Advertisement
২০ নভেম্বর ২০২৪
নানুরের বাথানপাড়ায় এক দিনেই উঠল ৭২ হাজার টাকা

সতীর্থের পাশে দাঁড়াতে প্রবীণদের ফুটবল

নানুরের বাথানপাড়ার বছর পঁয়ষট্টির বরুণবাবুর এক সময় ভাল ফুটবলার হিসাবে খ্যাতি ছিল। ১৯৭৫ সালে জেলা দলে প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ পান। ১৯৭৯ সালে কলকাতার একটি নামী দলেও সুযোগ পান। কিন্তু অর্থা ভাবে সেই সুযোগ তাঁর কাজে লাগানো সম্ভব হয়নি।

বরুণ কর্মকারকে ঘিরে সকলে। ছবি: সোমনাথ মুস্তাফি

বরুণ কর্মকারকে ঘিরে সকলে। ছবি: সোমনাথ মুস্তাফি

অর্ঘ্য ঘোষ
নানুর শেষ আপডেট: ১১ জুলাই ২০১৭ ০২:৪০
Share: Save:

খেলার মাঠে সতীর্থ বন্ধুর বা়ড়ানো পাসে বিপক্ষকে ওঁরা বহুবার ঘায়েল করেছেন। এ বার সেই বন্ধুকে জীবন যুদ্ধে জেতাতে সহযোগিতার হাত বাড়াল সতীর্থেরা। খেলার মাঠের সেই সব দিনের স্মৃতি রোমন্থন করতে করতে আনন্দাশ্রুতে ভরে গেল এক সময়ের নামী ফুটবলার বরুণ কর্মকারের চোখ।

নানুরের বাথানপাড়ার বছর পঁয়ষট্টির বরুণবাবুর এক সময় ভাল ফুটবলার হিসাবে খ্যাতি ছিল। ১৯৭৫ সালে জেলা দলে প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ পান। ১৯৭৯ সালে কলকাতার একটি নামী দলেও সুযোগ পান। কিন্তু অর্থা ভাবে সেই সুযোগ তাঁর কাজে লাগানো সম্ভব হয়নি। বীরভূম পুলিশের হয়েও খেলেছেন বহুবার। কিন্তু জীবন, জীবকার তাগিদে খেলা ভুলে তাঁকে বেছে নিতে হয় স্বল্প বেতনের প্রাইভেট গাড়ি চালানোর অস্থায়ী কাজ। বছরখানেক আগে একমাত্র মেয়ে গৌরীর বিয়ে দিতে গিয়ে ঘটিবাটিটুকু পর্যন্ত বিকিয়ে গিয়েছে তাঁর।

এই অবস্থায় সম্প্রতি বরুণবাবুর পীঠে ক্যান্সার ধরা পড়ে। এ দিকে অসুস্থতার জেরে অনেক আগেই তাঁর গাড়ি চালানো বন্ধ হয়ে গিয়েছে। বর্ধমানে বিনা খরচে চিকিৎসার ব্যবস্থা হলেও সেখানে যাওয়া-আসা, সংসার চালানো সহ আনুষঙ্গিক খরচ জোগাড় করাই দুষ্কর হয়ে ওঠে তাঁর পক্ষে। বিষয়টি কানে যায় এক সময় তাঁর সঙ্গে খেলা প্রাক্তন ফুটবলারদের। তাঁরাই নানুর ফুটবল ক্লাবের পরিচালনায় রবিবার স্থানীয় পঞ্চায়েত সমিতির মাঠে নবীন বনাম প্রবীণদের একটি প্রীতি ফুটবল ম্যাচের আয়োজন করে। ওই ম্যাচে প্রবীণদের পক্ষে মাঠে নামেন বরুণবাবুর সতীর্থ ফুটবলাররা। সেখানেই তাঁরা বরুণবাবুর সহযোগিতায় নিজেদের মধ্যে চাঁদা করে তুলে দেন ৭২ হাজার টাকা। এঁদেরই অন্যতম আব্দুল আজাদ, ভজনন্দন রাম, কৃষ্ণ সামন্ত, কানাইলাল মাঝি। তাঁরা বলেন, ‘‘এক সময় আমাদের কিংবা বরুণের বাড়ানো বলে বিপক্ষ ঘায়েল হয়েছে। আর অর্থাভাবে আমাদের সে দিনের সেই বন্ধু জীবনের মাঠে হেরে যাবে, তা কিছুতেই মেনে নিতে পারব না। প্রয়োজনে আবার চাঁদা তুলব।’’

খেলার মাঠে ছিলেন বরুণবাবুও। বন্ধুদের সহমর্মিতায় কথা বলতে গিয়ে আবেগে গলা বুজে আসে তাঁর। নিজেকে সামলে কোনও রকমে বলেন, ‘‘এমন বন্ধুভাগ্য আর ক’জনের হয়। ওদের সহমর্মিতাই তো সুস্থ করে তুলবে।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy