Advertisement
০৪ নভেম্বর ২০২৪

মৌমাছির হুলে হুলুস্থুল রবীন্দ্রজয়ন্তীর অনুষ্ঠান, আহত ৩২

সাহেববাঁধ লাগোয়া পুরুলিয়া শহরের সাউথ লেক রোডে সুভাষ পার্কের মুক্তমঞ্চে গাছগাছালি ঘেরা পরিবেশে রবীন্দ্রজয়ন্তীর অনুষ্ঠান চলছিল। আকাশ খানিক মেঘলা থাকায় শ্রোতারাও জমিয়ে অনুষ্ঠান উপভোগ করছিলেন।

সেবা: মৌমাছির হুলে আহতের চিকিৎসা চলছে। ছবি: সুজিত মাহাতো

সেবা: মৌমাছির হুলে আহতের চিকিৎসা চলছে। ছবি: সুজিত মাহাতো

নিজস্ব সংবাদদাতা
পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ১০ মে ২০১৭ ১২:২০
Share: Save:

সাহেববাঁধ লাগোয়া পুরুলিয়া শহরের সাউথ লেক রোডে সুভাষ পার্কের মুক্তমঞ্চে গাছগাছালি ঘেরা পরিবেশে রবীন্দ্রজয়ন্তীর অনুষ্ঠান চলছিল। আকাশ খানিক মেঘলা থাকায় শ্রোতারাও জমিয়ে অনুষ্ঠান উপভোগ করছিলেন। এক শিল্পী গান ধরেছেন— ‘‘আমি তোমায় যত শুনিয়েছিলেম গান...’’। এমন সময় সোঁ সোঁ শব্দে ধেয়ে এল ওরা। হারমোনিয়াম, ডুবি-তবলা ছেড়ে যে যে দিকে পারলেন দৌড়। কেউ হাতে ধরে থাকা গানের খাতা দিয়ে মাথা-মুখ ঢাকতে ব্যস্ত, কেউ বা শাড়ির আঁচল কিংবা ওড়না দিয়ে মাথা ঢেকে ফেলেছিলেন। ততক্ষণে মৌমাছিদের হুল বিঁধে গিয়েছে কয়েকজনের শরীরে। ডামাডোলে অনুষ্ঠান পণ্ড হয়ে যায়।

মঙ্গলবার সাত সকালে কবিগুরুর জন্মদিনের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এসে গাছে বেশ কয়েকটি চাঁক বেঁধে থাকা মৌমাছিদের ‘হামলা’র মুখে পড়তে হবে, কেউ ভাবেননি। অল্পক্ষণের মধ্যেই অনুষ্ঠান চত্বর কার্যত ছত্রভঙ্গ অবস্থা। হুঁল বিঁধে আহত হলেন মোট ৩২ জন। তাঁদের মধ্যে ১৫ জনকে সঙ্গে সঙ্গে পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রাথমিক চিকিৎসার পরে বাকিদের ছেড়ে দেওয়া হলেও চার জনকে পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে ভর্তি করে নেওয়া হয়।

প্রভাতী সংস্থা প্রতি বছর সকাল ছ’টা থেকে সুভাষ পার্কের মুক্তমঞ্চে কবিগুরুর জন্মজয়ন্তীর আয়োজন করে। এ বারও সেই অনুষ্ঠান ঠিকঠাকই চলছিল। আচমকা পার্কের মেন গেটের দিক থেকে শয়ে শয়ে মৌমাছি ধেয়ে আসে। তাদের লক্ষ্য মঞ্চ।

হাসপাতালে ভর্তি থাকা পাপিয়া নস্কর ও তাঁর মেয়ে মৌপিয়া নস্করের শরীরে কয়েকটি জায়গায় মৌমাছি হুল ফুঁটিয়েছে। মেয়ে কথা বলার মতো অবস্থায় নেই। যন্ত্রণায় কাতর পাপিয়াদেবী বলছিলেন, ‘‘মেয়ের নাচ শেষ হতেই ওকে নিয়ে আমি গেটের দিকে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ সোঁ সোঁ করে শব্দ কানে আসে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই এক ঝাঁক মৌমাছি আমাকে ঘিরে ধরে। আর কিছু দেখতে পাচ্ছিলাম না। শুধু মেয়ের চিৎকার শুনতে পেলাম। আর কিছু মনে নেই।’’ তিনি জানান, এমন অভিজ্ঞতা আগে কখনও হয়নি। তাঁর মাথায় অনেক জায়গায় মৌমাছি কামড়েছে। সারা শরীরে অসহ্য যন্ত্রণা।

হাসপাতালে ভর্তি সুরজিৎ রায় ও তাঁর সহধর্মিনী দেবযানী রায়। দেবযানীদেবীর কথায়, ‘‘আমরা সামনে বসে অনুষ্ঠান শুনছিলাম। আচমকা দেখি কয়েকশো কালো মৌমাছি আমার স্বামীকে ঘিরে ধরল। তার পরে আমাকেও ঘিরে ধরল। কী করব বুঝে ওঠার আগেই বুঝতে পারি, শরীরে জ্বালা শুরু হয়ে গিয়েছে।’’ সেই সময় শিল্পী সুজিত ঘোষ গাইছিলেন। তাঁর কথায়, ‘‘কোথা থেকে প্রচুর মৌমাছি এসে এমন ভাবে ঘিরে ফেলল যে সবাই পড়মড়ি করে দৌড়তে লাগলেন। সত্যিই বিচিত্র অভিজ্ঞতা।’’

এই পার্কে ঢোকার মূল দরজার ডান দিকে একটি অর্জুন গাছে দীর্ঘদিন ধরে পেল্লাই সাইজের একটি মৌমাছির চাক রয়েছে। সঙ্গে কয়েকটি ছোট চাকও রয়েছে। অনুষ্ঠানের উদ্যোক্তা অনুপ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এই পার্ক বন দফতরের। তাঁদেরই উচিত এতবড় মৌচাক যখন রয়েছে তা ভেঙে ফেলা। না হলে যে কোন দিনই ফের এই ধরনের বিপত্তি ঘটবে।’’

ডিএফও পুলক দত্ত বলেন, ‘‘আমি নিজেও এই অনুষ্ঠানে ছিলাম। এই অভিজ্ঞতা আমার কাছেও নতুন। মনে হচ্ছে, কেউ ওই মৌচাকে কিছু ছুড়েছিল। অথবা পাখিও ঠোক্কর দিয়ে থাকতে পারে। তাই মৌমাছির দল এ ভাবে ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে এসেছে।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE