হিড়বাঁধের জঙ্গলে হঠাৎই আগুন ছড়াল শুক্রবার সকালে।—নিজস্ব চিত্র
জঙ্গলের শুকনো খসখসে পাতায় আগুন লেগেছিল। সেই আগুনই দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ল জঙ্গলের ভিতরে।
বাঁকুড়ার হিড়বাঁধ থানার বিরাডির জঙ্গলে শুক্রবার দুপুরের ঘটনা। আগুনের লেলিহান শিখা দেখে আতঙ্কিত হন জঙ্গল লাগোয়া বিরাডি ও বেলাডি গ্রামের বাসিন্দারা। আগুন না গ্রামটিকে গ্রাস করে, এই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। প্রায় ৬ ঘণ্টা ধরে দমকলের তিনটি ইঞ্জিনের চেষ্টায় শেষে আগুন আয়ত্তে আসে। তবে এই অগ্নিকাণ্ডের জেরে বন দফতরের কয়েক লক্ষ টাকার গাছ নষ্ট হয়েছে বলে প্রাথমিক ভাবে বন দফতরের অনুমান।
বন দফতর ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন সকাল ১০টা নাগাদ মশিয়াড়া পঞ্চায়েতের বিরাডির জঙ্গলে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলতে দেখা যায়। এ দিকে গ্রাম লাগোয়া জঙ্গলে আগুন দেখে কার্যত দিশেহারা অবস্থা হয় বিরাডি ও বেলাডি গ্রামের বাসিন্দাদের। ওই আগুন গ্রামে ছড়িয়ে পড়তে পারে এই আশঙ্কায় অনেকেই বাড়ি থেকে তাঁদের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র দ্রুত অন্যত্র সরিয়ে ফেলতে শুরু করে দেন। অনেকেই আবার নিজেদের খড়ের ছাউনি দেওয়া বাড়িতে জল ঢালতে থাকেন।
বিরাডি গ্রামের বাসিন্দা কৃষ্ণ মণ্ডল, অমর মণ্ডল আতঙ্কের সুরে বললেন, “বাড়ি থেকে মাত্র দু’শো মিটার দূরে জঙ্গলে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে দেখে আমরা হতভম্ব হয়ে পড়েছিলাম। মনে হচ্ছিল এই বুঝি আগুন ধরল আমাদের ঘরে। সেই কারণে নিজেদের ঘর বাঁচাতে জল ঢালি খড়ের ছাউনিতে।’’ গ্রামের আর এক বাসিন্দা ময়না মণ্ডল বলেন, ‘‘নিজেদের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ঘর থেকে বের করে নিরাপদ দূরত্বে নিয়ে যাই। সব সময় মনে হচ্ছিল গোটা গ্রাম না পুড়ে ছাই হয়ে যায় এই আগুনে।”
খাতড়া ও বাঁকুড়া থেকে দমকলের তিনটি ইঞ্জিন এনে আগুন নেভানোর চেষ্টা চলল।—নিজস্ব চিত্র
ততক্ষণে খবর পেয়ে হিড়বাঁধ থানার ওসি প্রসেনজিৎ বিশ্বাস ঘটনাস্থলে গিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের নিয়ে আগুন নেভানোর কাজে হাত লাগান। বেলা ১১টা নাগাদ খাতড়া থেকে দমকলের একটি ইঞ্জিন ঘটনাস্থলে পৌঁছয়। পরে ইঁদপুর থানার ওসি রাজীব পাল ও খাতড়া থানার আইসি অশোককুমার মিশ্র বাহিনী নিয়ে গিয়ে আগুন নেভানোর কাজে তদারকি করেন। ইতিমধ্যেই বাঁকুড়া থেকে দমকলের আরও দু’টি ইঞ্জিন এসে পৌঁছয়। তিনটি ইঞ্জিন ও দমকল কর্মীদের নাগাড়ে চেষ্টায় আগুন অনেকটাই নিভে যায়। বন দফতর জানিয়েছে, অগ্নিকাণ্ডের জেরে বিরাডির জঙ্গলের প্রায় এক বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে থাকা শাল, মহুয়া, শিরিষ, ইউক্যালিপটাস, সোনাঝুরি, কেন্দ, পটাশ-সহ হাজার খানেক গাছ ঝলসে গিয়েছে।
বন দফতরের হিড়বাঁধ রেঞ্জ অফিসার শুকদেব মাহাতো বলেন, “গ্রীষ্মকালে জঙ্গলে মাঝে মধ্যেই আগুন লাগে। তবে এ দিন যে আগুন লেগেছিল তার বিস্তৃতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছিল। জঙ্গল লাগোয়া বিরাডি ও বেলাডি গ্রাম ভস্মীভূত হয়ে যেত পারত। খবর পাওয়া মাত্র বনকর্মীরা জঙ্গলে গিয়ে আগুন নেভানোর কাজে নেমে পড়েন। প্রাথমিক ভাবে অনুমান, জঙ্গলে পাতা বা কাঠ কুড়োতে যাওয়া যে কেউ জ্বলন্ত বিড়ি বা ওই জাতীয় কিছু ফেলে দেওয়ার ফলেই প্রথমে পাতায় আগুন লাগে। আগুনে পুড়ে হাজারের বেশি গাছ নষ্ট হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।”
আগুন নেভানোর দায়িত্বে থাকা খাতড়া দমকল কেন্দ্রের টিম লিডার গোপালচন্দ্র বাগদি বলেন, “অনেকখানি এলাকাজুড়ে আগুন লেগেছিল। আগুন পুরোপুরি নিভিয়ে ফেলতে রাত পর্যন্ত কাজ চলছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy