সরেজমিন: জুনবেদিয়ায় ধসে পড়া বা়ড়ির সামনে সেচমন্ত্রী। (ইনসেটে) ভাঙার ঠিক আগে সেই বাড়ি। ছবি: অভিজিৎ সিংহ ও ফাইল
বন্যার জেরে হওয়া ক্ষয়ক্ষতি পরিদর্শনে গিয়ে শহর ও লাগোয়া এলাকায় অবৈধ নির্মাণ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করলেন রাজ্যের সেচ মন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র। স্থানীয় বাসিন্দারাও তাঁর কাছে বন্যা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপের দাবি তুললেন।
রবিবার রাত থেকে সোমবার সকাল পর্যন্ত টানা বৃষ্টিতে বানভাসি হয় বাঁকুড়া শহর-সহ জেলার পাঁচটি ব্লক। শহর সংলগ্ন জুনবেদিয়া এলাকায় ভেঙে পড়ে দোতলা পাকা বাড়ি। জেলা জুড়ে মৃত্যু হয়েছে দু’জনের। তলিয়ে নিখোঁজ এক কিশোরী। প্রশাসনের হিসাব মতো, জেলা জুড়ে ক্ষতি হয়েছে প্রায় পাঁচ কোটি টাকার।
বুধবার জেলার সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক করতে বাঁকুড়ায় আসেন মন্ত্রী। বাঁকুড়ার সার্কিট হাউসে প্রশাসনিক কর্তা ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন তিনি। পরে জুনবেদিয়া ও সতীঘাট এলাকা পরিদর্শনে যান। সঙ্গে ছিলেন বাঁকুড়া জেলা পরিষদের বিদায়ী সভাধিপতি অরূপ চক্রবর্তী, জেলাশাসক উমাশঙ্কর এস, ওন্দার বিধায়ক অরূপ খান, বাঁকুড়ার পুরপ্রধান মহাপ্রসাদ সেনগুপ্ত প্রমুখ।
জুনবেদিয়ায় ভেঙে পড়া বাড়িটি দেখতে গিয়েই মন্ত্রীর নজরে আসে, জোড়ের খালের উপরেই একাধিক নির্মাণ গড়ে তোলা হয়েছে। স্থানীয়েরা ওই জোড় সংস্কারের দাবি তোলেন। মন্ত্রী প্রশাসনের কর্তাদের জানান, অবৈধ নির্মাণগুলি না ভাঙা হলে সংস্কারের কাজ চালানো মুশকিল। সভাধিপতি বলেন, ‘‘যাঁরা খালের উপর বাড়ি বানিয়েছেন তাঁদের নোটিস পাঠিয়ে ডেকে আলোচনা করা যেতে পারে।’’ জেলাশাসককে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে বলেন মন্ত্রী।
এর পরই জুনবেদিয়া থেকে সতীঘাট মোড়ের কজওয়েতে যান মন্ত্রী। বন্যায় ওই কজওয়ের সংযোগকারী রাস্তা ভেসে গিয়েছে। নদীবক্ষে গড়ে ওঠা একটি আবাসন ও পুরসভার রিজার্ভারও চোখে পড়ে মন্ত্রীর। বন্যায় গন্ধেশ্বরীর জল উপচে বাঁকুড়া শহরে ঢুকে পড়েছিল এ বার। এই ঘটনার জন্য বিষ্ণুপুরের সাংসদ সৌমিত্র খান নদীর উপরে পুরসভার গড়া রিজার্ভারকে দায়ী করেছিলেন। যদিও সেই অভিযোগ মানেননি পুরপ্রধান। এদিন মন্ত্রী বলেন, “নদীবক্ষেই দেখলাম একটি আবাসন অবৈধ ভাবে গড়া হয়েছে। পুরসভার রিজার্ভারটির জন্যই ওই আবাসন রক্ষে পেয়েছে।” তাঁর বক্তব্য, ‘‘৬০ ফুট চওড়া খালের ৩০ ফুট অবৈধ নির্মাণে ঢাকা পড়েছে। বামফ্রন্ট আমলে যথেচ্ছ ভাবে এই সব অবৈধ নির্মাণ হয়েছে। যার ফলে বন্যা পরিস্থিতি হচ্ছে।’’
সতীঘাটের কজওয়ের বদলে স্থায়ী সেতু গড়া হবে বলে এ দিন মন্ত্রী জানিয়েছেন। তিনি জানান, এই কাজের জন্য টাকা বরাদ্দ হয়ে গিয়েছে। টেন্ডার প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে। তিনি বলেন, “এই কজওয়েটি দিয়ে জল পার হতে পারে না। অবৈজ্ঞানিক ভাবে গড়া হয়েছে কজওয়েটি। জানি না কী ভাবে প্রশাসন এই কজওয়ে গড়ার অনুমোদন দিয়েছিল। আমরা স্থায়ী সেতু গড়ব এখানে। তার জন্য কজওয়েটি ভাঙতে হবে। স্থানীয় কিছু মানুষ পারাপারে অসুবিধে হবে বলে কজওয়েটি ভাঙতে আপত্তি করছেন। তাঁদের বোঝানো হচ্ছে।”
সতীঘাট এলাকায় মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। মন্ত্রীকে জানান, কী ভাবে প্রতি বর্ষায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তাঁরা। সমস্যার সমাধানের আশ্বাস মেলে। এর পরে মন্ত্রী কেশিয়াকোলে একটি ত্রাণ শিবিরে যান। বন্যায় ঘরবাড়ি হারিয়ে সেখানে আশ্রয় নেওয়া রমা দাস, সরস্বতী বাউড়িরা স্থায়ী বাড়ি বানিয়ে দেওয়ার দাবি তোলেন। জেলাশাসককে সরকারি প্রকল্পে দুর্গতদের বাড়ি দেওয়ার ব্যবস্থা করার নির্দেশ দেন মন্ত্রী। তিনি বলেন, “আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রাজ্যে বর্ষা থাকার কথা। সেই মোতাবেক প্রস্তুতি নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy