Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
CPIM

বাংলাদেশ-প্রশ্নে অবস্থান নিয়ে অসন্তোষ সিপিএমে

বাংলাদেশে হিন্দুদের উপরে নিপীড়নের অভিযোগে পথে নামার প্রশ্নেই দলের অন্দরে অসন্তোষ বেশি। আর জি কর-কাণ্ডেও দলের আরও ‘সক্রিয়’ হওয়া উচিত ছিল বলে মনে করছে সিপিএমের একাংশ।

বাংলাদেশের পরিস্থিতির প্রভাব যে এখানে অনেক বেশি, দল কি তা বুঝতে ভুল করছে?

বাংলাদেশের পরিস্থিতির প্রভাব যে এখানে অনেক বেশি, দল কি তা বুঝতে ভুল করছে? —প্রতীকী চিত্র।

সন্দীপন চক্রবর্তী
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৫:৫২
Share: Save:

লোকসভা ভোটের পরে গত কয়েক মাসে দুই প্রশ্নে সরগরম হয়েছে রাজ্য রাজনীতি। সেই দুই বিষয়েই দলের অবস্থান ও আন্দোলন নিয়ে প্রশ্ন উঠছে সিপিএমের সম্মেলন-পর্বে। তার মধ্যে বাংলাদেশে হিন্দুদের উপরে নিপীড়নের অভিযোগে পথে নামার প্রশ্নেই দলের অন্দরে অসন্তোষ বেশি। আর জি কর-কাণ্ডেও দলের আরও ‘সক্রিয়’ হওয়া উচিত ছিল বলে মনে করছে সিপিএমের একাংশ।

ডিসেম্বরের মাঝামাঝি থেকে শুরু হয়েছে সিপিএমের জেলা সম্মেলনের প্রক্রিয়া। এখনও পর্যন্ত নদিয়া, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, হুগলি ও জলপাইগুড়ি জেলায় সম্মেলন হয়েছে। ডিসেম্বরের শেষ ও জানুয়ারির শুরুতে আরও কিছু জেলার সম্মেলন আসন্ন। সিপিএম সূত্রের খবর, সম্মেলনে চার জেলাতেই প্রতিনিধিদের আলোচনায় উঠে এসেছে বাংলাদেশ প্রসঙ্গ। তাঁদের বড় অংশের প্রশ্ন, বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দুদের উপরে নির্যাতনের অভিযোগকে সামনে রেখে আরও তৎপর হয়ে রাস্তায় নামা হল না কেন? ভারতে সংখ্যালঘুদের উপরে আক্রমণ এবং বাংলাদেশের পরিস্থিতিকে সব সময়ে একই বন্ধনীতে রাখা কি জরুরি? ওই অংশের মতে, দলের বক্তব্যে ‘অস্পষ্টতা’র জন্যই প্যালেস্টাইন ও বাংলাদেশের দৃষ্টান্ত টেনে সিপিএমকে ‘মুসলিমপন্থী’ বলে দেগে দেওয়ার সুযোগ বিজেপি-সহ বিরোধীরা পাচ্ছে। সিপিএমের রাজ্য নেতৃত্ব সম্মেলনে দলের অবস্থান ব্যাখ্যা করলেও প্রশ্ন এড়াতে পারছেন না। অন্যান্য জেলাতেও এই প্রবণতা থাকবে বলে রাজ্য নেতৃত্বের একাংশের ধারণা।

সূত্রের খবর, একটি জেলার সম্মেলনে প্রশ্ন এসেছে, পাশের দেশ বাংলাদেশের পরিস্থিতির প্রভাব যে এখানে অনেক বেশি, দল কি তা বুঝতে ভুল করছে? বাংলাদেশ নিয়ে এ’পারে বিতর্ক শুরু হওয়ার পরে সিপিএম বা বামেদের তরফে নানা এলাকায় কর্মসূচি হলেও কেন্দ্রীয় ভাবে বড় প্রতিবাদ দেখা গেল না কেন? অন্য আর একটি জেলায় প্রতিনিধিরা মত দিয়েছেন, সংখ্যালঘু-প্রশ্নে বিজেপির ‘দ্বিচারিতা’ ধরিয়ে দেওয়া দরকার। কিন্তু সেই কৌশলে নজর দিতে গিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে এ দেশের ঘটনাকে সব সময় একই সঙ্গে টানলে জনমানসে ‘ভুল বার্তা’ যাচ্ছে। আবার প্রতিনিধিদের একাংশ এই কথাও বলেছেন যে, বাংলাদেশের ঘটনায় বিজেপির সঙ্গে বামেদের অবস্থান এক হয়ে যাওয়ার একটা সম্ভাবনা ছিল বা আছে। সেই বিড়ম্বনা এড়াতে গিয়েই হয়তো দলের বক্তব্য ‘লঘু’ হয়ে যাচ্ছে। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম অবশ্য সম্মেলনে ব্যাখ্যা দিচ্ছেন, এই সমালোচনা সর্বাংশে যথার্থ নয়। বাংলাদেশে হিন্দুদের উপরে মৌলবাদী আক্রমণের স্পষ্ট নিন্দা এখানকার রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে সিপিএমের পলিটব্যুরোই প্রথম করেছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বরং মুখ খোলেননি! সর্বত্র রাজনীতিতে ধর্মের অনুপ্রবেশ এবং মৌলবাদী শক্তির কাজকর্মের বিরোধিতা করাই সিপিএমের ঘোষিত অবস্থান।

আর জি কর-কাণ্ডে দলীয় পতাকা নিয়ে নাগরিক প্রতিবাদকে ‘দখল’ করা দলের উদ্দেশ্য নয়, এই বার্তা আন্দোলনের গোড়ার দিকেই সিপিএমের রাজ্য কমিটিতে স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন রাজ্য নেতৃত্ব। এই অবস্থান নিয়ে দলে বিশেষ প্রশ্ন নেই। যদিও জেলা সম্মেলনে প্রতিনিধিদের অল্প একাংশ প্রশ্ন তুলছেন, পতাকা না-নিয়ে প্রতিবাদ করে কোনও লাভ হল কি? তবে অন্য অংশের দাবি, নাগরিক প্রতিবাদ যেমন চলার, চলেছে। তার পাশাপাশি দল তার নিজস্ব কর্মসূচি আরও বাড়াতে পারতো। আর জি কর মেডিক্যাল কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ ও টালা থানার প্রাক্তন ওসি অভিজিৎ মণ্ডলের বিরুদ্ধে সিবিআই চার্জশিট দিতে না-পারায় ফের প্রতিবাদ শুরু হয়েছে। কিন্তু এই পর্বে সিপিএমের ছাত্র সংগঠন বাদে বাকিদের সে ভাবে পাওয়া যায়নি দলের সম্মেলন-পর্ব শুরু হয়ে যাওয়ায়। এই সূত্রেই সম্মেলনে কথা উঠছে, বিষয় থাকা সত্ত্বেও আন্দোলনে দলের বড় রকমের ঘাটতি থাকছে।

সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের কথায়, ‘‘আত্মসমালোচনার প্রক্রিয়া আমাদের দলে আছে, সম্মেলনে সেটা হয়েই থাকে। তবে আন্দোলনের তীব্রতা বাড়ানোর স‌ুযোগ যে আছে, এতে কোনও সংশয় নেই।’’

অন্য বিষয়গুলি:

CPIM Bangladesh Unrest RG Kar Protest
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy