Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Banduan

‘অলৌকিক’ মুদ্রার জন্য অগ্রিম নিয়ে শ্রীঘরে ঠাঁই

সামনে আতপ চাল বা দুর্বা ঘাস ধরলে ‘আজব’ সেই মুদ্রা নাকি টেনে নেয়।

পাকড়াও: পুরুলিয়া আদালত চত্বরে ধৃত চার জন। (ইনেসেটে) পুলিশের দাবি, ধৃতদের থেকে এই মুদ্রা উদ্ধার করা হয়েছে। নিজস্ব চিত্র

পাকড়াও: পুরুলিয়া আদালত চত্বরে ধৃত চার জন। (ইনেসেটে) পুলিশের দাবি, ধৃতদের থেকে এই মুদ্রা উদ্ধার করা হয়েছে। নিজস্ব চিত্র

রথীন্দ্রনাথ মাহাতো
বান্দোয়ান শেষ আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২০২০ ০৪:৩৯
Share: Save:

আধ আনার জন্য কড়কড়ে দশ হাজার টাকা অগ্রিম দিয়ে বায়না করেছিলেন।

সামনে আতপ চাল বা দুর্বা ঘাস ধরলে ‘আজব’ সেই মুদ্রা নাকি টেনে নেয়। তবে, সেটা যে শুধু ভিডিয়োর কেরামিতেই হয় সেই টনক নড়তে নড়তে টাকাকড়ি নিয়ে চম্পট দিয়েছিল বুজরুকেরা। রবিবার রাতে এমন অভিযোগ পেয়ে বান্দোয়ান বাসস্ট্যান্ড থেকে এক মহিলা-সহ চার জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। প্রত্যেকেই ঝাড়খণ্ডের রাঁচীর নামকুম থানা এলাকার বাসিন্দা। আর বুজরুকির ‘শিকার’ জগদীশ মাহাতো যুব তৃণমূল নেতা বলে এলাকায় পরিচিত।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ধৃতদের নাম মহাবীর লাকড়া, রামকুমার নায়েক, প্রভা দেবী এবং অনিল লাকড়া। গত ৬ জানুয়ারি চার জন বান্দোয়ানে আসেন। একটি লজে ঘর ভাড়া নিয়ে ওঠেন। পরদিন বান্দোয়ানের একটি চায়ের দোকানে তাদের সঙ্গে আলাপ হয় জগদীশবাবুর। চাঁদরা গ্রামের জগদীশবাবু ওই দোকানে চা খেতে গিয়েছিলেন। কথায় কথায় বুজরুকেরা মুদ্রার প্রসঙ্গ পাড়ে।

পুলিশের দাবি, জেরায় জানা গিয়েছে আরও অনেককেই ওই টোপ দিয়েছিল তারা। কথায় কথায় বুঝে নেওয়ার চেষ্টা করত, কে কোন কথায় মজবে। কাউকে বলত, দৈবী মুদ্রা ঘরে রাখলে প্রচুর ধনসম্পত্তি হবে। কাউকে বলত, মুদ্রা কাছে থাকলে ‘অলৌকিক’ ক্ষমতা আসবে। কাউকে বলত, প্রাচীন মুদ্রা এমন আশ্চর্য জিনিসে তৈরি যা চাল বা সুতোর মতো নানা কিছুকে আকর্ষণ করে।

জগদীশবাবুর নানা জিনিস সংগ্রহ করে রাখার শখ। ‘দুষ্পাপ্য’ মুদ্রার কথা শুনে উৎসাহিত হন। জগদীশবাবু বলেন, ‘‘আমার বাতিকটা আছে ওরা আঁচ করেছিল। বলেছিল, এ সব জিনিস তো সবার সামনে দেখানো যায় না। তাই লজে যেতে।’’ তিনি যান। তাঁকে ধাতব একটি মুদ্রা দেখানো হয়। এক পিঠে রানি ভিক্টোরিয়ার ছবি। অন্য পিঠে খোদাই করে সাল লেখা— ১৮৬২। হাতের কাছে আতপ চাল বা দুর্বা ঘাস নেই। তাই কয়েকটি ভিডিয়ো দেখিয়ে জগদীশবাবুকে মুদ্রার ‘কেরামতি’ বোঝানোর চেষ্টা করা হয়।

জগদীশবাবু রাজি হয়ে যান মুদ্রাটি কিনতে। দরদস্তুর করে ২০ হাজার টাকায় রফা হয়। তাঁর কাছে দশ হাজার টাকা ছিল। তা দেন। জগদীশবাবু জানাচ্ছেন, বিশ্বাস অর্জনের জন্য তখন সেই টাকা নেওয়ার ব্যাপারে বিশেষ উৎসাহ দেখায়নি ওই চার জন। রবিবার টাকা জোগাড় হয়। ফোনে সেই কথা জানালে আবার জগদীশবাবুকে লজে ডাকা হয়।

সন্ধ্যায় গিয়ে দেখেন, কেউ নেই। লজের লোকজন জানান, অনেকক্ষণ আগেই ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছে ওই চার জন। ফোন করে দেখা যায়, মোবাইল বন্ধ। তড়িঘড়ি থানায় যান জগদীশবাবু। বান্দোয়ান বাসস্ট্যান্ড থেকে পুলিশ পাকড়াও করে অভিযুক্ত চার জনকে। তাদের বিরুদ্ধে প্রতারণা, ষড়যন্ত্রের মতো বিভিন্ন ধারায় মামলা রুজু হয়েছে। সোমবার পুরুলিয়া আদাতলে তাদের তোলা হয়। রামকুমার ও অনিলের চার দিন পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ হয়েছে। মহাবীর ও প্রভার ১৪ দিন জেল হাজতের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। পুরুলিয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ধৃতিমান সরকার বলেন, ‘‘এই প্রতারণা চক্রের সঙ্গে আরও কেউ জড়িত কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’

মুদ্রা অলৌকিক নয়, তা বুঝেছেন জগদীশবাবু। সেটি যে দুষ্প্রাপ্যও নয়, সে কথা জানাচ্ছেন আদ্রার মুদ্রা সংগ্রাহক সুমিত বেরা। তাঁর কথায়, ‘‘সংগ্রাহকদের কাছে বড়জোর পাঁচশো টাকা দাম হবে ওই মুদ্রার। তবে ছবি দেখে মনে হচ্ছে সেটির উপরে অনেক ‘অত্যাচার’ হয়েছে। সে জন্য দর আরও কম হতে পারে।’’ বিজ্ঞান মঞ্চের পুরুলিয়া জেলা সম্পাদক নয়ন মুখোপাধ্যায়ের অভিজ্ঞতা, মুদ্রা নিয়ে নানা রকমের প্রতারণা পুরুলিয়ায় হামেশাই হয়। তিনি জানাচ্ছেন, বুজরুকি দেখানোর জন্য মুদ্রার উপরে ‘অত্যাচার’ হয়। কখনও সেগুলিতে মাখানো হয় রাসায়নিক। কখনও কিছুতে ঘষে ঘষে স্থিরতড়িৎ তৈরি করা হয়। সেই রেশ থাকাকালীন চাল বা ঘাস আকৃষ্ট হতে পারে। কিন্তু ধাতুর যে ক্ষতি হয় এই সমস্ত কাণ্ড করতে গিয়ে, তার জেরে আসল মুদ্রার কদর অনেক কমে যায়।

অন্য বিষয়গুলি:

Banduan Arrest Old Coin
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy