Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Enforcement Directorate

কালীঘাট, আমতলার জমি-বাড়িতে নজর

কালীঘাটে এবং আমতলায় সব জমি-বাড়ি ওই লিপস অ্যান্ড বাউন্ডসের মালিকানাধীন বলেই আদালতে নথি পেশ করে দাবি করেছেন ইডির তদন্তকারীরা। ওই সব সম্পত্তির এখনকার বাজার মূল্য প্রায় সাড়ে সাত কোটি টাকা, দাবি ইডির।

— প্রতীকী চিত্র।

শুভাশিস ঘটক
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৬:০১
Share: Save:

ভবানীপুর বিধানসভা কেন্দ্রের কালীঘাট রোড এলাকায় সাতটি ফ্ল্যাট এবং ডায়মন্ড হারবার লোকসভা কেন্দ্রের আমতলা মৌজায় একটি পাঁচতলা বাড়ি ও জমির খুঁটিনাটি আপাতত প্রাথমিক নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে ইডির তদন্ত সূত্রে উঠে এসেছে। প্রাথমিক নিয়োগ দুর্নীতির টাকা এ রাজ্যের শাসকদলের প্রভাবশালীদের একাংশের নামের সঙ্গে যুক্ত লিপস অ্যান্ড বাউন্ডস সংস্থার মাধ্যমে সরানো হয় বলেই ইডির তদন্ত সূত্রের দাবি।

কালীঘাটে এবং আমতলায় এই সব জমি-বাড়ি ওই লিপস অ্যান্ড বাউন্ডসের মালিকানাধীন বলেই আদালতে নথি পেশ করে দাবি করেছেন ইডির তদন্তকারীরা। ওই সব সম্পত্তির এখনকার বাজার মূল্য প্রায় সাড়ে সাত কোটি টাকা, দাবি ইডির। ইডি আদালতে লিখিত ভাবে জানায়, এ সবই বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, মাসখানেক আগে বিচার ভবনে সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতে ইডি পঞ্চম সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট পেশ করেছে। সঙ্গে কয়েক হাজার পাতার নথিও জমা দিয়েছে তারা। ওই নথির ২৯, ৩০ এবং ৩১ নম্বর পাতায় ভবানীপুর বিধানসভা কেন্দ্রের কালীঘাট রোড এলাকায় সাতটি ফ্ল্যাট এবং ডায়মন্ড হারবার লোকসভা কেন্দ্রের আমতলা মৌজায় একটি পাঁচ তলা বাড়ি ও জমি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে বলে ঠিকানাসুদ্ধ আদালতে জানিয়েছেন তদন্তকারীরা।

তবে ইডির এক কর্তার কথায়, “লিপস অ্যান্ড বাউন্ডসের হাত ধরে বেআইনি ভাবে অর্থ বিনিয়োগের আরও সম্পত্তির হদিস মিলেছে। তা বাজেয়াপ্ত করার প্রক্রিয়া চালু রয়েছে বলেও আদালতের নথিতে লিখিত ভাবে জানানো হয়েছে।”

ইডির তদন্তকারীরা জানান, গত জুলাইয়ে লিপস অ্যান্ড বাউন্ডস-এর প্রাইভেট লিমিটেডের নিউ আলিপুরের অফিস-সহ বেশ কয়েকটি সংস্থায় তল্লাশি অভিযান চালানো হয়েছিল। তখন নানা সম্পত্তির দলিল-সহ নথি উদ্ধার হয়। লিপস অ্যান্ড বাউন্ডসের অ্যাকাউন্টে জাল নথি ও হাওলার মাধ্যমে নগদ এবং বিভিন্ন ‘ভূতুড়ে’ সংস্থার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে টাকা জমা পড়ার তথ্যও তখন উদ্ধার হয়, দাবি ইডির। লিপস অ্যান্ড বাউন্ডস সংস্থা ওই সব টাকা পর পর সম্পত্তিতে বিনিয়োগ করে বলেও প্রাথমিক সূত্রে উঠে এসেছে, জানিয়েছে ইডি। সূত্রের দাবি, দিল্লিতে ইডির অ্যাডজুডিকেটিং অথরিটি লিপস অ্যান্ড বাউন্ডস-এর আর্থিক লেনদেনের সব নথি যাচাই করলে বেআইনি লেনদেন বা কালো টাকা সাদা করার বিষয়টি জানা যায়।

ইডির সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের তরফে সংস্থার ডিরেক্টরদের নোটিস জারি করে নানা সম্পত্তি কেনার টাকার উৎসের নথি জমা দিতে বলা হয়েছে। ওই সংস্থার দুই ডিরেক্টর অমিত বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তাঁর স্ত্রী লতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নোটিস দেওয়া হয় বলেও তদন্তকারীদের সূত্রের খবর। কালীঘাট, ডায়মন্ড হারবারের সম্পত্তি কেনার টাকার উৎস নিয়েও তখনই প্রশ্ন ওঠে। ওই সম্পত্তি কেনার টাকার উৎসের কোনও আইনসম্মত নথি সংস্থাটির তরফে কেউ পেশ করতে পারেননি এখনও, দাবি ইডি সূত্রের।

ইডি সূত্রে দাবি, ওই সংস্থার অন্যতম প্রাক্তন ডিরেক্টর তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। অমিত ও লতা তাঁর বাবা-মা। ২০১৪ সালে ওই সংস্থার ডিরেক্টর পদ থেকে পদত্যাগ করেছিলেন অভিষেক। পরে তাঁর স্ত্রী রুজিরাও পদত্যাগ করেন। আর এক প্রাক্তন ডিরেক্টর সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রও (বর্তমানে প্রাথমিক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় জেল হেফাজতে রয়েছেন) ওই সময়ের পরেই পদত্যাগ করেন।

ইডির এক কর্তার কথায়, “লিপস অ্যান্ড বাউন্ডস-এর ব্যবসার কোনও মাথামুন্ডু নেই। ওই সংস্থার সঙ্গে নিয়োগ দুর্নীতিতে জড়িত কয়েকটি সংস্থার যোগসাজশের হদিস পাওয়া গিয়েছে। পরামর্শ ও পরিষেবামূলক সেবা দেওয়া হয় বলে ওই সব সংস্থার সঙ্গে চুক্তি হয়েছিল। কিন্তু কী পরিষেবা বা কিসের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, তার উল্লেখ নেই। শুধু ওই সংস্থাগুলি মারফত লিপস অ্যান্ড বাউন্ডস-এর সঙ্গে আর্থিক লেনদেন হয়েছে বা নগদ টাকা জমা পড়েছে বলে তথ্যপ্রমাণ হাতে এসেছে। ইডির চতুর্থ ও পঞ্চম সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিটে এ সব লেনদেনের সবিস্তার তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে।” ওই কর্তা জানান, শুধুমাত্র কাগজে-কলমে নামকাওয়াস্তে রসিদ, ভাউচার এবং নানা ভুয়ো ‘ট্রেডিং স্লিপ’ জমা দিয়ে কোটি কোটি টাকার লেনদেন করা হয়েছে বলে তথ্যপ্রমাণ এবং সাক্ষ্য মিলেছে। ইডির সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিটে দাবি, প্রাথমিক ভাবে চারটি সংস্থা থেকে বেআইনি লেনদেনে ২ কোটি ৮৩ লক্ষ ২৬ হাজার টাকা লিপস অ্যান্ড বাউন্ডস প্রাইভেট লিমিটেডে জমা পড়েছে বলে নির্দিষ্ট তথ্য ও সাক্ষ্যপ্রমাণ মিলেছে।

ইডির এক কর্তার কথায়, “রাজনৈতিক প্রভাবশালীরা পর্দার আড়ালে থেকে পরিজন এবং ঘনিষ্ঠদের মাধ্যমে আর্থিক লেনদেন করে থাকেন। বেআইনি আর্থিক লেনদেনের সব নথি মুছে ফেলা যায় না। ধীরে ধীরে তদন্ত প্রক্রিয়ায় তা স্পষ্ট হয়। লিপস অ্যান্ড বাউন্ডস-এর ক্ষেত্রে এই দৃষ্টান্ত উঠে আসছে বলে ভাবার কারণ আছে।”

ইডি সূত্রের দাবি, নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও তাঁর বান্ধবী অর্পিতা মুখোপাধ্যায়-সহ ২৯ জন এবং লিপস অ্যান্ড বাউন্ডস-সহ ২৫টি সংস্থাকে অভিযুক্ত দায়ের করে সম্প্রতি পঞ্চম সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট জমা দেওয়া হয়েছে। এখনও পর্যন্ত ৫৩১ কোটি ৮৬ লক্ষ টাকার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। লিপস অ্যান্ড বাউন্ডস-এর এক আইনজীবী বলেন, “ওই মামলার চার্জ গঠন ও বিচার প্রক্রিয়া শুরুর পথে। ইডির তরফে নানা নথি কোর্টে পেশ হয়েছে। সব কিছু বিচারাধীন। কোনও মন্তব্য করা সম্ভব নয়।”

অন্য বিষয়গুলি:

Enforcement Directorate kalighat ED Leaps and Bounds West Bengal Recruitment Case
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy