প্রতীকী ছবি
অর্থবর্ষ শেষ হওয়ার আগে পিছিয়ে থাকা পঞ্চায়েতগুলি যাতে সরকারি অর্থ খরচ করতে পারে সেজন্য মার্চের মাঝামাঝি মরিয়া চেষ্টা করেছিল জেলা প্রশাসন। তবে তার পরই করোনা সংক্রমণ রাজ্যে ছড়িয়ে পড়ায় শেষরক্ষা হল না।
জেলা প্রশাসন সূত্রেই খবর, ১০০ দিনের কাজে নতুন করে কর্মদিবস সৃষ্টি বা চতুর্দশ অর্থ কমিশনের টাকা খরচ করার নিরিখে মার্চের মাঝামাঝি বেশ কিছু গ্রাম পঞ্চায়েতের অবস্থা বেশ খারাপ ছিল। সমস্যা বেশি ছিল চতূর্দশ অর্থ কমিশনের টাকা খরচ করতে না পারা নিয়ে। কোনও পঞ্চায়েতের ৫ কোটি, তো কোনও পঞ্চায়েত দেড় কোটির কাছাকাছি খরচ করতে পারে নি। জেলার ১৬৭টি গ্রাম পঞ্চায়েতের একটা বড় অংশে জমে ছিল ৮০ থেকে ৯০ লক্ষ টাকা।
অর্থবর্ষ শেষ হওয়ার আগে সেই অবস্থা থেকে টেনে তোলার একটা চেষ্টা করে জেলা প্রশাসন ও জেলা পরিষদ। গত ১৬ মার্চ সিউড়িতে শীর্ষস্তরের প্রশাসনিক বৈঠক আয়োজিত হয় সিউড়ি রবীন্দ্র সদনে। জেলা প্রশাসনের শীর্ষ কর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন প্রতিটি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান, নির্মাণ সহায়ক, সচিব জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতিরা। সেখানেই পিছিয়ে পড়া পঞ্চায়েতের প্রধান ও নির্মাণ সহায়কদের প্রশাসনের শীর্ষকর্তাদের তোপের মুখে পড়তে হয়।
কেন সরকারি অর্থ খরচে ব্যর্থ হয়েছে, কেন গ্রাম পঞ্চায়েতের ব্যর্থতার জন্য সাধারণ মানুষ উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত হবেন এই প্রশ্নগুলির উত্তর তলব করার পাশাপাশি কী ভাবে মার্চের ৩১ তারিখের মধ্যে পরিকল্পনা করে দরপত্র হেঁকে কাজ শেষ করে বিল পেমেন্ট করবে পঞ্চায়েতগুলি তা পঞ্চায়েত ধরে আলোচনা করেন জেলাশাসক। বৈঠকে তিনি হুঁশিয়ারি দেন, যত দ্রত সম্ভব কাজের মান বজায় রেখে পড়ে থাকা
টাকা খরচ করতে হবে। না করতে পারলে এপ্রিলের ১ তারিখ থেকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে। এসআরডিএ-র চেয়ারম্যান অনুব্রত মণ্ডল কাজ না করলে পঞ্চায়েত কর্মীদের ৭০-৮০ কিমি দূরে বদলি করে দেওয়ার হুঁশিয়ারিও দিয়েছিলেন। কিন্তু করোনা হানায় দ্রুত পরিস্থিতি আমূল বদলে যাওয়ায় পিছিয়ে থাকা গ্রাম পঞ্চায়েতগুলি নিজেদের অবস্থা শুধরে নেওয়ার সুযোগ পায়নি।
জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, মূলত চতুর্দশ অর্থ কমিশন এবং আইএসজিপি— এই দু’টি প্রকল্প থেকে প্রাপ্ত অর্থ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার উন্নয়নমূলক কাজে খরচ করা করা হয়ে থাকে। তার জন্য গ্রাম পঞ্চায়েতে উন্নয়ন পরিকল্পনা তৈরি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজ। এর সঙ্গে যুক্ত না থাকলেও ১০০ দিনের কাজের সঠিক পরিকল্পনা প্রয়োজন। কিন্তু বেশ কিছু গ্রাম পঞ্চায়েত সময়ে কাজ শেষ করতে না পারায় আদতে ক্ষতিগ্রস্ত হলেন এলাকার মানুষই।
জেলা প্রশাসনের এক কর্তা বলছেন, ১৬ তারিখে বৈঠকের পর ১৮ তারিখে ফের পিছিয়ে পড়া পঞ্চায়েতগুলির সঙ্গে বসতে চেয়েছিলেন জেলাশাসক। কিন্তু সেদিনই রাজ্যে প্রথম করোনা আক্রান্তের খোঁজ নেলে। কীভাবে করোনা মোকাবিলা করা যায় সেটাই তখন প্রাথমিক লক্ষ্য হয়ে দাঁড়ায় জেলা প্রশাসনের কাছে। ২২ তারিখে রাজ্যে লকডাউন ঘোষণার পর আর বিষয়টি নিয়ে এগোনোর উপায় ছিল না।
গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান ও নির্মাণ সহায়ক এবং সচিবদের একটা অংশ বলছেন, ‘‘এই পরিস্থিতিতে নতুন করে পরিকল্পনা করা দরপত্র ডাকা কাজ এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সুযোগ ছিলনা। এমনকি টাকা মেটানোও সম্ভব হয়নি অনেক ক্ষেত্রে।
একই ভাবে ১০০ দিনের কাজের নতুন করে কর্মদিবস সৃষ্টি করার চেষ্টাও ব্যর্থ হয়। কারণ যে সিকিউর সফ্টওয়্যারের মাধ্যমে পরিকল্পনা নেওয়া হয় ২২ তারিখ থেকে পোর্টাল ঠিকমতো কাজ না করায় সেটাও এগোয়নি।’’
সময়ে উন্নয়নের কাজ করতে না পারা ও কাঙ্খিত কর্মদিবস সৃষ্টির লক্ষ্য পূরণ করা না গেলেও লকডাউন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে বকেয়া কাজ শেষ করা যাবে বলে আশ্বাস দিচ্ছেন এক আমলা।
তাঁর কথায়, ‘‘কেন্দ্রীয় প্রকল্পে বরাদ্দ টাকা সেই অর্থবর্ষে খরচ করতে না পারলেও সেটা পরের অর্থবর্ষে বদলি করা যায়। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেই কাজ শুরু হবে। তবে চতুর্দশ অর্থ কমিশনে পঞ্চায়েত কেমন কাজ করেছে সেই অনুয়ায়ী অতিরিক্ত একটি অনুদান পাওয়া যায়। তা পেতে বরাদ্দ টাকার ৬০ শতাংশ খরচ করার পাশাপাশি আরও বেশ কিছু মানদণ্ড থাকে। যে সব পঞ্চায়েত বরাদ্দ টাকার ৬০ শতাংশ খরচ করতে পারে নি সেগুলি ওই টাকা পাওয়া থেকে বঞ্চিত হতে পারে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy