Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪
তৃণমূল ও প্রশাসনের বিরুদ্ধে ক্ষোভ

ভোট থেকে সরে গেলেন বাম নেতৃত্ব

বাঁকুড়ার এই কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্কে গত বছর ১৫ কোটি টাকা দুর্নীতির অভিযোগ সামনে আসে। ওই ঘটনায় মূল অভিযুক্ত দমদমের বাসিন্দা দেবাঞ্জন রায় নামের এক ব্রোকারকে পরে সিআইডি গ্রেফতার করে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ০৩ অগস্ট ২০১৭ ০৬:৪০
Share: Save:

সমবায় ব্যাঙ্কের পরিচালন সমিতির ভোটকে কেন্দ্র করে বাঁকুড়া শহরে রাজনৈতিক উত্তাপের পারদ চড়ে গিয়েছিল সিপিএমের হুঙ্কারে। বুধবার তাঁরা মিছিল করে ব্যাঙ্কে এসে মনোনয়ন পত্র জমা দেবেন বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন। কিন্তু এ দিন তাঁদের কাউকে ব্যাঙ্কের আশপাশে দেখাই গেল না। রাজ্য জুড়ে কার্যত অস্তিত্ব সঙ্কটে ভুগতে থাকা সিপিএম বাঁকুড়ায় তৃণমূলকে কতটা টেক্কা দেবে তা দেখতে বুধবার সকাল থেকে যাঁরা মাচানতলায় বাঁকুড়া সেন্ট্রাল কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্কের সামনে অপেক্ষায় ছিলেন, শেষ পর্যন্ত তাঁদের কপালে হতাশাই জুটল। ব্যাঙ্কে ঢোকা তো দূর, তল্লাটই মাড়ালেন না বাম নেতারা। দুপুরে সাংবাদিক বৈঠক ডেকে এই ভোট থেকে নিজেদের সরে দাঁড়ানোর কথা ঘোষণা করলেন তাঁরা।

বাঁকুড়ার এই কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্কে গত বছর ১৫ কোটি টাকা দুর্নীতির অভিযোগ সামনে আসে। ওই ঘটনায় মূল অভিযুক্ত দমদমের বাসিন্দা দেবাঞ্জন রায় নামের এক ব্রোকারকে পরে সিআইডি গ্রেফতার করে। অভিযোগ ওঠার পরেই ভেঙে দেওয়া হয় ওই সমবায় ব্যাঙ্কের পরিচালন সমিতি। জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসুকে বিশেষ আধিকারিকের দায়িত্ব দেয় রাজ্য সমবায় দফতর। সম্প্রতি বিডিসিসিবি-তে নতুন করে পরিচালন কমিটি গড়ার জন্য নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আগামী ২০ আগস্ট ওই নির্বাচন হওয়ার কথা।

কিন্তু সোমবার থেকে দু’দিন ওই ব্যাঙ্কে মনোনয়ন পত্র জমা করার দিন থাকলেও তৃণমূলের লোকজন বিরোধী প্রার্থীদের মারধর করে সেখানে ঢুকতে দিচ্ছেন না বলে অভিযোগ তোলেন বাম নেতারা। তাই সিপিএমের বাঁকুড়া জেলা সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য প্রতীপ মুখোপাধ্যায় মঙ্গলবার দাবি করেছিলেন, বুধবার মিছিল করে তাঁরা ব্যঙ্কে ঢুকে মনোনয়ম পত্র জমা দেবেন। গোলমালের আঁচ করে সকাল থেকে ব্যাঙ্কের সামনে পুলিশ মোতায়েন ছিল। উৎসাহী মানুষজনও ভিড় করেছিলেন। কিন্তু বেলা গড়াতে স্পষ্ট হয়, তাঁরা ভোট থেকে সরার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

কেন এমন হল? উত্তরে বাম নেতাদের মুখে তৃণমূলের সন্ত্রাস ও পুলিশ, প্রশাসনের বিরুদ্ধে অসহযোগিতার সেই পুরনো অভিযোগ। তাঁদের দাবি, গোলমালের আশঙ্কায় মিছিল করা চলবে না বলে এ দিন সকালেই পুলিশের তরফে প্রতীপবাবুদের জানিয়ে দেওয়া হয়। এরপরই বাম নেতারা নিরাপত্তার প্রশ্ন তোলেন পুলিশের কাছে।

পুলিশ সুপার সুখেন্দু হীরা বলেন, ‘‘গোলমালের আশঙ্কায় মিছিলের অনুমতি দেওয়া হয়নি। তবে ব্যাঙ্কের আশপাশে প্রচুর পুলিশ মোতায়েন ছিল। তারপরেও আরও নিরাপত্তা দাবি করে তাঁরা জেলা প্রশাসনের দ্বারস্থ হন। শেষ পর্যন্ত দুপুরে স্কুলডাঙায় সিপিএমের জেলা পার্টি অফিসে সাংবাদিক বৈঠক ডেকে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর কথা ঘোষণা করেন বাম নেতারা।

প্রতীপবাবু বলেন, “পুলিশ আমাদের বলেছিল, ওরা শুধু আমাদের ব্যাঙ্কে ঢোকার ব্যবস্থা করে দেবে। তারপরে আর কোনও ‘দায়’ নেবে না। অথচ ব্যাঙ্কের ভিতরেই তৃণমূলের গুন্ডারা মজুত ছিল। সেখানে গেলেই আমাদের প্রার্থীদের উপরে হামলা হতো। তাই ঝুঁকি নিইনি।” তাঁর আরও অভিযোগ, এ দিন সকালে ব্যক্তিগত কাজে তিনি ব্যাঙ্কে গেলে সেখানে জেলা তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক জয়দীপ চট্টোপাধ্যায় তাঁকে কটূক্তি করেন। যদিও তা মানেননি জয়দীপবাবু।

বাম নেতৃত্বের অভিযোগ, পুলিশ সিপিএমের মিছিলকে অবৈধ ঘোষণা করলেও তৃণমূলের জমায়েতকে ব্যাঙ্কের সামনে থেকে হটানোর কোনও চেষ্টাই করেনি। প্রশাসনও বিরোধীদের মনোনয়ন পত্র জমা দেওয়ার ক্ষেত্রে যে সমস্যা হচ্ছে, তা মেটাতে তৎপর হয়নি।

জেলা তৃণমূলের সহ-সভাপতি তথা বাঁকুড়া জেলা পরিষদের সভাধিপতি অরূপ চক্রবর্তীর কটাক্ষ, “সিপিএম কেন এত আতঙ্কে ভোগে বুঝি না। ঝামেলার কোনও সম্ভাবনাই ছিল না। পুলিশ তো কম ছিল না। খবর পাঠালে আমি নিজে ওদের প্রার্থীদের ব্যাঙ্কে নিয়ে গিয়ে মনোনয়ন জমা করাতাম।” ব্যাঙ্ক সূত্রে খবর, এই সমবায় ব্যাঙ্কের ন’টি আসনেই তৃণমূল সমর্থিত প্রার্থীরা মনোনয়ন পত্র জমা করেছেন।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE