—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
হাতি উপদ্রুত এলাকায় পরীক্ষার্থীদের কেন্দ্রে পৌঁছনো ও পরীক্ষা শেষে বাড়ি ফেরানোর জন্য গাড়ির ব্যবস্থা বন দফতর করবে বলে জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অথচ শুক্রবার মাধ্যমিক পরীক্ষার প্রথম দিনেই এ নিয়ে বিস্তর অভিযোগ উঠল বাঁকুড়া জেলার নানা প্রান্তে। কোথাও পরীক্ষার্থীদের কেন্দ্রে পৌঁছনো হলেও ফেরার সময় আর বনদফতরের গাড়ি দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ তুললেন পরীক্ষার্থী, কোথাও আবার তৃণমূলের ব্লক সভাপতি হাতি উপদ্রুত এলাকায় গাড়ি না দেওয়ার অভিযোগ তুললেন।
বাঁকুড়া উত্তর ও বিষ্ণুপুর পাঞ্চেৎ ডিভিশনের জঙ্গলে রয়েছে প্রায় ৬০টি হাতি। জানুয়ারিতেই হাতির হানায় বড়জোড়ায় দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবারও হাতির হানায় জখম হন বড়জোড়ার খাঁড়ারির বাসিন্দা গৌতম মণ্ডল। প্রাতর্ভ্রমণে বেরিয়ে কুয়াশার জন্য হাতির সামনে তিনি পড়ে যান। একটি নার্সিংহোমে তাঁকে ভর্তি করানো হয়েছে।
কুয়াশার মধ্যে পরীক্ষা দিতে যাওয়া মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের নিয়ে তাই উদ্বেগ ছড়িয়েছে হাতি উপদ্রুত এলাকার অভিভাবকদের মধ্যে। বড়জোড়ার ভুস্তোড়া, গোপবান্দি, ফুলবেড়িয়া, জগন্নাথপুর প্রভৃতি হাতি উপদ্রুত এলাকায় বন দফতর পরীক্ষার্থীদের জন্য গাড়ি পাঠায়। রাজ্যের মুখ্যবনপাল (কেন্দ্রীয় চক্র) কুলান ডেইভাল, বাঁকুড়া উত্তর বনবিভাগের ডিএফও উমর ইমাম নানা জায়গা পরিদর্শনও করেন।
যদিও বড়জোড়া ব্লকেরই কিছু হাতি উপদ্রুত এলাকায় বন দফতর পরীক্ষার্থীদের জন্য গাড়ি দেয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। বড়জোড়া ব্লক তৃণমূল সভাপতি কালীদাস মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বড়জোড়ার বাঁকুড়ারডাঙার পরীক্ষার্থীরা জঙ্গলপথ দিয়ে পরীক্ষা কেন্দ্রে যাচ্ছে। অথচ বন দফতর সেখানে গাড়ি দেয়নি। আমরা দলীয় ভাবে ওই পরীক্ষার্থীদের জন্য দু’টি টোটো ভাড়া করে দিই। আগামী পরীক্ষাগুলিতে সেখানে যাতে গাড়ি দেওয়া হয় বন কর্তাদের ফোনে আবেদন জানিয়েছি।”
বিষ্ণুপুরের জঙ্গলঘেঁষা পানশিউলি, কানগোড়া, মোবারকপুর, শিরোমণিপুরের মতো কিছু গ্রাম থেকে পরীক্ষার্থীদের গাড়িতে পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছে দেওয়া হয়। কিন্তু পরীক্ষা শেষের পরে তাদের আনতে যায়নি সেই বিশেষ গাড়ি।
পানশিউলির বাসিন্দা স্বপন সোরেনের মেয়ে সুমনা বিষ্ণুপুর মহকুমা স্কুলে বন দফতরের গাড়িতে পরীক্ষা দিতে গিয়েছিল। ফিরতি পথে সে গাড়ি পায়নি। তার বাবা দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার পরে প্রায় আট কিলোমিটার জঙ্গলপথ সাইকেলে পাড়ি দিয়ে মেয়েকে পরীক্ষাকেন্দ্র থেকে নিয়ে আসেন।
তাঁর আক্ষেপ, “এটা কেমন হল? কথা ছিল বন দফতরের গাড়িতেই পরীক্ষার্থীরা যাওয়া-আসা করবে। কিন্তু না জানিয়েই গাড়ি বন্ধ করে দেওয়া হল!’’ পানশিউলি গ্রামের অনেকে টোটো ভাড়া করে গ্রামে ফেরে। পানশিউলি গ্রাম সংলগ্ন হাতগাড়া গ্রামের আর এক পরীক্ষার্থী সুপর্ণা লোহার বলে, ‘‘বন দফতর পাশের গ্রামের পরীক্ষার্থীদের গাড়িতে নিয়ে যাচ্ছে, অথচ আমাদের জানায়নি।’’
বিষ্ণুপুরের রেঞ্জার তপোব্রত রায়ের দাবি, ‘‘স্থানীয় বনসুরক্ষা কমিটির উপরেই পরীক্ষার্থীদের নিয়ে যাওয়া-আসার দায়িত্ব ছিল। ওরা ঠিকঠাক কাজ করেছে কি না খতিয়ে দেখছি।” বিষ্ণুপুরের মহকুমা শাসক প্রসেনজিৎ ঘোষ বলেন, “এটা ঠিক হয়নি, কোথায় ভুল হয়েছে জেনে যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছি।”
বাঁকুড়া উত্তর বনবিভাগের ডিএফও উমর ইমাম বলেন, “পরিকল্পনামাফিক সমস্ত জায়গা থেকেই পরীক্ষার্থীদের কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া ও আসা হয়েছে। একটি জায়গায় গাড়ি দেওয়ার দাবি উঠেছে। সেখানে পরবর্তী পরীক্ষায় গাড়ির ব্যবস্থা করা হচ্ছে। পুলিশ ও প্রশাসনের সঙ্গে যৌথ ভাবে গোটা বিষয়টি পরিচালনা করা হচ্ছে।”
তিনি জানান, উত্তর বনবিভাগের জঙ্গলে থাকা হাতিগুলির গতিবিধি নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি
সতর্ক নজর রাখা হচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy