আদালতে: বাঁকুড়া আদালতে ধৃত দেবাঞ্জন রায়। নিজস্ব চিত্র
বন্ড কিনতে গিয়ে ব্রোকারের উপরে অন্ধ বিশ্বাস করার পরিণামে ১৫ কোটি টাকা চোট খেয়েছিল বাঁকুড়া জেলা কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্ক। বন্ড কেনার নামে কোটি টাকার ওই প্রতারণায় অভিযুক্ত ব্রোকার অবশেষে ধরা পড়লেন সিআইডি-র হাতে। রবিবার ধৃত দেবাঞ্জন রায়কে বাঁকুড়া আদালতে তোলা হলে ১৪ দিনের সিআইডি হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক। শনিবার কলকাতার দমদমে, নিজের বাড়ি থেকেই সিআইডি দেবাঞ্জনকে প্রথমে আটক করে। জিজ্ঞাসাবাদের পরে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়।
তদন্তে প্রকাশ, তৃণমূল পরিচালিত পরিচালন কমিটির নির্দেশে ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কের বন্ড কেনার নামে নিয়ম না মেনে সরাসরি ধৃত ব্রোকার দেবাঞ্জনের ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ ১৫ কোটি টাকা জমা দিয়েছিলেন। অভিযোগ, টাকা নিয়ে বন্ড কেনার কিছু জাল নথিপত্র সমবায়ের হাতে তুলে দিয়েই চম্পট দেন দেবাঞ্জন। এর পরে কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ ওই বেসরকারি ব্যাঙ্কে বন্ড ভাঙাতে গিয়ে জানতে পারেন দেবাঞ্জনের দেওয়া যাবতীয় নথিপত্র জাল!
এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই সমবায় ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ ও তৃণমূলের পরিচালন কমিটির লোকজনের গাফিলতি নিয়ে সরব হন বিরোধীরা। তাঁদের বক্তব্য ছিল, প্রতারণার ঘটনাটি সামনে আসে ২০১৬ সালের গোড়াতেই। অথচ ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ দেবাঞ্জনের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করে মাস চারেক পরে। পুলিশের কাছ থেকে ঘটনার তদন্তভার নেয় সিআইডি। বন্ড কিনতে গিয়ে ব্রোকারের ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে কেন টাকা দেওয়া হল, সেই প্রশ্নও তুলতে থাকেন বিরোধীরা।
ঘটনা হল, কেবল বাঁকুড়াতেই নয়, ব্রোকার পরিচয়ে একই ভাবে টাকা তুলে পূর্ব মেদিনীপুরের বলগেড়িয়া সেন্ট্রাল কো-অপারেটিভ এবং হাওড়া জেলার একটি সমবায়েও দেবাঞ্জনের বিরুদ্ধে আর্থিক প্রতারণা অভিযোগ রয়েছে। বাঁকুড়ার সমবায় ব্যাঙ্কে জালিয়াতির ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত দাবি করে জেলাশাসকের দফতরে গত বছর অক্টোবরে স্মারকলিপি দেয় সমবায় বাঁচাও কমিটি। দেবাঞ্জনের খোঁজ শুরু হয়।
এ দিকে দুর্নীতির খবর চাউর হতে ও বিরোধীদের চাপে পড়ে গত ডিসেম্বরে ছ’মাসের মেয়াদে কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্কের পরিচালন কমিটি ভেঙে দিয়ে বাঁকুড়ার জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসুকে বিশেষ আধিকারিকের দায়িত্ব দেওয়া হয়।
সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য তথা সমবায় বাঁচাও কমিটির জেলা সহ-সভাপতি প্রতীপ মুখোপাধ্যায় বলেন, “প্রায় নয় দশক ধরে এই ব্যাঙ্ক বাঁকুড়ার মানুষের একটা ভরাসাস্থল। এই ব্যাঙ্কে এই ধরনের দুর্নীতি আগে কখনও ঘটেনি।’’ তাঁর দাবি, এত বড় অর্থ আত্মসাতের ঘটনা শুধু ওই ব্রোকারই জড়িত নন। এর সঙ্গে ব্যাঙ্কের কর্মী-আধিকারিকদের একাংশের যোগসাজশ থাকতে পারে। ‘‘আমাদের দাবি, এই দুর্নীতিতে সাহায্য করা লোকজনদেরও ধরতে হবে ও কঠোর শাস্তি দিতে হবে।’’—বলছেন ওই সিপিএম নেতা।
বাঁকুড়া জেলার অ্যাসিস্ট্যান্ট রেজিস্ট্রার অফ কো-অপারেটিভ সার্ভিসেস (এআরসিএস) দেবসুন্দর মাইতি বলেন, “ওই ব্রোকার গ্রেফতার হয়েছেন বলে খবর পাইনি। তবে সমবায় ব্যাঙ্কের স্বার্থেই টাকাটা উদ্ধার হওয়া দরকার।’’ জেলাশাসক একই অভিমত জানিয়েছেন। শীঘ্রই এই ব্যাঙ্কে পরিচালন কমিটি গড়ার জন্য নির্বাচন হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি। সেই প্রক্রিয়া ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে।
কিন্তু, লোপাট টাকা গেল কোথায়?
বিশেষ সূত্রে জানা গিয়েছে, সমবায় ব্যাঙ্ক থেকে লোপাট করা টাকা এখনও উদ্ধার করা যায়নি। তবে সিআইডি আধিকারিকেরা তদন্ত করে জানতে পেরেছেন, ওই টাকার একটি বড় অংশ দিয়ে জমি ও ফ্ল্যাট নিয়ে নিয়েছেন দেবাঞ্জন। এ দিন আদালতে তোলার সময় ধৃত মুখ খুলতে চাননি সাংবাদিকদের সামনে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy