Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪

ডিএম বললেন বই খোলো, চুপ অনেকে

শনিবার পরিদর্শনে গিয়ে এ ভাবেই একেবার স্কুলের বাস্তব সমস্যা উঠে এল জেলাশাসকের সামনে।

পরিদর্শনে: আমগাছি গ্রামের উদয়ন পাঠশালায় জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু। ছবি: তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়

পরিদর্শনে: আমগাছি গ্রামের উদয়ন পাঠশালায় জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু। ছবি: তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়

নিজস্ব সংবাদদাতা 
সিউড়ি শেষ আপডেট: ০৮ ডিসেম্বর ২০১৯ ০০:২৪
Share: Save:

হঠাৎ পরিদর্শনে স্কুলে হাজির জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু। ক্লাসে ঢুকে শিক্ষকদের নমস্কার জানিয়ে পড়ুয়াদের বই দেখিয়ে তিনি বললেন, ‘‘সবাই বই খোলো।’’ কিন্তু খুদে ছাত্রছাত্রীদের অনেকেই চুপ। তারা ক্লাসের শিক্ষক ও জেলাশাসকের মুখের দিকে কার্যত অবাক হয়ে তাকিয়ে। সমস্যার সমাধান হল ক্লাসে উপস্থিত শিক্ষকের কথায়। তিনি বললেন, ‘‘পুঁথি উডুক পে।’’ সেই কথা শুনেই তৎক্ষণাৎ বই খুলে ফেলল ওই পড়ুয়ারা! শিক্ষকই তখন জানালেন এর ‘রহস্য’। জেলাশাসকের উদ্দেশে তিনি বললেন, ‘‘এই স্কুলের এটাই হল সব থেকে বড় সমস্যা। স্কুলের সমস্ত পড়ুরাই আদিবাসী, কিন্তু স্কুলে একজনও সাঁওতালি ভাষার শিক্ষক নেই। আমি নিজেই তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির পড়ুয়াদের কাছে কিছুটা সাঁওতালি ভাষা শিখেছি।’’

শনিবার পরিদর্শনে গিয়ে এ ভাবেই একেবার স্কুলের বাস্তব সমস্যা উঠে এল জেলাশাসকের সামনে। প্রশাসন সূত্রে খবর, স্কুলের সমস্ত দিক খতিয়ে দেখতে শনিবার দিনটিকে ‘পরিদর্শন দিবস’ হিসাবে বেছে নেওয়া হয়েছিল। সেই উপলক্ষে এ দিন জেলার প্রশাসনিক কর্তারা কোনও না কোনও স্কুলে আচমকা পরিদর্শনে গিয়েছিলেন। সিউড়ি ১ ব্লকের নগরী পঞ্চায়েতের আদিবাসী অধ্যুষ্যিত আমগাছি গ্রামের উদয়ন পাঠশালায় যান জেলাশাসক। ওই স্কুলেই এই ঘটনা ঘটে।

স্কুল প্রাঙ্গণ ঘুরতে ঘুরতে জেলাশাসক গিয়ে পৌঁছলেন আরেকটি ক্লাসে। সেখানেও একই সমস্যা দেখলেন জেলাশাসক। এক ছাত্রকে তিনি বললেন, ‘‘এবিসিডি লিখে দেখাও।’’ ছাত্রটি তা শুনে চুপ। এ বারও ক্লাসের শিক্ষক বলে উঠলেন, ‘‘অল পে এবিসিডি।’’ তা শোনা মাত্রই নিমেষের মধ্যে সে খাতায় লিখে জেলাশাসককে দেখালো। তা দেখে খুশি হন জেলাশাসক ও সমগ্র শিক্ষা মিশনের জেলা প্রকল্প আধিকারিক বাপ্পা গোস্বামী। জেলাশাসককে পেয়ে সাঁওতালি ভাষার শিক্ষকের অভাবের কারণে স্কুলে যে সমস্যা রয়েছে সেই কথা তুলে ধরা হয়। শিক্ষকেরা জানান, প্রি-প্রাইমারি বিভাগের একেবারে খুদে পড়ুয়াদের অনেকেই সাঁওতালিতে কথা বলতে অভ্যস্ত হওয়ায় চট করে বাংলা বুঝতে পারে না। একই সঙ্গে স্কুলে একটি পাঁচিলের দাবিও করা হয়। স্কুলের প্রধানশিক্ষক দেবদাস সাহা বলেন, ‘‘আমরা ম্যাডামকে বললাম স্কুলে সাঁওতালি ভাষার শিক্ষকের জন্য। উনিও আমাদের এই সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন।’’ জেলাশাসক বলেন, ‘‘স্কুলে ভাষাগত একটা সমস্যা রয়েছে। আমরা বিষয়টি দেখছি।’’

এ দিন জেলাশাসককে স্কুলের শিক্ষকের ভূমিকাতেও দেখা যায়। এ দিন তিনি দু’টি ক্লাসে গিয়েই ছাত্রছাত্রীদের রিডিং পড়ে শোনান ও অঙ্কও কষে দেখান। সারা স্কুল পরিদর্শন করে দেখেন। পড়ুয়াদের কাছে এ দিন তিনি ছিলেন শিক্ষক ও স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে জেলাশাসক। স্কুলের মিড-ডে মিলের রান্নার জায়গা ও স্টোর রুমও ঘুরে দেখেন তিনি। সব দিক খতিয়ে দেখে তিনি মিড-ডে মিলের স্টোর রুম সাফ করার পরামর্শ দেন। এ ছাড়াও স্কুলের বেশকিছু পড়ুয়ার পায়ে জুতোর পরিবর্তে চটি পরে স্কুল আসতে দেখে শিক্ষকদের পড়ুয়ায়দের জুতো পরে স্কুল আসার অভ্যাস করানোর জন্য পরামর্শ দেন।

‘পরিদর্শন দিবসে’ কেবল প্রাথমিক স্কুলই নয় জেলার নানা হাইস্কুলেও পরিদর্শন হয়। সব ক্ষেত্রেই মিড-ডে মিলের খাবারের মান, পরিচ্ছন্নতা, স্কুলের পোশাক পরে আসার মতো বিষয়ে জোর দেওয়া হয়। নলহাটি ২ নম্বর ব্লকের লোহাপুর এমআরএম হাইস্কুলে যান রামপুরহাটের মহকুমাশাসক শ্বেতা আগরওয়াল। দশম শ্রেণির ক্লাসে গিয়ে মেয়েদের ভাল করে পড়াশোনা করে পরিবারের মুখ উজ্জ্বল করার পরামর্শ দেন মহকুমাশাসক। পড়ুয়ারা ভবিষ্যতে কী নিয়ে পড়াশোনা করতে চায় তা নিয়েও আলোচনা করেন তিনি। তাদের চাকরি করে নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে বিয়ের পরামর্শ দিয়েছেন। এ দিন নানুর চণ্ডীদাস স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয়ের পঠনপাঠনের মান, পরিকাঠামো সহ আনুসঙ্গিক অন্য বিষয় খতিয়ে দেখেন বোলপুরের মহকুমাশাসক অভ্র অধিকারী। সঙ্গে ছিলেন নানুরের বিডিও অরূপকুমার মণ্ডল। বল্লভপুর হাইস্কুলে পরিদর্শনে যান জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান প্রলয় নায়েক।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy