বাঁকুড়ার রবীন্দ্রভবনে শিল্প সম্মেলন। নিজস্ব চিত্র।
দু’জেলায় ভাল বিনিয়োগের প্রস্তাব আসায় বিপুল কর্মসংস্থান সৃষ্টির সম্ভাবনার কথা জানালেন রাজ্যের মন্ত্রী। যদিও শিল্পদ্যোগীদের কাছ থেকে শুক্রবার বাঁকুড়ার ‘সিনার্জি’ তথা শিল্পসম্মেলন নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়াই মিলেছে।
এ দিন বাঁকুড়ার রবীন্দ্রভবনে বাঁকুড়া ও পুরুলিয়া দুই জেলার উদ্যোগপতিদের নিয়ে সম্মেলন হয়। উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প দফতরের মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ। চন্দ্রনাথের দাবি, “সম্মেলন থেকে দুই জেলার জন্য ক্ষুদ্র-মাঝারি শিল্প ক্ষেত্রে ব্যাপক বিনিয়োগের প্রস্তাব এসেছে। এতে শিল্পমহল যেমন চাঙ্গা হবে, তেমনই প্রচুর কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হতে চলেছে।”
প্রশাসনের দাবি, বাঁকুড়া ও পুরুলিয়া জেলায় সামগ্রিক ভাবে ২,১০০ কোটি টাকা বিনিয়োগের প্রস্তাব এসেছে। সেখান থেকে প্রায় ৪৫ হাজার কর্মসংস্থান হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। হস্তশিল্পের উন্নয়ন ও শিল্পপার্ক গড়ে তুলতে সরকারি ভাবে উদ্যোগের কথাও এ দিন শিল্প সম্মেলন থেকে ঘোষণা করা হয়েছে। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য: পুরুলিয়ার কাশীপুর ব্লকের জামকিরিতে ২১ একর জমিতে একটি শিল্পপার্ক ও বাঁকুড়ার মুড়াকাটায় প্রায় ৫ একর জমিতেএকটি শিল্প পার্ক গড়ে শিল্প আনার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। দু’টিশিল্পপার্কে প্রায় ৩০০ কোটি টাকার বিনিয়োগ আসতে চলেছে বলে প্রশাসনের দাবি।
কাঁসাশিল্প, তাঁত শিল্প, বালুচরি শিল্পের মানোন্নয়নেও নানা প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। পুরুলিয়ার জয়পুর ব্লকের আঘরপুরে ২২ একর জমির উপরে প্রায় ছ’কোটি টাকা ব্যয়ে একটি শিল্পপার্কের পরিকাঠামো গড়ার কাজ প্রায় শেষের মুখে। ওই পার্কটিতে বেশ কিছু ছোট ছোট শিল্প আসতে চলেছে বলে দাবি করা হয়েছে। বাঁকুড়ার কোতুলপুরে ৯৩ লক্ষ টাকা প্রকল্পের একটি হ্যান্ডলুম ক্লাস্টার গড়া হয়েছে। যেখানে৩১০ জন তাঁতি উপকৃত হবেন। বিষ্ণুপুরের বালুচরি শাড়ির নকশার মানোন্নয়নে ‘বালুচরি উইভিং ও প্যাকেজিং’-এর উপর একটি প্রশিক্ষণ করানো হচ্ছে। এতে ওই শাড়ি আরও আকর্ষণীয় হবে বলে দাবি।
পশ্চিমাঞ্চল চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজ়ের সাধারণ সম্পাদক প্রবীর সরকার বলেন, “আমরা অনেক সমস্যাই প্রশ্নোত্তর পর্বে তুলে ধরলাম। তবে বহু ক্ষেত্রেই সুনির্দিষ্ট সমাধান কিছু পেলাম না। গ্রামীণ রাস্তায় শিল্পাঞ্চলের যানবাহন চলাচলে বিধিনিষেধ কিছুটা শিথিল করা, কারখানায় নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকার মতো সমস্যাগুলির বিষয়ে কোনও পথ ‘সিনার্জি’ থেকে বেরিয়ে এল না। শিল্পের পরিকাঠামো উন্নয়নেও আশার কথা কিছু শোনা গেল না।”
বাঁকুড়া চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ়ের সাধারণ সম্পাদক মধুসূদন দরিপার দাবি, ‘‘বৈঠকের আগে ও পরে যে ভাবে শিল্পোদ্যোগীদের সংগঠনের সঙ্গে আলোচনা করে বিভিন্ন সমস্যার কথা রাজ্য প্রশাসনের কর্তারা শুনেছেন তাতে আমরা খুশি। ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যায় পড়ছেন উদ্যোগপতিরা, সেই সমস্যার সমাধানের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।”
পুরুলিয়ার ফেডারেশন অব মিডিয়াম অ্যান্ড স্মল স্কেল ইন্ডাস্ট্রিজ়ের সম্পাদক মনোজ ফোগলা বলেন, ‘‘দমকলের গাড়ি যাতায়াতের জন্য কারখানা, হোটেল, শপিংমল ইত্যাদি শিল্পক্ষেত্রের চারপাশে পর্যাপ্ত জমি ছাড়তে হবে বলে নতুন বিধি তৈরি হয়েছে। কিন্তু অনেক পুরনো কারখানার পাশেই সে মতো জমি ছাড়া নেই। সেই সব কারখানা, হোটেল ইত্যাদির জন্য দমকলের ছাড়পত্র পাওয়া যাচ্ছে না। বিষয়টি সমাধানের জন্য সিনার্জিতে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।’’
হোটেল-লজ অ্যাসোসিয়েশনের তরফে বৈঠকে ছিলেন মোহিত লাটা। তিনি অযোধ্যা পাহাড়ের গুরুত্ব অনুযায়ী দমকল কেন্দ্র ও পৃথক থানার প্রস্তাব দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘পুরুলিয়ার জয়পুরের আঘরপুরের শিল্পপার্কে যেন স্থানীয় শিল্পদ্যোগীদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়।’’
পুরুলিয়ার শিল্পদ্যোগীর আক্ষেপ, দু’জেলার সিনার্জি হলেও পুরুলিয়ার উল্লেখ বিশেষ ছিল না। বাঁকুড়ার শিল্প সম্ভাবনা নিয়ে এ দিন একটি বই প্রকাশিত হলেও পুরুলিয়াকে নিয়ে তেমন উদ্যোগ দেখা যায়নি। ভিডিয়োতে শুধু বাঁকুড়া সম্পর্কেই দেখানো হয়েছে। পুরুলিয়ার তরফে উপস্থিত ছিলেন জেলা পরিষদের কো-মেন্টর জয় বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘দু’জেলার সিনার্জি হলেও সেখানে পুরুলিয়া যেন কিছুটা অবহেলিত থাকল।’’ বাঁকুড়া জেলা প্রশাসনের এক কর্তার দাবি, পুরুলিয়াকে তুলে ধরতে সেই জেলা প্রশাসন যেমন যেমন বলেছিল, তেমনটাই করা হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy