সচেতনতার-বার্তা: প্রচারপত্র ছাপিয়ে সচেতনতার বার্তা। (নীচে) এ ভাবেই গান গেয়ে নানা এলাকা ঘুরে চলছে প্রচার। নিজস্ব চিত্র
ইদানিং কেবলই সংবাদমাধ্যমে শিরোনামে দেখা যাচ্ছিল পাখি শিকার, পাখি উদ্ধারের খবর। পাখি শিকার রুখতে মিছিলেও হেঁটেছেন কেউ কেউ। এ বার গান বাঁধলেন প্রাক্তন বনকর্মী!
তিনি বীরভূমের অবসরপ্রাপ্ত বনকর্মী নিত্যানন্দ মুখোপাধ্যায়। সোমবার তাঁর লেখা কথায় বাউল সুরে অতিথি পাখিদের বাঁচাতে এমন সচেতনতা প্রচারের সাক্ষী থাকল দুবরাজপুরের হেতমপুর, পণ্ডিতপুর, মেটেলা, বাঁধেরশোল, গুণ্ডোবা, মাজুরিয়া, সালুঞ্চি ইলামবাজারের বাতিকার এলাকার মানুষ। চোরা শিকারিদের হাত থেকে বাগেরি বা মাঠ চাড়াইদের বাঁচাতে তিনি লিখছেন, ‘‘সবাই মিলে একসাথে/ প্রতিরোধের বেড়া তুলে/ বাঁচাই মাঠ চড়াই, বাগেরি চড়াই/... শোন শোন কৃষক, শ্রমিক, বুদ্ধিজীবী ভাই।’’
পাখিদের বাঁচাতে শুধু বাউল গানই নয়, মাইকে ও প্রচারপত্র বিলি করে জন সচেতনতার কাজ শুরু করছেন বোলপুরের নিত্যানন্দবাবু। পাশে পেয়েছেন প্রকৃতিপ্রেমী ঊর্মিলা গঙ্গোপাধ্যায়ের মতো মানুষকে। যিনি এ ভাবে পাখি শিকারের বিরুদ্ধে বহুবছর ধরেই সরব।
বনদফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, সেপ্টেম্বরে মাস এলেই সুদূর চিন রাশিয়া থেকে শর্ট টোড লার্ক নামের চড়াই সদৃশ পাখিগুলি দলে দলে উড়ে আসে এ রাজ্যে। স্থানীয় মানুষ এদের মাঠ চড়াই, বগারী, বাগেরি বা ভড়ুই নামেই চেনে। প্রায়শই ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে এই মাঠ থেকে ওই মাঠ করে বেড়ায়। ধূষর রঙের জন্য খেতের সঙ্গে মিশে থাকে। ধান বা গম জমির পোকামাকড় এবং ঘাসের বীজ খেয়ে মাস ছয়েক কাটিয়ে দেয়। প্রখর গ্রীষ্মের আগেই, অর্থাৎ মার্চের শেষ ভাগ থেকে এপ্রিলের প্রথমদিকে এরা উড়ে যায় নিজেদের দেশে। ওই সময়টার জন্য ওতপেতে অপেক্ষায় থাকে চোরা শিকারিরা। নদীয়া ও মুর্শিদাবাদ থেকে আসা চোরা শিকারির দল ফাঁকা মাঠে জাল বিছিয়ে অপেক্ষায় থাকে। খাবারের খোঁজে মাটিতে বসলেই জালে আটকে যায় পাখিগুলি। গত কয়েক বছর ধরে এভাবেই চলছে পাখি শিকার ও পাচার। প্রতিটি ছোট ছোট পাখি ২০ টাকা দরে বিক্রির ভাল বাজার পড়শি জেলায় থাকায় এই কারবার জমে উঠেছে। তদন্তে দেখা গিয়েছে, বীরভূম থেকে মুর্শিদাবাদে পাখি পাচারের একটি চক্র কাজ করছে। কিছু চোরা শিকারি ধরা পড়েছে। উদ্ধার হয়েছে পাখি। কিন্তু পাখি শিকারিরা নতুন নতুন এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছে।
বনদফতর পুলিশ সতর্ক থাকলেও নিয়মিত গত কয়েক দিনে এমন বেশ কয়েকটি ঘটনা সামনে এসেছে। কিন্তু বনদফতর ও পুলিশ থাকতে কেন নিত্যানন্দবাবুরা এগিয়ে এলেন?
নিত্যানন্দবাবু বলছেন, ‘‘বনদফতরেরে কাজের অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি যতদিন সাধারণ মানুষ ও গ্রামবাসীদের মধ্যে এই নিয়ে সচেতনতা না বাড়ানো যাবে এভাবে চোরাশিকারিরা পাখি শিকার করবেই।’’ এই ভাবনা নিয়েই ঊর্মিলাদেবীর কাছে গিয়েছিলেন নিত্যানন্দ। প্রচার চালানোর ভাবনার কথা জানিয়েছিলেন ঊর্মিলাদেবীকে।
ঊর্মিলাদেবী বলেন, ‘‘প্রতিবছর এভাবে পাখিদের হত্যালীলা দেখতে খুব কষ্ট হত। এমন একটা সাধু উদ্যোগের কথা শোনা মাত্র ভাবনাটা একটা প্রজেক্ট আকারে ওয়াইল্ডলাইফ ট্রার্স্ট অফ ইন্ডিয়াকে জানাই। ১৯ হাজার টাকার অর্থ সাহায্য মেলে। চলতি মাসের গোড়া থেকে সেই টাকায় গাড়ি ভাড়া করে মাইক বেঁধে এবং লিফলেট ছাপিয়ে প্রচারে নেমে পড়েছেন নিত্যানন্দ। ওঁর সঙ্গী একজন বাউল বাবলু দাস ও সহকারি রণজিত দাস এবং সঙ্গে আরও কয়েকজন।’’ বোলপুরের বেসরকারি স্কুলের দ্বাদশ শ্রেণির এক ছাত্রী ঋতি সরকার পোস্টার এঁকে দিয়েছে। তাই নিয়েই গ্রামে গ্রামে চলছে প্রচার। ময়ূরেশ্বরে তেঁতুলগ্রামে ও হাজিগ্রামে চোরাশিকারি ধরা পড়ার পেছেনে রয়েছে এই প্রচার।
এডিএফও বিজনকুমার নাথ বলেন, ‘‘উদ্যোগ অবশ্যই সাধুবাদযোগ্য। আমরাও সহযোগিতা করছি। ভাল সাড়াও মিলছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy