জয়পুর রেঞ্জের আধকাটা বিটের বালিগুমা গ্রামে বুধবার শুভ্র মিত্রের তোলা ছবি।
রুক্ষ অঞ্চলে সেচের সমস্যা মেটাতে শুরু হয়েছে ‘জলতীর্থ’ প্রকল্প। কিন্তু সেই উদ্যোগ গত বর্ষায় পুরুলিয়ার বিভিন্ন এলাকায় গোড়াতেই মুখ থুবড়ে পড়েছিল। জলের তোড়ে ভেসে গিয়েছিল সদ্য তৈরি হওয়া বেশ কয়েকটি চেক়ড্যাম। স্থানীয় বাসিন্দারা সেই সময়ে নিম্ন মানের সামগ্রী দিয়ে নির্মাণ কাজ হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছিলেন। বাঁকুড়ার জয়পুর রেঞ্জে জলতীর্থ প্রকল্পে নির্মীয়মাণ একটি বাঁধেও সেই রকমের একটি বিতর্কের বীজ মাথা চাড়া দিয়ে উঠল।
জয়পুর রেঞ্জের আধকাটা বিটের বালিগুমা গ্রামে পুরনো সাঁওতাল বাঁধ জলতীর্থ প্রকল্পে বড় করে খনন করা হচ্ছে। বনদফতর ওই কাজ শুরু করেছিল ২০১৬-র ডিসেম্বরে। চলতি মাসের গোড়ায় সেখানে পরিদর্শনে যান ডিএফও (বিষ্ণুপুর-পাঞ্চেত) নীলরতন পাণ্ডা। যে সমস্ত ইমারতি দ্রব্য ব্যবহার করা হচ্ছে তার মান সন্তোষজনক না হওয়ায় কাজ বন্ধের নির্দেশ দেন তিনি। অভিযোগ, তার পরেও কাজ চলছে আগের তালেই।
গরমে নদী নালা খাল-বিল শুকিয়ে যায়। সমস্যায় পড়েন চাষিরা। গবাদি পশুর খাবার জলও জোগাড় করা দুস্কর হয়ে পড়ে। সেই সমস্যার সমাধানে বনদফতর জলতীর্থ প্রকল্পে বড় জলাশয় খননে উদ্যোগী হয়েছে। বিষ্ণুপুর-পাঞ্চেত ডিভিশনের পাঁচটি জায়গায় চলছে এই কাজ— বিষ্ণুপুর রেঞ্জের হেঁড়া পর্বত বিট, জামডহরা গ্রাম, ওন্দা রেঞ্জের কৃষ্ণনগর গ্রাম,তালড্যাংরা রেঞ্জের চকশ্যামপুর গ্রাম এবং জয়পুর রেঞ্জের বালিগুমা গ্রাম। ওই সমস্ত এলাকায় বর্ষাকালে জঙ্গল দিয়ে বয়ে যাওয়া জল ধরে রেখে সেচের কাজে লাগানো হবে।
বনদফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, বালিগুমা গ্রামে ২০০ মিটার লম্বা, ৮০ মিটার চওড়া এবং ১৫ ফুট গভীর জলাশয় খনন করা হচ্ছে। ওই গ্রামের আফসার মণ্ডল, ইসমাইল খান, সিদাম কিস্কু, রবিন মান্ডিদের মতে, জলাশয় তৈরি হলে ওই গ্রাম ছাড়াও পাশের আঙারিয়া, কাশিচটা, জবা, শ্যামপুর, জিয়াবান্দি গ্রামের প্রায় হাজার পাঁচেক চাষি উপকৃত হবেন। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে প্রকল্পের ভবিষ্যত নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা। তাঁদের কথায়, ‘‘বাঁধের জলে চাষ আবাদ করতে পারব, গবাদি পশুগুলোও জল পেয়ে বাঁচবে। কিন্তু কাজটা ঠিকঠাক হলে তো! আমরা এই ব্যাপারটা নিয়ে ডিএফও-কে লিখিত অভিযোগ জানাব।’’
ডিএফও (বিষ্ণুপুর-পাঞ্চেত) নীলরতন পাণ্ডা জানান, ওই জলাশয় খননের জন্য বরাদ্দ হয়েছে ১ কোটি ৭৬ লক্ষ টাকা। বরাত দেওয়া হয়েছে ই-টেন্ডারের মাধ্যমে। তিনি বলেন, ‘‘কিছু দিন আগে আমি প্রকল্প পরিদর্শনে যায় দেখি গঠনগত ভুল রয়েছে। নির্মাণে ব্যবহৃত জিনিসের মানও প্রশ্নের উর্ধ্বে নয়। কাজ বন্ধ করার নির্দেশ দিয়ে এসেছিলাম।’’ তিনি জানান, ওই কাজ পরিদর্শনের জন্য দুর্গাপুর এনআইটি থেকে তিন সদস্যর কোয়ালিটি কন্ট্রোলিং টিম আসার কথা। তাঁরা দেখেশুনে যে নির্দেশ দেবেন সেই মতো কাজ হবে। তার আগে কাজ চালিয়ে যাওয়া হলে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে দাবি করেছেন ডিএফও।
বাঁকুড়া জেলা পরিষদে ওই অঞ্চলের সদস্য উজ্বল প্রতিহারও বলেন, ‘‘আমাদের এই অঞ্চল খরাপ্রবণ। সাধারণ মানুষের কথা ভেবে মুখ্যমন্ত্রী জলতীর্থ প্রকল্পে বনদফতরের মাধ্যমে জলাশয় খনন করার ব্যবস্থা করেছেন। কিন্তু কিছু অসাধু ব্যক্তির গাফিলতিতে প্রকল্পটির ভবিষ্যত নিয়ে সংশয় তৈরি হচ্ছে। প্রশাসনের উপর মহলে ঠিক ভাবে প্রকল্প রূপায়নের জন্য কথা বলব।’’
তবে ওই কাজের বরাতপ্রাপ্ত ঠিকাদার অশোককুমার ঘোষাল দাবি করেছেন, কাজ বন্ধের জন্য তিনি কোনও নির্দেশই পাননি। তাঁর কথায়, ‘‘বিট অফিসার এবং বন দফতরের ইঞ্জিনিয়ারই তো দাঁড়িয়ে থেকে কাজ করাচ্ছেন।’’ আটকাটা বিট অফিসার সুভাষ মিদ্যাকে এই ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘‘আমি কোনও মন্তব্য করব না। শুধু বলতে পারি, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এখনও আমাকে কাজ বন্ধ করতে কোনও নির্দেশ দেয়নি।’’
বালিগুমার তাপস সোরেন, লক্ষ্মী সোরেন, বংশী সাউ, কুরবান মণ্ডলরা অবশ্য কোনও দড়ি টানাটানিতে উৎসাহী নন। তাঁদের আশঙ্কা, নির্মাণের ত্রুটিতে সেচের সুবিধার বদলে বানভাসি না হয় পুরো গ্রাম।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy