী কাজ করেছেন, তার সবিস্তার ফিরিস্তি দিয়ে অমিতের দাবি, ‘‘এক দিকে যখন নরেন্দ্র মোদী গরিব মানুষের জন্য কাজ করছেন, সেখানে পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল সরকার সিন্ডিকেটের মাধ্যমে গরিব মানুষকে লুটেছে। ইট, বালি, সিমেন্ট পাথর— আপনি যাই কিনুন, আপনাকে ট্যাক্স দিতে হবে। গরু পাচার থেকে অনুপ্রবেশ সব হচ্ছে। থমকে রয়েছে শুধু বিকাশ।’’ শাহের সংযোজন, ‘‘আপনারা আমাকে বলুন, কমিউনিস্ট আর তৃণমূল সরকারের তফাত আছে কি? বাংলা নয়, দলের গুন্ডাদের উন্নতির জন্য কাজ করছে টিএমসি।’’ অমিতের আরও দাবি, গত পাঁচ বছরে কেন্দ্রীয় সরকার এ রাজ্যের উন্নতিতে নানা খাতে ৪ লক্ষ কোটিরও বেশি টাকা দিয়েছে। সেই টাকা মানুষের হাতে পৌঁছেছে কি? ‘‘কংগ্রেস, তৃণমূল ও কমিউনিস্টরা রাজ্যের বিকাশ করেনি। বাংলাকে কাঙাল করেছে।’’—অভিযোগ বিজেপি সভাপতির।
নিজের বক্তৃতায় ‘টিএমসি’র নতুন অর্থ জুড়ে দেন শাহ। তাঁর কথায়, ‘‘টিএমসি মানে, টি ফর তুষ্টিকরণ, এম ফর মাফিয়া এবং সি ফর চিটফান্ড।’’ ফের মোদী সরকার হলে চিটফান্ডে অভিযুক্তদের তিন মাসের মধ্যে জেলে পাঠানোর হুঁশিয়ারিও তিনি দিয়েছেন।
জেলার বিজেপি কর্মীরা বলছেন, এ সব কথা বহু বার অমিত শাহ রাজ্যের বিভিন্ন সভায় বলেছেন। বীরভূমে বিশেষ করে গণপুরে এসে জেলা নিয়ে বা ‘সন্ত্রাস’ নিয়ে তৃণমূলকে বিঁধলে ভাল হত। কেননা এই জেলায় গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে ৮৪ শতাংশ আসনে ভোটই হয়নি।
জেলা বিজেপি-র এক নেতার কথায়, ‘‘এ বারও যে সব ঠিক থাকবে, সে ভরসা নেই। দলের সভাপতি এ সব নিয়ে সরব হলে কর্মীদের মনোবল আরও চাঙ্গা হত।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy