বিষ্ণুপুর আদালতে দোষী ঠাকুমা। বুধবার। নিজস্ব চিত্র
ঠাকুমার সঙ্গে ছেলেকে ঘুমোতে দেখে নিশ্চিন্তে কাজে গিয়েছিলেন বাবা-মা। কিন্তু ঘুম থেকে উঠে সেই নাতিকেই কাটারি নিয়ে কুপিয়ে খুন করেছিল ঠাকুমা।
২০১৫ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরের বাসুদেবপুর গ্রামের ওই ঘটনায় নিহত অমিত লোহারের (১৩) ঠাকুমা তুলসি লোহারকে বুধবার বিষ্ণুপুর আদালতের অতিরিক্ত জেলা দায়রা বিচারক সুমিত্রা রায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা দিলেন। নিহতের পরিবারের দাবি, তুলসিদেবীর মানসিক সমস্যা থাকলেও তিনি যে খুন করবেন তাঁরা ভাবতে পারেননি। এ দিন আদালতে নাতিকে খুনের জন্য আক্ষেপ করেন তুলসিদেবী। বলেন, ‘‘কেন যে ওকে মারলাম, আমি নিজেই জানি না।’’
বিষ্ণুপুর আদালতের সরকার পক্ষের আইনজীবী গৌতমপ্রতীম সিংহদেব জানান, বিচারক যাবজ্জীবন সাজার সঙ্গে আসামিকে দশ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন। অনাদায়ে আরও ছ’মাস কারাদণ্ডের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ঘটনার আগের দিন গ্রামে রাত-ভোর মনসাপুজো হয়। সকাল থেকে তুমুল বৃষ্টি হচ্ছিল। পানশিউলি জুনিয়র হাইস্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র অমিত লোহার (১৩) সকালে বাড়িতে ঘুমাচ্ছিল। তার সঙ্গে শুয়েছিল ঠাকুমা তুলসি লোহার। অমিতের বাবা ভৈরব লোহার ও মা মামনি লোহার তখন বাড়িতে ছিলেন না। সেই সময়ে ঘুমন্ত নাতিকে কুপিয়ে খুন করে তুলসিদেবী।
ভৈরববাবু পরের দিন বিষ্ণুপুর থানায় অভিযোগ করেন, তাঁরা ছেলেকে তুলসিদেবী লোহার কাটারি দিয়ে কুপিয়ে খুন করেছেন। সেই সময় বাড়িতে তাঁরা কেউ ছিলেন না। খবর পেয়ে তিনি বাড়ি ফিরে ছেলেকে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখতে পান। অমিতকে নিয়ে তিনি বিষ্ণুপুর হাসপাতালে গিয়েছিলেন। পরে অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। কিন্তু বাঁচানো যায়নি। সেখানে রাত ১০টা নাগাদ অমিত মারা যায়।
সরকার পক্ষের আইনজীবী জানান, নিহতের বাবার অভিযোগের ভিত্তিতে তুলসিদেবীকে গ্রেফতার করা হয়। বাজেয়াপ্ত করা হয় সেই কাটারিও। অভিযুক্তের জেল হেফাজত হয়। অভিযুক্ত তুলসিদেবী শুনানির সময় নিজে স্বীকার করেন, নাতিকে তিনিই কাটারি দিয়ে খুন করেছেন।
বুধবার বিষ্ণুপুর আদালতে তুলসিদেবী বলেন, ‘‘আমার সঙ্গে ঘরের কেউ দেখা করতে আসেনি। কেউ খোঁজও নেয় না। নাতিটার জন্য মন কেমন করে। আমার শরীর খারাপ। কেন যে ওকে মারলাম, আমি নিজেই জানি না। আমাকে যেন সারা জীবন জেলেই রেখে দেওয়া হয়।’’ অমিতের বাবা ও মা এ দিন আদালতে আসেননি। ফোনে তাঁরা বলেন, ‘‘একটি মাত্র সন্তান ছিল। দিন মজুরি করে পড়াশোনা করাতাম আমরা। কিন্তু সব শেষ হয়ে গেল।’’
ভৈরববাবু বলেন, ‘‘মায়ের মাথার গোলমাল ছিল ঠিকই। টাকার অভাবে ভাল ডাক্তার দেখাতে পারিনি। কিন্তু নিজের নাতির উপর এমন ভাবে চড়াও হবে, ভাবিনি। উচিত শাস্তিই হয়েছে।’’ অভিযুক্ত তুলসি লোহারের স্বামী নেউল লোহার কোনও কথা বলতে চাননি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy