সাংবাদিক বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —নিজস্ব চিত্র।
‘‘বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে কোনও কথা বলব না। আমার বিনীত আবেদন জুনিয়র ডাক্তারদের কাছে, আমরা আপনাদের তিনটি দাবি মেনে নিয়েছি। সাধারণ মানুষের ভুক্তভোগী হওয়া সমীচীন নয়। এখন ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়া হচ্ছে। বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে কোথাও কোথাও। আগামী দু’-তিন দিন গুরুত্বপূর্ণ। ঝাড়খণ্ড থেকে জল ছাড়ার পর সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। সরকারের তরফে নজর রাখা হচ্ছে।’’
‘‘অনেক কথা হয়েছে। সিপি-র সঙ্গেও কথা হয়েছে। ওঁর নামে অনেক কথা বলা হয়েছে। উনি নিজেই বলেছেন, ‘আমারও পরিবার আছে। আমার পরিবার চাইছে। তাই এই পোস্ট ছাড়ছি। মুখ্যসচিবের সঙ্গে কথা হয়েছে। ওঁরা তিন অফিসারকে সরানোর দাবি করেছিলেন। আমরা দুটো মেনেছি। এর চেয়ে বেশি আর কী করতে পারি।’’
‘‘৯৯ শতাংশ দাবি মেনে নিয়েছি। আর কী করব! জুনিয়র ডাক্তারদের কাজে ফিরতে আবেদন করেছি। বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বিভিন্ন জায়গায়। ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গি হচ্ছে। এই অবস্থায় ওঁরা কাজে ফিরুন। আবেদন করেছি।’’
রাজ্যে বিভিন্ন জায়গায় বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। চিকিৎসা না-পেয়ে অনেকে মারা যাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এই অবস্থায় চিকিৎসকদের কাজে ফেরার আবেদন করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘আপনারা প্লিজ় কাজে ফিরুন। বলেছি জুনিয়র ডাক্তারদের। বলেছি, আপনাদের তিনটে দাবি মেনে নিয়েছি। দায়বদ্ধতা দুই পক্ষেরই। অনেক মানুষ মারা যাচ্ছেন। মানুষের কাছে ডাক্তার ভগবান। তাই আপনারা কাজে ফিরুন।’’
‘‘সব কথা মিনিটসে্ লেখা যায় না। গোয়েল হয়তো সিপি থাকছেন না। নতুন সিপি আসবেন। চারটের মধ্যে তিনটে পয়েন্ট মেনে নিয়েছি। চতুর্থত, ওই দিন সিপি পৌঁছনোর আগে ডিসি (নর্থ) পৌঁছেছিলেন, তাঁকে নিয়ে কথা বলা হয়েছিল। এ ছাড়া স্বাস্থ্যক্ষেত্রে চিকিৎসকদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা হয়েছে। এ টুকু বলছি, আলোচনা সদ্র্থক হয়েছে। আমি তা-ই মনে করি। ওঁরাও নিশ্চয়ই তাই মনে করেন। না-হলে মিনিটসে্ সই করবেন কেন? ওঁদের দাবিদাওয়াই বেশি মেনে নেওয়া হয়েছে। আমি বলেছি, আমার আবেদন। বলেছি, তোমরা কাজে যোগদান করো। রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এই অবস্থায় জুনিয়র ডাক্তারদের কাজে ফেরার কথা বলেছি।’’
ডাক্তারদের দাবি মেনে কলকাতা পুলিশ কমিশনারের পদ থেকে সরানো হচ্ছে বিনীত গোয়েলকে। মঙ্গলবার বিকেলে নতুন সিপি-কে নিয়োগ করা হবে। এ ছাড়া ডিসি নর্থ, স্বাস্থ্য অধিকর্তা, স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিকর্তার বদল হবে। জানালেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘আমরা কাউকে অশ্রদ্ধা, অসম্মান করিনি। কিন্তু ওঁদের বিরুদ্ধে যেহেতু চিকিৎসকদের ক্ষোভ আছে, বলেছে ওঁদের উপর আস্থা নেই, তাই আমরা সরানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমরা নিজেদের মধ্যে কথা বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আগামিকাল বিকেল ৪টের পর সিপি পদে বদল আনব। নতুন সিপি-কে দায়িত্বভার বিনীত (গোয়েল) দেবে। যত ক্ষণ না আদালতে মামলার শুনানি হচ্ছে, তত ক্ষণ এই রদবদল হবে না। পুলিশে আরও কিছু রদবদল হবে। সেটা মুখ্যসচিব বিকেলের পর ৪টের পর জানিয়ে দেবেন নোটিস দিয়ে।’’ মুখ্যমন্ত্রী সাংবাদিক বৈঠকে এ-ও জানিয়েছেন, বিনীত গোয়েল একটি পদে কাজ করার ইচ্ছাপ্রকাশ করেছিলেন। তাঁকে ওই পদেরই দায়িত্বে আনা হচ্ছে।
‘‘সিবিআই যে মামলার তদন্ত করছে, মৃত চিকিৎসকের উদ্দেশে আমার শ্রদ্ধা জানিয়ে আমি বৈঠক শুরু করেছি। ওঁদের চারটে ডিমান্ড (দাবি) ছিল। প্রথমে ছিল তিন জনকে সরানোর। স্বাস্থ্য অধিকর্তা, স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিকর্তা এবং প্রিন্সিপাল সেক্রেটারিকে সরানোর কথা বলা হয়েছিল। আমরা বোঝালাম, যদি একটা বাড়ি যদি পুরো খালি করে দেওয়া হয়, তাহলে প্রশাসনটা চালাবে কে? শেষ পর্যন্ত ডিএইচএস এবং ডিএমএসকে সরানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সরানো হচ্ছে সিপি-কে।’’
প্রায় ৬টা থেকে ১২টা পর্যন্ত বৈঠক হয়েছে। ওঁদের পক্ষ থেকে ৪২ জন সই করেছেন। সরকারের পক্ষ থেকে মিনিটসে্ সই করেছেন মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ। আমরা অভিনন্দন জানিয়েছি চিকিৎসকেরা এসেছেন বলে। আমরা খুশি, তাঁরাও খুশি। ওঁরা বক্তব্য রাখতে চেয়েছিলেন। সেই সুযোগ দিয়েছি। আমরাও আমাদের বক্তব্য রেখেছি।
আন্দোলনকারীদের প্রতিনিধিদের প্রথমে নবান্নে ডাকা হয়েছিল। সে দিন মুখ্যমন্ত্রী দু’ঘণ্টার বেশি সময় ধরে অপেক্ষা করলেও বৈঠক হয়নি। কারণ, জুনিয়র চিকিৎসকদের কথা মতো সরাসরি সম্প্রচারে রাজি হয়নি রাজ্য সরকার। তার পর শনিবার আচমকা সল্টলেকে স্বাস্থ্য ভবনের সামনে ধর্নামঞ্চে পৌঁছে যান মমতা। ডাক্তারদের কাজে ফেরার অনুরোধ করেন। সে দিনই আবার বিকালে তাঁদের কালীঘাটে ডাকা হয়। কিন্তু সে দিনও সরাসরি সম্প্রচার এবং বৈঠকের ভিডিয়োগ্রাফির দাবি নিয়ে মতানৈক্যে আবার ভেস্তে যায় বৈঠক। মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির সামনে বৃষ্টি মাথায় নিয়ে অপেক্ষা করেছিলেন ডাক্তারেরা। মমতা নিজেও বেরিয়ে এসেছিলেন। বৈঠক না করতে চাইলে তাঁদের অন্তত চা খাওয়ার জন্য অনুরোধ করেছিলেন তিনি। কিন্তু তাতেও রাজি হননি জুনিয়র ডাক্তারেরা। কালীঘাট থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় ডাক্তারেরা জানান, মুখ্যমন্ত্রীর কথা মতো নিজেদের সব শর্তই ছেড়ে দিয়েছিলেন তাঁরা। সরাসরি সম্প্রচার এবং ভিডিয়োগ্রাফি ছাড়াই বৈঠক করতে রাজি হয়েছিলেন। কিন্তু শেষে তাঁদের বলা হয়, তিন ঘণ্টা মুখ্যমন্ত্রী অপেক্ষা করেছেন। আর বৈঠক সম্ভব নয়। আবার সল্টলেকের ধর্নামঞ্চে ফিরে যান ডাক্তারেরা। তার পর সোমবার আবার তাঁদের বৈঠকের জন্য ডাকা হয়।
শেষে বার দীর্ঘ ক্ষণ অপেক্ষার পর স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, মুখ্যসচিব মনোজ পন্থেরা যখন মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবন ছেড়ে বেরিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন জুনিয়র ডাক্তারেরা দাবি করেন, তাঁরা সরকারের শর্ত মতোই বৈঠকে রাজি। কিন্তু চন্দ্রিমা তাঁদের জানিয়ে দেন, তখন আর বৈঠক সম্ভব নয়। এর পর সোমবার আবার আলোচনার প্রস্তাব দেওয়া হয় সরকারের তরফে। রাজি হন চিকিৎসকেরাও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy