Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪
শিল্পাঞ্চলে রাস্তা বেহাল / ১

বৃষ্টির জলে গর্ত যেন ডোবা, চলাফেরা দায়

কোনও অঞ্চলের শিল্পোন্নতির অন্যতম প্রধান শর্তই হল তার যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি। রাজ্য সরকারও জানাচ্ছে, পুরুলিয়ায় শিল্পের পরিকাঠামো তৈরি হচ্ছে। কিন্তু জেলার দুই শিল্পাঞ্চলের মধ্যে যোগাযোগকারী রাজ্য সড়কের বেহাল দশা রাজ্যের দাবিকে মোটেও সমর্থন করছে না।

খন্দে ভরা রাজ্য সড়ক। পাহাড়িগোড়ার কাছে। —নিজস্ব চিত্র।

খন্দে ভরা রাজ্য সড়ক। পাহাড়িগোড়ার কাছে। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
সাঁওতালডিহি শেষ আপডেট: ১০ অগস্ট ২০১৫ ০২:৩৮
Share: Save:

কোনও অঞ্চলের শিল্পোন্নতির অন্যতম প্রধান শর্তই হল তার যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি। রাজ্য সরকারও জানাচ্ছে, পুরুলিয়ায় শিল্পের পরিকাঠামো তৈরি হচ্ছে। কিন্তু জেলার দুই শিল্পাঞ্চলের মধ্যে যোগাযোগকারী রাজ্য সড়কের বেহাল দশা রাজ্যের দাবিকে মোটেও সমর্থন করছে না।

পুরুলিয়ার নতুন শিল্পাঞ্চল রঘুনাথপুরের সঙ্গে জেলার প্রাচীন শিল্প এলাকা সাঁওতালডিহির মধ্যে যোগাযোগের অন্যতম রাস্তা, আট নম্বর রাজ্য সড়কের অবস্থা খুবই খারাপ। দীর্ঘ ২৮.৩ কিলোমিটার রাস্তা জুড়ে বড় বড় গর্ত। বহু জায়গাতেই রাস্তার পিচ উঠে বেরিয়ে পড়েছে পাথর। বৃষ্টিতে সেই সব গর্তে জল জমে ছোট ডোবার আকার নিয়েছে। পূর্ত দফতরের দাবি, নিম্নচাপের টানা বৃষ্টিতেই বেশি বেহাল হয়ে পড়েছে রাস্তাটি। রাস্তার সবচেয়ে খারাপ হয়ে পড়া অংশ দ্রুত মেরামতির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন পূর্ত দফতরের রঘুনাথপুরের অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার অজয় ভট্টাচার্য। সম্প্রতি দফতরের আধিকারিকরা ওই রাস্তা পরিদর্শনও করেছেন।

বামফ্রন্টের আমলে ২০০৮ সালের মার্চ মাস থেকে রঘুনাথপুর থেকে সাঁওতালডিহি পর্যন্ত আট নম্বর রাজ্য সড়কের আমূল সংস্কার করেছিল পূর্ত দফতর। প্রায় ৯ কোটি টাকা ব্যয়ে কাজ হয়েছিল। কিন্তু রাস্তার ৩০ শতাংশের মতো অংশে সংস্কার কাজ শেষ করতে পারেনি বরাতপ্রাপ্ত সংস্থা। পূর্ত দফতর সূত্রের খবর, বরাতপ্রাপ্ত ঠিকা সংস্থার বিরুদ্ধে নিম্নমানের কাজের অভিযোগ উঠেছিল। যে ভাবে রাস্তাটির সংস্কারের কাজ হওয়া দরকার ছিল, তা হয়নি। শেষ পর্যন্ত পূর্ত দফতরের কাছে সংস্থার জমা রাখা প্রায় এক কোটি টাকা দিয়ে ফের টেন্ডার ডেকে করে রাস্তার ওই বাকি অংশের কাজ শেষ করা হয়েছে।

কিন্তু, ঘটনা হল, ছয়-সাত বছরের মধ্যেই ফের বেহাল হয়ে পড়েছে রাস্তাটি। রঘুনাথপুর থেকে বেরিয়েই বাঁশদহ সেতু থেকে বাবুগ্রাম পঞ্চায়েত কার্যালয় পর্যন্ত কিলোমিটার আটেক রাস্তা জুড়েই বড় বড় গর্ত। একই ছবি দুবড়া থেকে পাহাড়িগোড়া পর্যন্ত। আবার পাহাড়িগোড়া থেকে ঝাড়খণ্ড সীমানায় গোয়াই নদীর সেতু পর্যন্ত রাস্তার প্রায় পুরোটা জুড়েই ছোট-বড় গর্ত তৈর হয়েছে। টানা বৃষ্টিতে সেই রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করাই দুষ্কর হয়ে পড়েছে বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের। বস্তুত, স্রেফ জেলার দুই শিল্পাঞ্চলের মধ্যে যোগাযোগকারী রাস্তা হিসাবেই নয়, এই রাজ্য সড়কের গুরুত্ব দুই রাজ্যের মধ্যে সংযোগকারী রাস্তা হিসাবেও। রঘুনাথপুর মহকুমা থেকে ঝাড়খণ্ডের চন্দনকেয়ারি যাওয়ার একমাত্র রাস্তা এটিই। সাঁওতালডিহি থানার দেওয়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দৈনিক গড়ে এই রাজ্য সড়কে দেড় শতাধিক ট্রাক-লরি চলাচল করে। সম্প্রতি আবার ঝাড়খণ্ডের ধানবাদের কয়লাখনি থেকে চন্দনকেয়ারি হয়ে সাঁওতালডিহির উপর দিয়ে এই রাজ্য সড়কে কয়লা নিয়ে বাঁকুড়ার মেজিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে চলতে শুরু করেছে ভারী ডাম্পার।

এই ধরনের পণ্যবাহী ভারী গাড়ির চলাচলে রাস্তার অবস্থা আরও শোচনীয় হয়ে পড়ছে। তবে পূর্ত দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এই রাজ্য সড়কের সংস্কারের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। রঘুনাথপুরের অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার অজয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘আমূল সংস্কার করার পাশাপাশি রাস্তাটি চওড়া করার জন্য প্রজেক্ট রিপোর্ট রাজ্যে পাঠানো হয়েছে। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১৪কোটি টাকা।” চতুদর্শ অর্থ কমিশন থেকে এই অর্থ মেলার বিষয়ে যথেষ্ট আশাবাদী জেলার পূর্ত দফতর। দফতরের এক পদস্থ কর্তা জানাচ্ছেন, প্রকল্প রিপোর্ট পাঠানোর পরে প্রাথমিক অনুমোদন মিলেছে। অর্থ বরাদ্দ হলেই বাকি প্রক্রিয়া দ্রুত শেষ করে রাস্তা সংস্কারের কাজ শুরু হবে।

তবে শুধু এই রাজ্য সড়কই নয়, সাঁওতালডিহি শিল্পাঞ্চল জুড়েই রাস্তার অবস্থা বেহাল। পাহাড়িগোড়া থেকে সাঁওতালডিহি বিদ্যুৎকেন্দ্র পর্যন্ত কমবেশি পাঁচ-ছয় কিলোমিটার রাস্তা এবং বিদ্যুৎকেন্দ্রের ছাইপুকুর থেকে ঝাড়খণ্ড সীমানার গোয়াই নদীর সেতু পর্যন্ত আট-দশ কিলোমিটার রাস্তাও চলাচলের কার্যত অযোগ্য বলে অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের। বিশেষ করে ছাইপুকুর থেকে ছাই নিয়ে ডাম্পারগুলি স্থানীয় হীরক রোড ধরে ঝাড়খণ্ডের দামোদরপুরে চলাচল করায় রাস্তা আরও বেহাল হয়ে পড়ছে। তবে এই রাস্তাগুলি মূলত দেখভাল করে বিদ্যুৎকেন্দ্র কর্তৃপক্ষ তথা পিডিসিএল। ফলে দাবি উঠেছে, এলাকার উন্নয়নে নিজ দায়িত্ব পালন করুক পিডিসিএল কর্তৃপক্ষ। বিদ্যুৎকেন্দ্র কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, ছাইপুকুরের পাশ দিয়ে যাওয়া রাস্তাটি রেলের জমিতে রয়েছে। ইতিমধ্যেই ওই রাস্তা সংস্কারের জন্য রেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে অর্থ দেবে পিডিসিএল আর রাস্তা সংস্কারের কাজ করবে রেল। এই রাস্তা মেরামতিতে কোটি টাকার বেশি অর্থ খরচ হওয়ায় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রকল্প রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে। বিদ্যুতকেন্দ্র কর্তৃপক্ষর আশ্বাস, বর্ষার পরেই অন্য রাস্তাগুলির সংস্কারের কাজও শুরু করা হবে।

(চলবে)

অন্য বিষয়গুলি:

Heavy rain industrial area puruli santaldih
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE