শিল্প হোক, কিন্তু স্পঞ্জ আয়রন কারখানার মতো দূষণ যেন না ছড়ায়। সিমেন্ট কারখানা তৈরির ছাড়পত্র পাওয়ার আগে পরিবেশ সংক্রান্ত জনশুনানিতে এমনই দাবি তুললেন স্থানীয় বাসিন্দা ও জমিদাতারা।
নিতুড়িয়ার সড়বড়ি কমিউনিটি হলে শুক্রবার ‘শ্রী সিমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড’ নামে একটি সংস্থার কারখানা করা নিয়ে দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ ওই শুনানি ডেকেছিল। এই ব্লকের দিঘা পঞ্চায়েতের দিঘা ও পর্বতপুর মৌজায় ১০৪ একর জমিতে ছশো কোটি টাকা ব্যয়ে পাঁচ মেট্রিক টন সিমেন্ট ও কুড়ি মেগাওয়াটের বিদ্যুৎ কারখানা তৈরি করার প্রস্তাব রয়েছে। বস্তুত ওই এলাকায় এখন পর্যন্ত যা স্পঞ্জ আয়রন কারখানা রয়েছে, তার দূষণে এলাকার বাসিন্দারা নাজেহাল। তাই এলাকায় নতুন করে কারখানা হচ্ছে শুনলেই এলাকার কিছু বাসিন্দার মনে নতুন করে দূষণ ছড়ানোর আশঙ্কা তৈরি হয়।
স্থার চিফ এগ্জিকিউটিভ (কো-অর্ডিনেশন) রবি তিওয়ারির দাবি, কেন্দ্রীয় পরিবেশ মন্ত্রকের বিধি মেনে তাঁরা উন্নত প্রযুক্তির যন্ত্র ব্যবহার করবেন। ফলে দূষণের সম্ভবনা নেই। কারখানা লাগোয়া এলাকায় তাঁরা ৩৫ একর জমিতে বনসৃজন করবেন। কারখানার বর্জ্য দূষিত জল যাতে বাইরে না যায়, সে ব্যবস্থাও করা হবে বলে তিনি আশ্বাস দিয়েছেন।
সংস্থাটির দাবি, রাজস্থান, হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, বিহার, ছত্তীশগঢ়, কর্নাটকের পরে এ রাজ্য নিতুড়িয়ায় তারা সিমেন্ট কারখানা করতে চলেছেন। সংস্থার যুগ্ম সভাপতি সঞ্জয় মেহেতা বলেন, ‘‘১০৪ একর জমির মধ্যে এখনও অবধি ৪৭ একর জমি স্থানীয়দের কাছ থেকে কেনা হয়েছে। বাকি জমি কেনার কাজ চলছে।’’ তিনি জানান, কমবেশি সত্তর একর জমি কেনার পরেই কারখানার নির্মাণ কাজ শুরু করা হবে।
তবে কারখানা তৈরির আগে কেন্দ্রের পরিবেশ মন্ত্রকের ছাড়পত্রের প্রয়োজন। যে বিষয়গুলি দেখে ছাড়পত্র দেওয়া হয়, ওই জনশুনানি তারই একটি অঙ্গ। শুনানিতে উপস্থিত ছিলেন পুরুলিয়ার অতিরিক্ত জেলাশাসক প্রবালকান্তি মাইতি (উন্নয়ন), দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের কর্তা শৌভিক গঙ্গোপাধ্যায়, সভাধিপতি সৃষ্টিধর মাহাতো, নিতুড়িয়া পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি শান্তিভূষণপ্রসাদ যাদব প্রমুখ।
জমিদাতাদের মধ্যে নান্টু মণ্ডল, প্রসন্ন রায় থেকে স্থানীয় বাসিন্দা সুকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়, অমরচন্দ্র মাজিরা সেখানে অভিযোগ করেন, ‘‘স্পঞ্জ আয়রন কারখানাগুলিও চালু হওয়ার আগে এমন জনশুনানিতে দূষণ রোধে গালভরা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে তা মেলেনি।’’ এলাকাবাসী শুনানিতে স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁরা শিল্প চান। কিন্তু দূষণের মাত্রা যাতে আর না বাড়ে, তা সংস্থাকে নিশ্চিত করতে হবে। কারখানা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, প্রথমদিকে ভূগর্ভস্থ জল তারা ব্যবহার করলেও পরে ধাপে বৃষ্টির জল সংরক্ষণ করে সেই জল কারখানায় ব্যবহার করা হবে। তাতে খরাপ্রবণ এলাকায় ভূগর্ভস্থ জলের ভাণ্ডারে টান পড়ারও আশঙ্কা করেছেন অনেকে।
সৃষ্টিধরবাবু ও শান্তিভূষণবাবুর দাবি, রঘুনাথপুর মহকুমা এলাকায় শিল্পায়নে নজর দিচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই প্রেক্ষিতেই শ্রী সিমেন্টের মতো বড় সংস্থা এলাকায় বিনিয়োগে উৎসাহী হয়েছে। তবে পরিবেশ ও স্থানীয়দের কর্মসংস্থান, এলাকার সামাজিক উন্নয়নের মতো বিষয়গুলি নিশ্চিত করার জন্য সংস্থার কাছে আবেদন জানান তাঁরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy