বৃষ্টি থামতেই দুয়ারে সরকারের শিবিরে লাইনে ভিড় জমল। পুরুলিয়ার বোরোর আকরোতে। ছবি: রথীন্দ্রনাথ মাহাতো।
রেশন সামগ্রী নিতে কেবল রেশন কার্ড থাকাই আবশ্যক নয়। ‘বায়োমেট্রিক অথেন্টিকেশন’ পদ্ধতি মেনে রেশন কার্ডের সঙ্গে গ্রাহকদের আধার বা মোবাইল নম্বরের সংযোগ বাধ্যতামূলক হতে চলেছে—এ তথ্য তুলে ধরে ‘দুয়ারে রেশন’ প্রকল্প চালু হলে কী ভাবে সমস্ত গ্রাহককে রেশন দেওয়া সম্ভব হবে, সে প্রশ্ন তুলেছে রেশন ডিলারদের বিভিন্ন সংগঠনগুলি। পাশাপাশি, নিয়মের ফাঁসে কোনও গ্রাহক রেশন না পেলে বিরূপ পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে বলেও সংগঠনগুলির আশঙ্কা। যদিও খাদ্যমন্ত্রী রথীন ঘোষের বক্তব্য, ‘‘বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে রেশনের মালপত্র দেওয়া হয়। তা না থাকলে, তবে মোবাইল ফোনে ‘ওটিপি’ আসার প্রশ্ন আসছে।’’
জেলা খাদ্য দফতর সূত্রে জানা যায়, রেশন কার্ডের সঙ্গে গ্রাহকদের আধার কার্ডের সংযোগের কাজ শুরু হয়েছে কম-বেশি দেড় বছর আগে। মোবাইল নম্বর সংযুক্তিকরণের কাজও চলছে।
জেলা খাদ্য দফতরের এক পদস্থ কর্তার কথায়, ‘‘বায়োমেট্রিক অথেন্টিকেশন পদ্ধতি অনুযায়ী, রেশন নিতে এলে গ্রাহকের হাতের ছাপ, যন্ত্রে সংরক্ষিত আধার কার্ড তৈরির সময়ে নেওয়া ছাপের সঙ্গে মিলিয়ে নেওয়া হবে। কোনও এক জনের হাতের ছাপ মিললে সংশ্লিষ্ট পরিবারের সদস্যদের রেশন তিনি তুলতে পারবেন। আধার কার্ড সংযোগ করা না থাকলে মোবাইল নম্বর ব্যবহার করা হবে। সে ক্ষেত্রে রেশন কার্ডের নম্বর যন্ত্রে টাইপ করলে গ্রাহকের মোবাইলে একটি ‘ওটিপি’ আসবে। গ্রাহক রেশন দোকানদারকে ওটিপি জানানোর পরেই রেশন তুলতে পারবেন।’’
পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন তুলে ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল এমআর ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর পুরুলিয়া জেলা শাখার সম্পাদক প্রভাশিসলাল সিংহ দেও বলেন, ‘‘যে সব গ্রাহকের পরিবারের কারও মোবাইল নেই, তাঁরা কী ভাবে ওটিপি পাবেন? তা হলে রেশন সামগ্রী পেতে কি গ্রাহকের মোবাইল থাকতেই হবে?’’
তাঁর সংযোজন, ‘‘একেবারে তৃণমূল স্তরে কাজ করার সুবাদে আমরা জানি, গ্রাহকদের একাংশের মোবাইল নেই। তা ছাড়া, রেশন কার্ডের সঙ্গে আধার সংযুক্তির কাজ এখনও শেষ হয়নি। বায়োমেট্রিক অথেন্টিকেশন পদ্ধতিতে রেশন বিলি শুরু হলে তাঁরা কী ভাবে রেশন পাবেন, সে প্রশ্ন আমরা জেলা প্রশাসনিক বৈঠকে তুলেছি। বিধির ফাঁসে গ্রাহকেরা বঞ্চিত হলে আইন-শৃঙ্খলাজনিত সমস্যাও দেখা দিতে পারে।’’
‘বেঙ্গল ফেয়ার প্রাইস শপ ডিলার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন’-এর জেলা সম্পাদক নিরঞ্জন মাহাতোও বলেন, ‘‘সাধারণ শ্রমজীবী মানুষজনের অনেকেই এখনও রেশনের সঙ্গে আধারের সংযুক্তিকরণ করে উঠতে পারেননি। তাঁদের অনেকের মোবাইলও নেই। ‘দুয়ারে রেশন’ কর্মসূচিতে এ ধরনের গ্রাহকদের রেশন দিতে গিয়ে সমস্যায় পড়তে হবে।’’
জেলা খাদ্য দফতর সূত্রে খবর, জেলায় কম-বেশি ৩৫ লক্ষ রেশন গ্রাহক রয়েছে। এখনও পর্যন্ত ৫৭ শতাংশ গ্রাহকের রেশন কার্ডের সঙ্গে আধারের সংযুক্তিকরণের কাজ হয়েছে। তবে কত শতাংশ গ্রাহকের কার্ডে মোবাইল নম্বরের সংযুক্তিকরণ হয়েছে, সে তথ্য মেলেনি।
জেলা খাদ্য নিয়ামক শুভ্রজিৎ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বায়োমেট্রিক অথেন্টিকেশন পদ্ধতি অনুযায়ী, গ্রাহক মাল তুলতে এলে আগে আধার সংযুক্তিকরণ রয়েছে কি না, তা দেখা হবে। না থাকলে, মোবাইল নম্বরের ‘ওটিপি’ ব্যবহার করে মাল দেওয়া হবে। তবে এখন এ নিয়ে কোনও কড়াকড়ি করা হচ্ছে না। দু’টি শর্ত পূরণ না হলেও মাল দেওয়া হচ্ছে। নভেম্বর পর্যন্ত এ ভাবেই মাল দেওয়া হবে। তার মধ্যে গ্রাহকদের প্রয়োজনীয় কাজ সেরে ফেলতে হবে।’’
দেড় বছরেরও বেশি সময়ে যেখানে ৫৭ শতাংশ গ্রাহকের আধার সংযুক্তিকরণ হয়েছে, সেখানে আগামী আড়াই মাসে বাকি কাজ কী করে করা সম্ভব? জেলা খাদ্য নিয়ামক বলেন, ‘‘আপাতত নির্দেশ রয়েছে, নভেম্বর পর্যন্ত রেশনপণ্য তোলার ক্ষেত্রে দু’টি শর্তের কোনওটি বাধ্যতামূলক নয়। তার পরে, যেমন নির্দেশ আসবে, সে অনুযায়ী পদক্ষেপ করা হবে।’’
এ দিকে, কংগ্রেসের জেলা সভাপতি নেপাল মাহাতোর বক্তব্য, ‘‘অনেকের মোবাইল নেই। তা ছাড়া, অনেকের মোবাইল থাকলেও ‘ওটিপি’ নিয়ে সকলে স্বচ্ছন্দ নন। রেশন বণ্টনে স্বচ্ছতা থাকা দরকার। তবে গ্রামের প্রান্তিক মানুষ যাতে রেশন তুলতে গিয়ে যান্ত্রিক কারণে হয়রান না হন, তা নিশ্চিত করা উচিত।’’
জেলা পরিষদের খাদ্য কর্মাধ্যক্ষ তৃণমূলের মনোজ সাহাবাবু বলেন, ‘‘সমস্যার কথা গণবণ্টন দফতরের প্রতিমন্ত্রী জ্যোৎস্না মান্ডিকে জানানো হয়েছে। তিনি বিষয়টি রাজ্য স্তরে জানাবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন। আমাদের বিশ্বাস, যাতে কারও রেশন পেতে অসুবিধা না হয়, তা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দেখবেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy