মহার্ঘ্য: পোল্ট্রি ফার্মে সংগ্রহ করা হচ্ছে ডিম। বিষ্ণুপুরের শিরোমণিপুর গ্রামে। ছবি: শুভ্র মিত্র
দেশি মুরগির ডিমের দাম ছুঁয়েছে পোলট্রি। তার জেরে বিপাকে ভোজনরসিক বাঙালি।
পোলট্রির ডিমের দাম দেখে অনেকেই কিনছেন হাঁস বা দেশি মুরগির ডিম। সে সবের চাহিদা এখন তুঙ্গে। অল্প সময়েই শেষ হয়ে যাচ্ছে বিক্রেতাদের ঝুড়ি। দেশি মুরগির ডিমে অভ্যস্ত অনেক খাদ্যরসিক বাজার ঘুরেও তা-ই খুঁজে পাচ্ছেন না পছন্দের সেই খাবার।
গ্রামীণ এলাকায় এক সময় হাঁস, দেশি মুরগির মুরগির ডিমের চাহিদা ছিল প্রচুর। অনেক পরিবার বাড়িতে হাঁস, মুরগি পালন করত। দুঃস্থ পরিবারের লোকেদের কাছে তা ছিল অন্যতম জীবিকা। হাঁস, দেশি মুরগি বা সেগুলির ডিম বিক্রি করেই সংসারের টাকা জোটাতেন তাঁরা। কিন্তু পোলট্রির ডিম, মাংসে সেই পরিস্থিতি দ্রুত বদলে যায়। তার জেরে কমতে থাকে দেশি মুরগি, হাঁস বা সেগুলির ডিমের চাহিদা। গ্রামাঞ্চলে সে সব পালনের প্রবণতা কমে যায়। কমে যায় সে সবের জোগানও।
সংখ্যায় কম হলেও বাজারে বাজারে এখনও মেলে হাঁস বা দেশি মুরগির ডিম। খাদ্যরসিকদের ভিড়ও জমে সে সব দোকানে। দেশি মুরগির মাংস বা ডিমের স্বাদের সঙ্গে আপস করতে তাঁরা নারাজ। কিন্তু পোলট্রির ডিমের দাম আচমকা বেড়ে যাওয়ায় সে সব লোকেরাও পড়েছেন বিপাকে। চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় সকাল সকালই শেষ হয়ে যাচ্ছে দেশি ডিমের পসরা।
এ কথা মানছেন নানুরের শ্যামলী বাগদী, সাওতার বিলকিস বেগম, ময়ূরেশ্বরের রামকৃষ্ণপুরের সুধা বাগদী, প্রভাতী বায়েনরা। হাঁস-মুরগি পালনই তাঁদের মূল জীবিকা। শ্যামলীদেবীদের বক্তব্য— ‘‘কয়েক দিন আগেও হাটে বা বাড়ি বাড়ি ঘুরে ডিম বিক্রি করতাম। এখন সকাল হতে না হতেই কেউ না কেউ ডিম কিনতে বাড়িতেই হাজির হচ্ছেন।’’ এতে যে বাড়তি রোজগার হচ্ছে, তা-ও জানিয়েছেন ওই মহিলারা।
জেলার বিভিন্ন বাজার থেকে পাওয়া খবর, কয়েক দিন আগে পোলট্রির ডিমের দাম ছিল ৪-সাড়ে ৪ টাকা। তখন হাঁস ও দেশি মুরগির ডিম বিক্রি হতো যথাক্রমে ৫ ও ৬ টাকায়। এখন বাজারে পোলট্রির ডিম বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ৬ টাকা থেকে ৭ টাকায়। হাঁস ও দেশি মুরগির ডিমের দাম হয়েছে ৭ ও ৮ টাকা। কিন্তু দাম কিছুটা বেশি হলেও বাজারে বাজারে খুব তাড়াতাড়ি বিক্রি হয়েছে যাচ্ছে দেশি মুরগির ডিম।
নানুরের মন্টু সূত্রধর, মুজিবর রহমান, ময়ূরেশ্বরের রাশেদ আলি, লাভপুরের ভোলানাথ চক্রবর্তীরা পড়শি-মহলে ভোজনরসিক বলেই পরিচিত। এমন পরিস্থিতিতে তাঁরা পড়েছেন সঙ্কটে। মণ্টুবাবুর কথায়, ‘‘দেশি মুরগির ডিমের স্বাদই না ভুলে যাই। বাজার ঘুরলেও তার দেখা মিলছে না। কখনও কখনও আধখানা ডিমের ঝোলই খেতে হচ্ছে!’’
ময়ূরেশ্বরের চন্দ্রহাটের চিত্তরঞ্জন গড়াই, আমোদপুরের স্কুলশিক্ষক প্রসেনজিৎ মুখোপাধ্যায়ের বক্তব্য, হাঁস আর দেশি মুরগির ডিমের সঙ্গে পোলট্রির ডিমের দামের ফারাক এক ধাক্কায় অনেকটা কমেছে। আগে দামের পার্থক্য ছিল ১ থেকে দেড় টাকা, এখন তা আর নেই। স্বাদ আর বড় আকারের জন্য দেশি মুরগি, হাঁসের ডিমের দিকে ঝুঁকেছেন পোলট্রির ডিমে ‘অভ্যস্ত’ বাঙালিরাও। আচমকা চাহিদা অনেকটা বেড়ে যাওয়াতেই দেশি মুরগি, হাঁসের ডিমের আকাল দেখা দিয়েছে।
ময়ূরেশ্বরের ছামনার প্রমোদ রায়, লাভপুরের দরবারপুরের হাসিবুর রহমান যেমন বলেন, ‘‘পোলট্রির ডিমই খেতাম। কিন্তু এখন যা দাম বেড়েছে তাতে হাঁস, দেশি মুরগির ডিম খাওয়াই ভাল। বড় বড় ডিম অর্ধেক করে খেলেও তো লাভ।’’
বীরভূম জেলা সভাধিপতি বিকাশ রায়চৌধুরী জানান, ‘‘উন্নত প্রজাতির হাঁস, মুরগি পালনে উৎসাহ বাড়াতে গ্রামে গ্রামে ইচ্ছুক ব্যক্তিদের বাড়িতে আলাদা ঘর করে দেওয়া হয়েছে। ধাপে ধাপে সেই সুবিধা আরও বাড়ানো হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy