প্রত্যাবর্তন: অনুব্রতের সঙ্গে বৈঠকের পরে কাজল শেখ। নিজস্ব চিত্র
জেলায় ধারে-ভারে জাঁকিয়ে বসেছে বিজেপি। লোকসভার ফলে তা স্পষ্ট। এমন সময়ে ব্লক কার্যকরী সভাপতি পদ দিয়ে দলে ফেরানো হল নানুরের নেতা কাজল শেখকে।
একটা সময় ছিল যখন এই নেতার নাম শুনলেই বেজায় চটে যেতেন বীরভূমের তৃণমূলের নেতারা। গত বিধানসভা নির্বাচনের আগে একাধিক সভায় তো সরাসরি ‘দুষ্কৃতী’ বলে দেগে দিয়েছিলেন জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল, মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমেরা। ‘দলের কেউ না’ এমনটা বলে অস্তিত্বটুকুও অস্বীকার করে এসেছেন সকলে। ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটে এই কাজলের ‘অন্তর্ঘাতে’ নানুর তৃণমূলের হাতছাড়া হয়েছিল বলে মানেন তৃণমূলের নেতারাই। সেই কাজল শেখকে ব্লক কার্যকরী সভাপতি পদে বসানো ঘিরে চর্চা শুরু হয়ে গিয়েছে রাজনৈতিক মহলে।
সোমবার অনুব্রত মণ্ডলের উপস্থিতিতে বোলপুরের পার্টি অফিসে নানুর ব্লক কোর কমিটির বৈঠকে ওই সিদ্ধান্ত হয়। সেখানে ছিলেন ব্লক সভাপতি সুব্রত ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, ‘‘কাজল দলের কর্মী। মাঝে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল। সে সব দূরে সরিয়ে এ বারের নির্বাচনে ওঁকে যে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, তা যথাযথ পালন করেছেন। তারই পুরস্কার হিসেবে ব্লক কার্যকরী সভাপতি পদে বসানো হল।’’ সুরে সুর মিলিয়ে কাজলও বলছেন, ‘‘দল পরিবারের মতো। পরিবারে থাকতে গেলে ভুল বোঝাবুঝি হয়। এখন সে সব মনে রাখতে চাই না। দলের একনিষ্ঠ সৈনিক হিসেবেই থাকতে চাই।’’
জেলার রাজনীতিতে বহু আলোচিত নাম কেতুগ্রামের বিধায়ক শেখ সাহানেওয়াজের ভাই কাজল। এক সময় দলের বর্তমান জেলা যুব সভাপতি তথা তদানীন্তন বিধায়ক গদাধর হাজরা এবং তাঁর দাপটে কোণঠাসা হয়ে পড়েন অনুব্রতর অনুগামীরা। ২০১৩ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে নানুরে যেখানে বিরোধীরা কোনও আসনেই প্রার্থীই দিতে পারেনি, সেখানে কাজল-গদাধর জুটির ‘কলকাঠিতে’ জেলা পরিষদের একটি আসনে লড়তে নেমে গোহারান হারতে হয় অনুব্রতর অনুগামী হিসেবে পরিচিত ব্লক সভাপতি সুব্রত ভট্টাচার্যকে। তার পরে অবশ্য কর্তৃত্ব কায়েমকে কেন্দ্র করে গদাধর-কাজলের দূরত্ব তৈরি হয়। গদাধর অনুব্রতর শিবিরে যোগ দেন। গোলমালের সেই শুরু।
২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে গদাধরের প্রার্থীপদ নিয়ে তীব্র আপত্তি তোলেন কাজল। দল অবশ্য সে আপত্তিকে অগ্রাহ্য করে গদাধরকেই ফের নানুরে প্রার্থী করে। সেই আক্রোশে কাজল গদাধরকে হারাতে গোপনে সিপিএমের সঙ্গে হাত মেলান বলে অভিযোগ। তার পর থেকেই দলীয় নেতারা সভা সমাবেশে কাজল দলের কেউ নয়, ‘দুষ্কৃতী’ বলে প্রচার করতে থাকেন। তাতে অবশ্য গদাধর বিরোধিতা থেকে সরে আসেনি কাজল। মূলত, তাঁর বিরোধিতার জেরেই ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে নানুর কেন্দ্রে তৃণমূল যেখানে প্রায় ৬০ হাজার ভোটে লিড পেয়েছিল সেখানে ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে প্রায় ২৬ হাজার ভোটের ব্যবধানে হারতে হয় গদাধরকে।
এ বারের লোকসভা নির্বাচনের আগে সেই ‘ড্যামেজ কন্ট্রোল’ করতে উদ্যোগী হন জেলা নেতৃত্ব। কাজলের ‘মান’ রাখতে নানুর ব্লক কোর কমিটি থেকে গদাধরকে বাদ দেওয়ার পাশাপাশি এলাকার সমস্ত রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে ব্রাত্য করে দেওয়া হয়। একই সঙ্গে অলিখিত ভাবে কাজলকে দায়িত্ব দেওয়া হয় বলে দলীয় সূত্রের খবর। তার ফলেই গেরুয়া ঝড়ের মাঝেও এ বারের লোকসভা নির্বাচনে নানুরে ১৭,৭৩৪ ভোটে লিড পায় তৃণমূল। তারই পুরস্কার স্বরূপ কাজলকে ব্লক কার্যকরী সভাপতির পদে বসানো হল বলে জানাচ্ছেন জেলা নেতারা।
এ দিকে, কোণঠাসা হয়ে গদাধর নাকি গেরুয়া শিবিরের দিকে ঝুঁকছেন, রাজনৈতিক মহলে গুঞ্জন এমনই। তেমন হলে জেলা যুব সভাপতি পদে কাজলকে আনা হতে পারে বলে মনে করছেন দলেরই কিছু কর্মী। গদাধর অবশ্য সমস্ত জল্পনায় জল ঢেলে দিয়ে বলে দিয়েছেন, ‘‘প্রথম থেকে দলে আছি। দল যত দিন থাকবে, তত দিন থাকব। তবে দলেরই বিরোধী গোষ্ঠীর লোকেরা ওই গুঞ্জন ছড়াচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy