Advertisement
০৪ নভেম্বর ২০২৪

ঘরের ছেলে কেরলে, মনখারাপ মুরারইয়ে

রাজমিস্ত্রির জোগাড়ের কাজ করেন তাঁরা। বাড়ি মুরারইয়ের কাশিমনগর গ্রামে। কেউ ৮, কেউ ছয়, কেউ বা দু’বছর ধরে কন্নুরের বিভিন্ন জায়গায় থাকেন সকলে। রমজানে ফেরা হয়নি বাড়িতে। ইদজ্জোহায় বাড়ি ফিরতে কয়েক মাস আগেই টিকিট কেটে রেখেছিলেন ট্রেনের।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
মুরারই  শেষ আপডেট: ২৩ অগস্ট ২০১৮ ০৮:০০
Share: Save:

ইচ্ছা ছিল ইদে মুরারইয়ের বাড়িতে ফেরার। কিন্তু বুধবার তাঁরা আটকে রইলেন দু’হাজার কিলোমিটার দূরে কেরলের কন্নুরের একটি ভাড়াবাড়়ির ছাদে। জলবন্দি হয়ে।

রাজমিস্ত্রির জোগাড়ের কাজ করেন তাঁরা। বাড়ি মুরারইয়ের কাশিমনগর গ্রামে। কেউ ৮, কেউ ছয়, কেউ বা দু’বছর ধরে কন্নুরের বিভিন্ন জায়গায় থাকেন সকলে। রমজানে ফেরা হয়নি বাড়িতে। ইদজ্জোহায় বাড়ি ফিরতে কয়েক মাস আগেই টিকিট কেটে রেখেছিলেন ট্রেনের। ঘরের ছেলের ঘরে ফেরার অপেক্ষায় ছিলেন পরিজনেরাও।

কিন্তু দিনপনেরো আগে সব পরিকল্পনা বানচাল হয়ে যায়। কেরলে শুরু হয় মুষলধারে বৃষ্টি। তা-ই বদলে দেয় ওই শ্রমিকদের ঘরে ফেরার হিসেব।

কাশিমনগর গ্রামের মুন্নাপাড়ার হাবিবুল শেখ, উত্তরপাড়ার রাজু শেখ, দক্ষিণপাড়ার শরিফ শেখ থাকেন কন্নুরের একটি ভাড়াবাড়িতে। ফোনে হাবিবুল বলেন, ‘‘আট বছর ধরে কেরলে রয়েছি। এ রকম বৃষ্টি কোনও দিন দেখিনি। বৃষ্টিতে বাড়ি থেকে বেরতে পারছিলাম না। একতলার ঘরে জল ঢুকে রান্নার বাসন, স্টোভ, চাল-ডাল-আনাজ ভাসিয়ে নিয়ে গিয়েছে। জামাকাপড়, বিছানা, ব্যাগ দোতলার ছাদে সরিয়ে নিতে পেরেছি।’’

হাবিবুল জানান, কাশিমনগরের বাসিন্দা হাসিবুল শেখ তাঁদের হেড মিস্ত্রি। তাঁর অধীনেই কাজ করেন হাবিবুল।

হাসিবুল ও রাসুল শেখ নামে অন্য আর এক হেড মিস্ত্রি ইদে বাড়ি ফিরতে চেন্নাই থেকে বিমানে গত কাল দমদমে বিমানবন্দরে পৌঁছন। দমদম থেকে ৭ হাজার টাকা গাড়ি ভাড়া করে কাশিমনগরে বাড়িতে ফিরেছেন। হাসিবুল জানান, বানভাসি সব কিছু। অনেকের হাতে টাকাই নেই। তা থাকলেও যোগাযোগ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত থাকায় ইচ্ছা থাকলেও অনেকে বাড়ি ফিরতে পারেননি। তিনি বলেন, ‘‘কুরবানির সময়ে বাড়ি ফেরার জন্য প্রায় পঞ্চাশ জন এক মাস আগে ট্রেনের টিকিট কেটেছিলাম। কন্নুরে ট্রেন মেলেনি। ৩০ জন কন্নুর থেকে বাসে ১ হাজার টাকা করে ভাড়া দিয়ে চেন্নাই পৌঁছন। দু’দিন সেখানে অপেক্ষা করে গত কাল অন্যেরা করমণ্ডল এক্সপ্রেসে ওঠেন। আজ হাওড়ায় পৌঁছলেও ইদের নমাজে সামিল হতে পারেননি।’’

কাশিমনগরের বাসিন্দা নাসির দোস্ত জানান, তাঁর ভাই, ভাগ্নে, ভাইপো কন্নুরে রাজমিস্ত্রির জোগাড়ের কাজ করেন। কেউ রমজান মাসের ইদে বাড়ি ফেরেননি। কুরবানিতে বাড়ি ফিরবেন বলে সকলে অপেক্ষায় ছিলেন। কিন্তু কেরলে তাঁদের বাড়ির সামনের রাস্তায় জলে ঢুবে। তা-ই কেউই ফিরতে পারেননি।

মনখারাপ হাবিবুল, কুরবান, সাদ্দাম শেখদের। তাঁরা বলছেন, ‘‘আশায় ছিলাম ইদে পরিবারের সঙ্গে থাকব। বাধা দিল প্রকৃতিই।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Kerala Flood Kerala Flood
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE