শোক: কেরলে মৃত শ্রমিকের বাড়িতে পরিজনেরা। —নিজস্ব চিত্র।
বাড়ি ফেরার জন্য ট্রেনের টিকিট কেটে ফেলেছেন বলে জানিয়েছিলেন বাবাকে। কিন্তু, সেই ফেরা আর হল না।
ইন্দাসের রোল গ্রামের যুবক হেমন্ত রায় পেটের দায়ে কাজ করতে গিয়েছিলেন কেরলে। সোমবার সকালে গ্রামের বাড়িতে খবর আসে, রবিবার রাতে সেখানেই বাথরুমে গলার নলি কাটা অবস্থায় হেমন্তের দেহ মিলেছে। এর পর থেকেই শোকের ছায়া নেমেছে গোটা গ্রামে। বছর পঁচিশের তরতাজা একটা ছেলের এমন মর্মান্তিক মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না, পড়শি পরিজনেরা। তাঁরা পরিবারটির পাশে দাঁড়িয়ে অভিযোগ তুলেছেন, কেরলের পুলিশ বা অন্য শ্রমিকেরা ঘটনাটি আত্মহত্যা বলে দাবি করলেও, আসলে হেমন্তকে খুনই করা হয়েছে!
মঙ্গলবার খবরটি ছড়িয়ে পড়তেই দুপুরে সেখানে যায় ইন্দাস থানার পুলিশ। ওই পরিবারটিকে সমবেদনা জানিয়ে আসেন স্থানীয় বিধায়ক গুরুপদ মেটে। পাড়ার লোকেরাই রান্না করে খাবার পৌঁছে দিচ্ছেন পরিবারটিকে।
দু’বছর আগে হেমন্তের বিয়ে হয় ইন্দাসের শাসপুর গ্রামের বিষ্ণু রায়ের সঙ্গে। তাঁদের ছ’মাসের একটি মেয়ে রয়েছে। নাম রাধিকা। পুজোর সময় নবমীর দিন এলাকার কিছু ছেলের সঙ্গে কেরলের আলাপুঝা জেলার পানাভল্লি গ্রামে রাজমিস্ত্রির কাজ করতে বেরোন হেমন্ত। বাড়িতে স্ত্রী-মেয়ে ছাড়াও রয়েছেন বাবা-মা, ভাই। ঘরে অভাব ছিল। দেড় বিঘা জমিতে চাষ করেও বিশেষ সুবিধা হয় না বলে হেমন্তের বাবা আনন্দ রায় ও ছোট ভাই বসন্ত রায় লোকের জমিতেও কাজ করেন।
ইলেক্ট্রিক্যাল মিস্ত্রি হেমন্তও এলাকায় বিশেষ কাজ পাচ্ছিলেন না। তাই তিনি কাজের খোঁজে কেরলে যান।
তাঁর বাবা আনন্দ রায় বলেন, ‘‘শনিবার রাতে ছেলের সঙ্গে শেষ কথা হয়। ছেলে ওর মা ও আমার সঙ্গে কথা বলে। জানিয়েছিল, ইন্দাসে ওর অনেক কাজ রয়েছে। তাই কেরল থেকে সে চলে আসবে বলে জানিয়েছিল। ট্রেনের টিকিটও কেটে ফেলেছিল।’’
তিনি জানান, হেমন্ত রোজ তাঁদের ফোন করলেও রবিবার তাঁর সঙ্গে কোনও কথা হয়নি। তাই রবিবার ফোন না পেয়ে চিন্তায় ছিলেন। ছেলে হয়তো ব্যস্ত রয়েছে ভেবে তাঁরাও আর ফোন করেননি।
এর মধ্যে সোমবার সকালে কেরলে যিনি নিয়ে গিয়েছিলেন, সেই শেখ সামসুদ্দিন ফোন করে জানান, হেমন্ত মারা গিয়েছেন। আনন্দবাবু বলেন, ‘‘যে যাই বলুক, ছেলে আত্মহত্যা করেছে বিশ্বাস করি না। ওকে খুন করা হয়েছে।’’
এই আকস্মিক খবরে এলাকার অনেকেই হতবাক। পড়শি হারু রায়ও বলেন, ‘‘কখনও কারও সঙ্গে হেমন্তের গোলমাল হতে দেখিনি। সেই ছেলের মন খারাপ করে আত্মহত্যা করেছে বলে বিশ্বাস হয় না।’’ ওই পরিবারের আত্মীয় ধরণী রায়ের কথায়, ‘‘চাষ করে খেতে পাই আর না পাই, ঘরের ছেলেদের আর বাইরে কাজ করতে পাঠাব না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy