জল ছাড়া হচ্ছে সিউড়ির তিলপাড়া জলাধার থেকে। রবিবার সকালে। ছবি: তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়
টানা তিন দিনের বৃষ্টিতে বীরভূম জুড়ে জনজীবন কার্যত বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।। পাশাপাশি, বেশ কয়েকটি জলাধার থেকে জল ছাড়া শুরু হয়েছে। কোপাই, অজয়, ময়ূরাক্ষী, শাল ও দ্বারকা নদের তীরে থাকা গ্রামে মাইকিং করে সতর্ক করা হয়েছে। পরিস্থিতির দিকে নজর রাখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন।
এই বৃষ্টিতে জল বাড়ায় বেশ কয়েকটি জায়গায় কজ়ওয়ে ডুবে গিয়েছে। ভেঙে গিয়েছে নদীর উপরে থাকা অস্থায়ী রাস্তাও। বেশ কয়েকটি রাস্তায় গাছ ভেঙে পড়েছে। এতে যান চলাচল ব্যাহত হয়েছে। শান্তিনিকেতনে বিশ্বভারতীর একটি গাড়ির উপরে গাছ ভেঙে পড়ে কয়েক জন আহত হয়েছেন। সিউড়ি ও দুবরাজপুরে কাঁচাবাড়ি ভেঙে পড়ে কয়েক জন আহত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কৃষিজমিও। বৃষ্টির কারণে রবিবারের পুজোর বাজার মার খেয়েছে বলে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন। আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে বরিবার সকাল আটটা পর্যন্ত জেলায় গড় বৃষ্টি হয়েছে ৫৯.৬ মিলিমিটার।
শুক্রবার জেলায় বৃষ্টি শুরু হয়েছে। শনি হয়ে রবিবার জেলার বিভিন্ন প্রান্তে চলেছে টানা বৃষ্টি হয়েছে। সিউড়ি, বোলপুর, রামপুরহাট, সাঁইথিয়া, দুবরাজপুর, মহম্মদবাজার, নলহাটি ও মুরারই— সর্বত্রই একই ছবি। ছুটির দিন ও বৃষ্টির কারণে এ দিন অনেকেই ঘর ছেড়ে বেরোননি। ফলে, রাস্তায় যান চলাচলও ছিল কম।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, টানা বৃষ্টিতে সিউড়ি থেকে বোলপুর আসার রাস্তার দু’পাশে বহু গাছ ভেঙে পড়েছে। ফলে যান চলাচল এ দিন যথেষ্ট ব্যাহত হয়। তবে, অনেকে বাড়ি থেকে না বেরনোয় সে ভাব দুর্ভোগ। জেলা সদর সিউড়িতে সাপ্তাহিক ছুটির জন্য বাজার বন্ধ ছিল। তবে পুজো উপলক্ষে যে দোকানগুলি খোলা থাকে, তার ৭০ শতাংশ দোকান বন্ধ ছিল বলে বিক্রেতারা জানিয়েছেন। তাঁরা জানান, ক্রেতা না থাকায় দোকান বন্ধ রাখা হয়েছিল। ভারী বৃষ্টির কারণে সিউড়ি সুভাষপল্লি এলাকায় শনিবার রাতে বাড়ির দেওয়াল ভেঙে পড়ে। আহত হন প্রিয়ম দাস নামে এক যুবক। সিউড়ি ২ ব্লকেও বেশ কয়েকটি কাঁচা বাড়িও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
প্রায় একই ছবি বোলপুরেও। কয়েক দিন টানা বৃষ্টি চলছে এখানে। এ দিন সকালে শান্তিনিকেতনের শ্যামবাটি মোড়ে রাস্তার উপরে থাকা একটি গাছ বিশ্বভারতীর একটি গাড়ির উপরে ভেঙে পড়ে। আহত হন ওই গাড়ির চালক-সহ মোট চার জন পথচারী। বিশ্বভারতীর বিনয়ভবন, রবীন্দ্রভবন সামনে এবং ক্যাম্পাসের ভিতরে বেশ কয়েকটি জায়গায় গাছ ভেঙে পড়েছে। আমোদপুর ও কোপাই স্টেশনের মাঝে ওভারহেডের তারে গাছ ভেঙে পড়ে আগুন ধরে যায়। তবে এতে তেমন ক্ষতি হয়নি বলে জানিয়েছেন রেলের আধিকারিকেরা। তবে রেল পরিষেবা কিছুটা ব্যাহত হয়। অজয় নদের জল বাড়ার ফলেও এ দিন সকালে ভেসে যায় অজয় নদের উপরে থাকা অস্থায়ী রাস্তা। ফলে, পশ্চিম বর্ধমান ও বীরভূমের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। অজয়ের তীরে থাকা জয়দেব, ঘুরিষা, বিলাতি প্রভৃতি গ্রাম পঞ্চায়েতের এলাকার বেশ কয়েকটি কাঁচাবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মহকুমাশাসক(বোলপুর) অয়ন নাথ বলেন, “পরিস্থিতির উপরে আমরা নজর রেখেছি। ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দাদের নদী তীরবর্তী এলাকা নিরাপদ স্থানে সরিয়ে ফেলা হয়েছে।”
টানা বৃষ্টির জেরে জনজীবন ব্যাহত হয়েছে রামপুরহাট শহরেও। দু’-একটি জায়গায় গাছ পড়ার ঘটনা ঘটেছে। তবে এতে তেমন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। তবে রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল চত্বরে জল জমে যায়। ভোগান্তি হয় রোগী ও পরিজনদের। মহম্মদবাজারে সিউড়ি-সাঁইথিয়া রাস্তার উপরে পটেলনগরে একটি গাছ ভেঙে পড়ায় এ দিন সকালে যান চলাচল ব্যাহত হয়। মহম্মদবাজার, পটেলনগর, শেওড়াফুলি, কোবিলপুর-সহ একাধিক জায়গায় বিদ্যুতের তারের উপর গাছ পড়ে যাওয়ায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে বলেও জানা গিয়েছে।
দুবরাজপুর এলাকায় টানা বৃষ্টি জেরে গাছ ভেঙে পড়া ও দেওয়াল ধসে পড়ার ঘটনা ঘটেছে। দুবরাজপুরের লক্ষীনারায়ণপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত প্রতাপপুর গ্রামে রবিবার ভোরে মাটির দেওয়াল ধসে আহত হন লালন বাগদি ও তাঁর স্ত্রী কবিতা বাগদি। আহত অবস্থায় তাঁদের সিউড়ি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে।
টানা বৃষ্টিতে বিভিন্ন নদীর জল বাড়ার ফলে এ দিন তিলপাড়া ব্যারেজ থেকে ৬,০০০ কিউসেক, হিংলো জলাধার থেকে ৪,৬০০ কিউসেক জল ছাড়া হচ্ছে । এগজ়িকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার (ময়ূরাক্ষী ক্যানাল সেচ) সন্দীপ দাস বলেন, “আপাতত তিলপাড়া ব্যারেজ থেকে ৬,০০০ কিউসেক জল ছাড়া হচ্ছে। এটি সামান্য পরিমাণ। ময়ূরাক্ষী নদীর উপরে ঝাড়খণ্ডের মশানজোড় জলাধার থেকেও এই মুহূর্তে জল ছাড়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। আশা করা যাচ্ছে সোমবার বিকেলের পর থেকেই পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক হয়ে যাবে।” প্রশাসনের তরফে ইতিমধ্যেই মাইকিং করে কোপাই, অজয়, ময়ূরাক্ষী, শাল ও দ্বারকা নদে যাঁরা মাছ ধরেন তাঁদের নদীতে নামার ব্যাপারে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। পাশাপাশি, নদী তীর ও বন্যাপ্রবণ অঞ্চলে থাকা পরিবারগুলিকে অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে আসার পরিকল্পনাও শুরু করেছে জেলা প্রশাসন।”
জেলাশাসক বিধান রায় বলেন, “পরিস্থিতির উপরে আমরা সর্বক্ষণ নজর রেখে চলেছি। ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকটি এলাকায় গাছ ভেঙে পড়া এবং কাঁচা বাড়ি ভাঙার খবর
এসেছে। পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য প্রতিটি ব্লকেই কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy