প্রতীকী ছবি।
এক যুবকের মৃত্যুর জেরে নকল স্বর্ণমুদ্রার কারবারের অভিযোগ অনেক দিন বাদে আবার প্রকাশ্যে এল কল্যাণপুর গ্রামে। সস্তায় সোনার মুদ্রা বিক্রির নামে ওই গ্রামে দীর্ঘদিন ধরে কিছু অসাধু লোক প্রতারণার কারবার চালাচ্ছে বলে অভিযোগ। এলাকায় এই জালিয়াতি কারবার রীতিমতো সংগঠিত রূপ নিয়েছে বলে পুলিশ সূত্রেও জানা যাচ্ছে। অনেক নগদ টাকার হাতবদল হয়
এই কারবারে। বীরভূমের পুলিশ সুপার শ্যাম সিংহও শেখ ইনসান নামে কল্যাণপুরের ওই যুবকের খুনের পিছনে নকল সোনার কারবারের ভূমিকা থাকার ইঙ্গিত দিয়েছেন।
পুলিশ সূত্রেই জানা গিয়েছে, দীর্ঘদিন ধরে এই চক্র ওই এলাকায় সক্রিয়। বীরভূম এবং তার বাইরেও অনেককে প্রতারণা করারও অভিযোগ রয়েছে এই জালিয়াত চক্রের বিরুদ্ধে। গ্রামবাসীদের একাংশই দাবি করেছেন, ওই কারবার করে কয়েক বছরে মধ্যে গ্রামের বেশ কিছু পরিবার রাতারাতি ফুলেফেঁপে উঠেছে। বড় বাড়ি তৈরি করেছে, কিনেছে গাড়িও। আবার ওই সব অসাধু ব্যক্তির কবলে পড়ে বহু মানুষ সর্বস্বান্তও হয়েছেন পুলিশ জানিয়েছে। পুলিশ সূত্রের খবর, এই বেআইনি কারবারের টাকার দখলদারি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ওই এলাকায় রয়েছে দুই সমাজবিরোধী গোষ্ঠীর সংঘাত। সেই সংঘাতের মাঝে পড়েই সোমবার সাতসকালে কল্যাণপুর গ্রামের রাস্তায় শেখ ইনসান খুন হন বলে জেলা পুলিশ এবং জেলা তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কল্যাণপুর গ্রামের বেশ কিছু যুবক দিল্লি, মুম্বই, সৌদি আরব-সহ বিভিন্ন জায়গায় কাজ করতে যান। ফেরার পরে তাঁরা সোনার কয়েন নিয়ে ফিরেছেন বলে রটিয়ে দেওয়া হয়। সস্তায় সেই সব কয়েন কেনার জন্য ওই গ্রামে অনেকে ভিড় জমান। মোটা টাকায় সেই কয়েন কিনে বোকা বনতে তাদের। প্রতারণার শিকার হওয়া এক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, নকল সোনার কারবারিরা ভাঁজ করা একটি খবরের কাগজের উপরে সোনার কয়েন ঘষে কিছু গুঁড়ো কাগজে মুড়ে পরখ করার জন্য খদ্দেরে হাতে তুলে দেয়। সোনার দোকানে সেই গুঁড়ো ন্যায্য দামে বিক্রিও হয়ে যায়। স্বাভাবিক ভাবেই খদ্দেরে বিশ্বাস জন্মে যায়। প্রতারিত ওই ব্যক্তির কথায়, ‘‘আমিও বিশ্বাস করেছিলাম। টোপে পা দিয়ে অনেক টাকা দিয়ে অনেকগুলি কয়েন কিনে ফেলি। তার পরে সেগুলো বিক্রি করতে গিয়ে জানি, সব ভুয়ো!’’
চলতি বছরের জানুয়ারিতে এমনই পাঁচ ভুয়ো মুদ্রা কারবারিকে গ্রেফতার করেছিল মল্লারপুর থানার পুলিশ। ধৃতদের কাছ থেকে ৩০০টি নকল কয়েন উদ্ধার হয়। ধৃতদের মধ্যে দু’জন সাঁইথিয়া থানার কল্যাণপুর, দু’জন ওই থানারই বাতাসপুর এবং এক জন অন্য একটি গ্রামের বাসিন্দা। জেলা পুলিশের একটি সূত্র জানাচ্ছে, প্রতারিত হওয়ার পরে নিজেরাও আইনি জটিলতায় জড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় অধিকাংশ ব্যক্তিই পুলিশের কাছে অভিযোগ করতে চান না। এই নিয়ে উচ্চবাচ্যও করেন না। এর পিছনে অবশ্য জাল সোনার কারবারিদের হুমকিও রয়েছে।
পুলিশ সূত্রটির দাবি, ওই কারবারে একাধিক ব্যক্তি জড়িয়ে। প্রতারণার ভাগ বাঁটোয়ারা নিয়ে নিজেদের মধ্যে ঝামেলাও বাধে। ভুয়ো কারবার ঘিরে কল্যাণপুরেও দুই গোষ্ঠীর মধ্যে বিবাদ অনেক দিনের। সেই বিবাদই সোমবার চরম আকার নেয়। সকাল থেকে শুরু হয় বোমাবাজি। চলে গুলিও। সেই লড়াইয়ের মাঝে পড়েই মৃত্যু হয় শেখ ইনসান নামে ওই
তরুণের। যুবকের দেহ উদ্ধার করে সিউড়ি সদর হাসপাতালে নিয়ে যায় সাঁইথিয়া থানার পুলিশ। ময়নাতদন্তের পরে এ দিনই দেহ পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়।
তৃণমূলের সংশ্লিষ্ট ভ্রমরকোল অঞ্চল কমিটির সভাপতি তাহিরুল শেখের দাবি, ‘‘নিহত যুবক নকল সোনার কারবারের সঙ্গে জড়িত ছিল। সেই বিবাদের জেরেই মৃত্যু হয়েছে তার।’’ প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জেনেছে, মৃত যুবকেরও কর্মসূত্রে বাইরে যাওয়াআসা ছিল।
তবে এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন মৃত তরুণের বাবা শেখ সাজেদ আলি ওরফে ধুলু। তাঁর বক্তব্য, ‘‘নকল সোনার মুদ্রার কারবার তো দূর, আমার ছেলে গ্রামের কারও সাতেপাঁচে থাকত না। ওর দিনমজুরির আয়েই আমাদের সংসার চলত। কোন আক্রোশে দুষ্কৃতীরা ওকে খুন করল আমরা বুঝতে পারছি না।’’ মৃত যুবকের মামা শেখ কলিমুদ্দিনের আবার দাবি, ‘‘তাহিরুলের অনুগামীদের
সঙ্গেই এ দিন অন্য গোষ্ঠীর বোমাবাজি চলছিল। সেই সময়েই ভাগ্নের উপরে হামলা হয়।’’
এই খুনের ঘটনায় পুলিশ স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে খুনের মামলা দায়ের করে অভিযুক্তদের খোঁজ চালাচ্ছে। উত্তেজনা থাকায় গ্রামে পুলিশি টহল চলছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy