বাঁকুড়ার ধলডাঙা মোড়ে জাতীয় সড়কে কৃষক সভার অবরোধ। বৃহস্পতিবার। — নিজস্ব চিত্র।
সিপিএমের জমায়েতে হামলা চালানোর অভিযোগ উঠল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ লাঠি চালায় বলেও অভিযোগ। সিপিএমের দাবি, পুলিশের লাঠির ঘায়ে তাদের এক কর্মী জখম হয়েছেন।
ধান ও আলুর দাম না পাওয়া, আলুচাষিদের আত্মহত্যা, একশো দিনের কাজ প্রকল্পে মজুরি বকেয়া-সহ নানা ঘটনার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার বাঁকুড়া সদর থানার হেভির মোড়, ধলড্যাং মোড় ও শালবনি এলাকায় পথ অবরোধ করে জমায়েত করে সিপিএমের কৃষক সংগঠন কৃষক সভা। এ দিন সকাল থেকেই আন্দোলনে নামেন শতাধিক সিপিএম কর্মী। রাস্তার উপরে আলু ছড়িয়ে চলছিল অবরোধ। সকাল ন’টা নাগাদ বিকনার মোড়ে ঝামেলা বাধে। স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে খবর, ওই সময় তৃণমূলের একটি মিছিল বিকনার মোড় পার হচ্ছিল। আন্দোলনকারী সিপিএম কর্মীদের সঙ্গে তাঁদের কথা কাটাকাটি শুরু হয়। তেতে ওঠে পরিস্থিতি। সিপিএমের দাবি, মিছিল থেকে লাঠি হাতে কিছু তৃণমূল কর্মী হামলা চালায় আন্দোলনকারীদের উপরে। হামলার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান আন্দোলনকারীরা।
এর পরেই হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। এর পরেই আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ লাঠি চালাতে শুরু করে বলেও দাবি সিপিএমের। দলের বাঁকুড়া জোনাল কমিটির সম্পাদক প্রতীপ মুখোপাধ্যায় বলেন, “আমাদের আন্দোলন চলছিল। হঠাৎই লাঠি হাতে তেড়ে এল কিছু তৃণমূলের লোকজন। আমরা রুখে দাঁড়াতেই ওরা পালিয়ে গেল। কিন্তু পুলিশ লাঠিচার্জ শুরু করল আমাদের কর্মীদের উপরে।’’ সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অমিয় পাত্র বলেন, “ঘটনার সময় আমি ধলড্যাং মোড়ে উপস্থিত ছিলাম। পুলিশের লাঠির আঘাতে স্বরূপ রায় নামে আমাদের এক কর্মী জখম হয়েছেন। তাঁকে বাঁকুড়া মেডিক্যালে ভর্তি করানো হয়েছে।’’ তাঁর অভিযোগ, পরিকল্পনা মাফিক তাঁদের কর্মীদের উপরে আক্রমণ করেছে তৃণমূল ও পুলিশ। তাঁরা থানায় অভিযোগ দায়ের করবেন। পুলিশ অবশ্য লাঠি চালানোর কথা অস্বীকার করেছে। জেলা পুলিশের ডিএসপি (আইনশৃঙ্খলা) বাপ্পাদিত্য ঘোষ বলেন, “কিছু তৃণমূল কর্মীর সঙ্গে সিপিএম কর্মীদের বচসা হচ্ছিল। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ দু’পক্ষকে সরিয়ে দেয়। লাঠি চার্জ করা হয়নি।’’ এ দিন বিকেল পর্যন্ত বাঁকুড়া সদর থানায় সিপিএমের তরফে কোনও অভিযোগ জমা পড়েনি বলেও জানিয়েছে পুলিশ। হামলার অভিযোগ অস্বীকার করেছে তৃণমূলও। দলের জেলা সভাপতি অরূপ খাঁ বলেন, “এ সব মনগড়া কথা বলে পুরনির্বাচনের আগে নিজেদের প্রচারের আলোয় আনতে চাইছে সিপিএম। যে দলটার অস্তিত্বই কার্যত নেই, তাদের উপর কেন কেউ হামলা করতে যাবে?’’
তবে, এ দিনের আন্দোলনের জেরে বাঁকুড়া-রানিগঞ্জ ৬০ নম্বর জাতীয় সড়ক, বাঁকুড়া-দুর্গাপুর, বাঁকুড়া-ছাতনা এবং বাঁকুড়া-বিষ্ণুপুর ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কে যানচলাচল ব্যাহত হয়। যদিও বাস ও গাড়ি আটকানো যাবে না বলে কৃষক সভাকে সাফ জানিয়ে দিয়েছিল জেলা প্রশাসন। এ দিন সকাল আটটা পর্যন্ত রাস্তা অবরোধ থাকলেও পুলিশ আন্দোলনকারীদের রাস্তার একধারে সরিয়ে বাস ও গাড়ি চলাচলের সুযোগ করে দেয়। তবে, যানজট এড়াতে লরি, ট্রাক, ডাম্পারের মতো গাড়িগুলিকে বিভিন্ন জায়গায় আটকে রাখে পুলিশ। এতে অবরোধের এলাকাগুলিতে যানজটও খুব একটা হতে দেখা যায়নি। যানজট এড়াতে প্রথম থেকেই হোমওয়ার্ক সেরে রেখেছিল পুলিশ।
ডিএসপি বলেন, “জনজীবন সচল রাখাই একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল আমাদের। তাই পরিকল্পনা করে বিভিন্ন জায়গায় পণ্যবাহী গাড়িগুলিকে আটকে যাত্রিবাহী বাস ও গাড়িকে আমরা পার করে দিয়েছি। অবরোধের সময়েও ঘুরপথে বহু বাসকে বের করে দিয়েছি আমরা।’’
ধান কেনার দাবি বিজেপি-র। চাষিদের কাছ থেকে ধান কেন, পাট্টাবিলিতে স্বচ্ছতা ও একশো দিনের প্রকল্পের কাজ চালু করা সহ ন’দফা দাবিতে ছাতনা বিডিওর কাছে স্মারকলিপি দিল বিজেপি। বৃহস্পতিবার বিজেপির ছাতনা ব্লক নেতৃত্ব মিছিল করে বিডিও অফিসে গিয়ে স্মারকলিপি জমা দেয়। উপস্থিত ছিলেন দলের জেলা কমিটির সদস্য অশোক বিদ, বিজেপির ছাতনা ব্লক সভাপতি দিলীপ মুর্মু প্রমুখ। অশোকবাবু বলেন, “কেন্দ্র ১০০ দিনের প্রকল্পের টাকা পাঠাচ্ছে, অথচ জেলায় সেই টাকায় কাজ হচ্ছে না। গ্রামের লোকেরা তাই পুবে খাটতে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। দ্রুত একশো দিনের প্রকল্পের কাজ শুরু করার দাবি জানিয়েছি আমরা।” এ ছাড়া চাষিদের কাছ থেকে সরকার ধান কিনছে না, জমির পাট্টাবিলিতেও দুর্নীতি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ তোলেন অশোকবাবুরা। ছাতনা ব্লক প্রশাসনের তরফে দাবিগুলি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy