Advertisement
০৬ নভেম্বর ২০২৪
বাসস্ট্যান্ড-কথা

গোবিন্দনগর দুয়োরানি কেন, প্রশ্ন

কোথাও যাত্রী প্রতীক্ষালয়ে বসে গিয়েছে দোকান। কোথাও জল-কাদা মাড়িয়েই উঠতে হয় বাসে। কী অবস্থায় দুই জেলার প্রধান বাসস্ট্যান্ডগুলো? খোঁজ নিল আনন্দবাজার কোথাও যাত্রী প্রতীক্ষালয়ে বসে গিয়েছে দোকান। কোথাও জল-কাদা মাড়িয়েই উঠতে হয় বাসে। কী অবস্থায় দুই জেলার প্রধান বাসস্ট্যান্ডগুলো? খোঁজ নিল আনন্দবাজার

প্রতীক্ষালয় থাকলেও সেখানেই বসে গিয়েছে দোকান। যাত্রীদের প্রশ্ন, তাঁদের কথা কে আর ভাবে! ছবি: অভিজিৎ সিংহ

প্রতীক্ষালয় থাকলেও সেখানেই বসে গিয়েছে দোকান। যাত্রীদের প্রশ্ন, তাঁদের কথা কে আর ভাবে! ছবি: অভিজিৎ সিংহ

রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়
বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ২৩ জুন ২০১৮ ০১:২২
Share: Save:

ঝকঝকে রাস্তা, উন্নত ট্র্যাফিক ব্যবস্থা থেকে রাস্তার মোড়ে মোড়ে বসেছে সিসিক্যামেরা। এ ভাবেই বদলে যাচ্ছে বাঁকুড়া শহরের পথের ছবি। কিন্তু, জেলা সদরের গোবিন্দনগর বাসস্ট্যান্ডের সেই জীর্ণ দশার ছবিটা একই রয়ে গিয়েছে। না যাত্রী পরিষেবার উন্নতি হয়েছে, না বাসকর্মীদের দুরবস্থা কেটেছে।

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ধাপে ধাপে বদলে যাচ্ছে বাঁকুড়া শহরের ছবিটা। ফ্লাইওভার থেকে ফুটপাথ— পেয়েছে এই শহর। গ্রিনসিটি প্রকল্পে সেজে উঠছে শহরের পার্ক, জনবহুল এলাকা। অথচ, গোবিন্দনগর বাসস্ট্যান্ডকে কেন দুয়োরানি করে রাখা হয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বিভিন্ন মহলে।

বাসস্ট্যান্ডের একাংশে ঢালাই হয়েছে। কিন্তু, অন্য অংশ এখনও খানাখন্দে ভরে রয়েছে। সামান্য বৃষ্টি হলেই জল-কাদায় ভরে যায়। সেই জল মাড়িয়েই বাসে ওঠানামা করতে হয় যাত্রীদের। যাত্রী প্রতীক্ষালয় থাকলেও, তা যে কোনও সময় ভেঙে পড়ার ভয় করছেন যাত্রীরা। দীর্ঘদিন ধরেই ছাদের চাঙড় খসে পড়ছে। সাফাইয়ের বালাইও নেই। কিন্তু, সেখানেও স্বস্তিতে বসার উপায় নেই যাত্রীদের। কারণ, প্রতীক্ষালয়ের অনেকখানি জায়গা বেদখল করে নিয়ে হকাররা জামাকাপড়, ব্যাগ, খেলনা, সাজগোজের হরেক জিনিসের পসরা সাজিয়ে বসে পড়েছেন।

দুরবস্থা: জল আছে, কিন্তু কল নেই।

শৌচাগার মোটে একটিই নজরে এসেছে। কিন্তু, তা ব্যবহারের যোগ্য নয় বলেই অভিযোগ বাসের এজেন্ট সেখ সিকান্দর, সেখ ইমতাজদের। তাঁদের দাবি, ‘‘এত বড় বাসস্ট্যান্ডে মাত্র একটি শৌচাগার, চাহিদার তুলনায় কিছুই নয়। ঠিক মতো পরিষ্কার করাও হয় না।’’ বাসকর্মীরা জানাচ্ছেন, শৌচাগার থেকে মল-মূত্র সহ নোংরা জল অনেক সময় বাইরে বেরিয়ে আসে। দুর্গন্ধও ছড়ায়। মাঝে মধ্যে নালা বুজে যায়।

পানীয় জলের ব্যবস্থা বাঁকুড়া পুরসভা থেকে করা হলেও, তা নিয়েও অভিযোগের শেষ নেই। গিয়ে দেখা গিয়েছে, চারটি ট্যাপকল থাকলেও, তিনটির মুখ বন্ধ। মোটে একটি থেকে ঝির ঝির করে জল পড়ছে। যাত্রীদের অভিযোগ, বাসস্ট্যান্ডের চারপাশে দোকানপত্র গিজগিজ করছে। কিন্তু, পরিচ্ছন্নতার বালাই চোখে পড়ে না।

এই বাসস্ট্যান্ডের মালিকানা বাঁকুড়া পুরসভার। বাসস্ট্যান্ডে এই হাল কেন?

বাঁকুড়ার পুরপ্রধান মহাপ্রসাদ সেনগুপ্ত অবশ্য বাসস্ট্যান্ডে পরিষেবা সংক্রান্ত কোনও সমস্যা রয়েছে বলে মানতে নারাজ। তাঁর পাল্টা প্রশ্ন, ‘‘কোথায় সমস্যা? বাসস্ট্যান্ডে যাত্রী প্রতীক্ষালয় থেকে শৌচালয়— সবই রয়েছে। তারপরেও সমস্যা উঠে আসছে কোথা থেকে, সেটাই বোঝা যাচ্ছে না!” বাঁকুড়ার বিধায়ক তথা এই শহরের প্রাক্তন পুরপ্রধান শম্পা দরিপাও সরাসরি সমস্যা রয়েছে বলে মানতে না চাইলেও বাসস্ট্যান্ডে গত কয়েক বছরে আরও কিছু উন্নয়নমূলক কাজ হওয়া দরকার ছিল বলে মনে করছেন। তাঁর মাপা উত্তর, “গত কয়েক বছরে আরও কিছু কাজ করা উচিত ছিল বাসস্ট্যান্ডে।”

পুরপ্রধান দাবি করেছেন, ‘‘আমরা গোবিন্দনগর বাসস্ট্যান্ড নতুন ভাবে সাজিয়ে তুলতে পরিবহণ দফতরের কাছে প্রস্তাব পাঠিয়েছিলাম। তার মধ্যে প্রায় চার কোটি টাকা মঞ্জুর করা হয়েছে। গত বছরে তা থেকে ১ কোটি ৪০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ হয়। প্রথম দফার ওই বরাদ্দের মধ্যে ৭০ লক্ষ টাকা পাঠানো হয়েছিল। সেই টাকায় উন্নয়নমূলক কাজও করা হয়। এ বার দ্বিতীয় দফার ৭০ লক্ষ টাকা আসতে চলেছে।

কী কাজ করা হয়েছে প্রথম দফার টাকায়?

পুরপ্রধানের দাবি, “বাসস্ট্যান্ডে দু’টি হাইমাস্ট বসিয়েছি। বিষ্ণুপুর ও খাতড়া রুটের বাস যেখানে থাকে, সেই জায়গাটি ঢালাই করে দেওয়া হয়েছে। পানীয় জলের ব্যবস্থাও করা হয়েছে বাসস্ট্যান্ডে।” যদিও যাত্রী সাধারণ ও গোবিন্দনগর এলাকায় যাঁরা নিয়মিত যাতায়াত করেন, তাঁরা দাবি করেছেন, মাঝে মধ্যেই হাইমাস্ট জ্বলে না। পুরসভা নতুন করে কোথায় জলের ব্যবস্থা করেছেন তাঁরা জানেন না।

বাঁকুড়া বাস মালিক সমিতির সম্পাদক অঞ্জন মিত্র বলেন, ‘‘দৈনিক ৪০০ বাস এখান থেকে ছাড়ে। কয়েক হাজার বাসকর্মী রয়েছেন। কিন্তু, তাঁদের বিশ্রামের জায়গা নেই। বাস ধোয়ারও আলাদা জায়গা নেই।’’ বাসকর্মীদের আক্ষেপ, আশপাশের জেলার বাসস্ট্যান্ড আধুনিক মানে হয়ে উঠলেও গোবিন্দনগর সেই উপেক্ষিতই রয়ে গিয়েছে। আইএনটিটিইউসি প্রভাবিত বাসকর্মী সংগঠনের সভাপতি অলকা সেন মজুমদার বলেন, ‘‘বাসস্ট্যান্ডের সমস্যা নিয়ে পুরপ্রধানকে জানিয়েছি। তিনি আশ্বাস দিয়েছেন।’’

বাঁকুড়া পুরসভার বিরোধী দলনেতা স্বরূপ সেনের দাবি, ‘‘বাসস্ট্যান্ড চত্বরের দোকানগুলি থেকে ভাড়াবাবদ পুরসভা বছরে কয়েক লক্ষ টাকা আদায় করলেও উন্নয়নে সদিচ্ছা নেই।’’ তাঁর মতে, জীর্ণ বাসস্ট্যান্ডটি লোক দেখানো সংস্কার করে পুরসভা চার কোটি টাকা জলে ঢালতে চলেছে। তাতে তাপ্পিমারা উন্নয়ন হবে। বাসস্ট্যান্ডটির সামগ্রিক উন্নয়নের প্রয়োজন।’’

বিষ্ণুপুরে বাসস্ট্যান্ড সে ভাবেই তৈরি হচ্ছে। বাঁকুড়া কি পারবে— প্রশ্ন ভুক্তভোগী যাত্রীদের।

(চলবে)

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE